ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় কাজী আনোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ২০:২০, ২২ জানুয়ারি ২০২২

বিদায় কাজী আনোয়ার হোসেন

পাঠক নন্দিত কৈশোরের অনুভবে নান্দনিক সত্তা নির্মাণের প্রাণপুরুষ কাজী আনোয়ার হোসেন চলে গেলেন। চির বিদায় তো নয়ই, বরং পাঠকের হৃদয় নিঃসৃত অর্ঘ্যে অভিষিক্ত হওয়া এই অনন্য শৈল্পিক ব্যক্তিত্ব অন্য জগতের বাসিন্দা হলেন। কাজী আনোয়ার হোসেন যাকে পারিবারিকভাবে ডাকা হতো ‘নবাব’। আপন সৃজন আলোয় যে যুগোত্তীর্ণ সম্ভারের অধিশ্বর, যিনি আজও উদীয়মান প্রজন্মের স্বপ্নেরও নায়ক। জীবনের পড়ন্ত বেলায়ও যাকে কৈশোরের উন্মাদনায় অস্থির করে তুলত। বলেছেন- কিশোর বয়সকে কখনও অতিক্রমও করতে চাননি। সৃজন দ্যোতনায় সেই স্বপ্নের মাহেন্দ্রক্ষণকে যে মাত্রায় উজ্জীবিত করেছেন ‘কুয়াশা’, ‘মাসুদ রানা’ তারই অনন্য শৈল্পিক মহিমা। উদীয়মান কিশোরের ভাল লাগার স্পর্শকাতর অনুভব অনুভূতিকে লালন করাই শুধু নয়, বরং উঠতি বয়সের রোমাঞ্চকে একীভূত করে যে মাত্রায় পাঠক নন্দিত হয়ে উঠেছেন এক কথায় অনুপম। সঙ্গত কারণে অভিভাবকদের কাছে ছিলেন কৈশোর উপাখ্যানের এক জাদুকরী সত্তা। নিজেরও মনে হয় একটু আড়ালে, আবডালে কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘কুয়াশা’ এবং ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ পড়ার শিহরিত অনুভব। রোমাঞ্চকর, রহস্য উপন্যাসের ‘কিংবদন্তি’ এই জাদুকর লিখে ফেললেন ‘ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাস-১৯৬৬ সালে। তার আগেই চষে বেড়ালেন চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ে মোটর বাইকে চড়ে। সঙ্গে নিয়ে আসলেন, বাস্তব অভিজ্ঞতার অনন্য চিত্র। পাঠক তৈরিতে যেন জোয়ার নেমেছিল। উদীয়মান প্রজন্ম দারুণভাবে আলোড়িত হয়ে গেল। হৃদয়ের নিভৃতে কাজী আনোয়ার হোসেন চিরস্থায়ী আসনে অভিষিক্ত হলেন। পাঠকদের দাবিকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে লিখতে বসলেন ‘মাসুদ রানা‘র মতো আর এক অনন্য রহস্যাবৃত, রোমাঞ্চকর কাহিনী সম্ভার। পাঠক সমাজের অপেক্ষার অন্ত থাকত না- পরবর্তী সংখ্যা বেরুনোর প্রত্যাশায়। একটু ভিন্ন ধরনের ভিনদেশী অনুভবে ভালবাসার স্পর্শকাতরতায় সৃষ্টি হতে থাকে মাসুদ রানার কাহিনী সম্পদ। ফলে পাঠক প্রিয়তার শীর্ষে উঠে গেলেন। নিজের তৈরি করা সেবা প্রকাশনী থেকে বের হতো তার সৃজন দ্যোতনা। শুধু কলমেই নান্দনিক বোদ্ধা নন, বরং কণ্ঠেও ছিল এক অসামান্য সুরের মাদকতা। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন সে সময়ের সাড়া জাগানো কণ্ঠ শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। শৈল্পিক সৌর্যের দ্বৈত সত্তায় পরিপূর্ণ হয়ে নিজের সৃজন ভান্ডারকে যে মাত্রায় অবিস্মরণীয় করলেন- তা শুধু যুগোত্তীর্ণই নয়, বরং কাল থেকে কালান্তরের অনন্য যাত্রারও পরম নির্দেশনা। মানুষের ভেতরের স্পর্শকাতর চিরস্থায়ী বোধিসত্তাকে যেভাবে শব্দের সারিতে মহীয়ান করলেন তা আজও তরুণ প্রজন্মের অক্ষয় ঐশ্বর্য। শৈল্পিক পরিবারে জন্ম নেয়া এই অসাধারণ মননসত্তা কাজী মোতাহার হোসেনের পুত্র। ররেণ্য কণ্ঠশিল্পীও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ড. সানজিদা খাতুনের ছোট ভাই। এমন মহিমান্বিত শৈল্পিক সত্তা চিরস্থায়ী আবেদনে যুগ থেকে যুগান্তরের অনমনীয় মনন শৌর্য যার কোন মৃত্যু নেই, চির প্রস্থানও হয় না কখনও। শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
×