ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে বিমানসেনা

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

মুক্তিযুদ্ধে বিমানসেনা

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই জলে ও স্থলে সর্বাত্মক অবরোধ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলায় প্রত্যেকেই ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন। এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমী ভূমিকা রাখতে হয়েছে আকাশপথে মুক্তিসেনাদের। দেশের বিমানসেনা হিসেবে সংশ্লিষ্টদের যুদ্ধকৌশলের প্রতি সাধারণ মানুষের ছিল অপরিসীম আগ্রহ। এবারের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিমানসেনাদের স্মৃতিচারণায় নতুন প্রজন্মের দেশপ্রেমিক সন্তানদের কৌতূহল ছিল উল্লেখ করার মতো। গত শুক্রবার ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আকাশপথের মুক্তিসেনা শীর্ষক বিশেষ আয়োজনে অংশ নেন ক্যাপ্টেন কাজী আলমগীর সাত্তার, বীর প্রতীক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন শামসুল আলম বীর উত্তম। বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমানসেনারা বলেন, কিলোফাইটাররা ছিলেন প্রতিকূল পরিবেশে এক অনন্য বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের সৈনিক। যে যুদ্ধ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের। যে যুদ্ধ পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। যারা নেপথ্যে কাজ করেছেন সেই সৈনিকরা সাধারণ বিমানগুলোকে যুদ্ধ করার উপযোগী করে গড়ে তুলেছিলেন, সেটাও কম বীরত্বের কাজ নয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ কিলো ফ্লাইট গঠনের মাধ্যমে জন্ম নেয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। শুরু হয় আকাশপথে যুদ্ধের প্রস্তুতি। কিলো ফ্লাইট গঠন করা হয়েছিল একটি ডিএইচসি-৩ অটার বিমান, একটি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার এবং একটি ডিসি-৩ ডাকোটার সমন্বয়ে। ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে ৯ জন বাঙালী পাইলট এবং ৫৮ জন প্রাক্তন পিএএফ সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই ইউনিট। বিমানগুলো ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেছিল এবং স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে সজ্জিত হয়েছিল, যা আইএএফ বেস জোড়হাট থেকে পরিচালিত হতো। ইউনিটটি ১৯৭১ সালের অক্টোবরে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে প্রশিক্ষণ শুরু করে। ইউনিটটি সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে তেল ডিপোতে আক্রমণ করে অধিকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানী লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। পরবর্তী সময় কিলো ফ্লাইট ইউনিটটি একাত্তরে ডিসেম্বর ৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯০টি অভিযান এবং ৪০টি যুদ্ধের মিশন পরিচালনা করেছিল। ‘বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত’– এ মূলমন্ত্রে উদ্দীপ্ত আজকের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী আকাশসীমা রক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সর্বদা নিয়োজিত। এ বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা। আমাদের মাঝে এখনও জীবিত আছেন অকুতোভয় বহু মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সম্মাননা জানানো আমাদের কর্তব্য। শুধু বিজয়ের মাসেই নয়, বছরভরই নিয়মিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার ধারাবাহিক কার্যক্রমে বিমানসেনাদের মতোই প্রত্যক্ষ যোদ্ধাদের স্মৃতিচারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এ থেকে যেমন নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, তেমনি এসব বক্তব্য দলিল হিসেবেও ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রভূত উপকারে আসবে।
×