ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্র হত্যা মামলার রায়

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

ছাত্র হত্যা মামলার রায়

হত্যাকাণ্ডের বিচার তামাদি হয় না কখনও। একদশক আগে সাভারের আমিনবাজারে পবিত্র শব-ই-বরাতের রাতে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় মিলেছে। নিহত ছাত্রদের পরিবার পেয়েছেন ন্যায়বিচার। ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে আদালত। একইসঙ্গে ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে আইনের শাসনে গতিসঞ্চার হয়েছে। মানুষ আবারও বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফিরে পাচ্ছে। দেশে সুশাসন বিরাজ করলে আইন সঠিক পথে সঠিক গতিতেই চলে। আদালতে অভাবনীয় মামলাজট রয়েছে। তারপরও সমাজের ভিত নাড়িয়ে দেয়া মহা অপরাধ, যেগুলো চাঞ্চল্যকর হয়ে ওঠে অপরাধের প্রকৃতি ও পরিধির কারণে, সেসব অপরাধের বিচারে দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যথাসম্ভব অল্প সময়ের ভেতর নিষ্পত্তি করার দৃষ্টান্ত দেশে বিরাজমান। সমাজে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে শাসকমহল সম্পূর্ণ সজাগ ও সচেতন। প্রকাশ্য স্থানে দলবদ্ধ হত্যাকা-ের মতো মহাঅপরাধ সংঘটিত হলে সঙ্গত কারণেই মানুষের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এমন হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া যথোপযুক্ত তদন্ত শেষে আইনী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একটি প্রতিকার পাওয়া গেলে জনমনে ফিরে আসে স্বস্তি। যেমন এসেছে বহুল আলোচিত ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণায়। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মানব হত্যাকা-ের মতো গুরুতর অপরাধ করে এখন আর কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে না। সব অপরাধীকেই আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে। ফলে এটা ভাবার কোনই কারণ নেই যে, হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাবে। এই সমাজে যেমন পিটিয়ে হত্যার মতো খুনী-মানসিকতা রয়েছে, তেমনি তাদের দমন করার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা এবং ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার যথাযথ প্রয়াসও আছে। মানুষ আশা করেছিল, দ্রুত ওই খুনীদের আইনের আওতায় এনে বিচার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা হবে। একদশক লেগে গেছে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হতে। সমাজে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে এই ভেবে যে, দেশে বর্তমানে এমন একটি ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিরাজ করছে, যেখানে অপরাধী অপরাধ করে কোনক্রমেই রেহাই পাবে না। হত্যাকা- সংঘটিত করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ানোর দুঃসময়ের অবসান ঘটেছে। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, যত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানই হোক, অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, এটি এখন সুনিশ্চিত। যে কোন মামলার রায়ের পর দ-প্রাপ্তদের সুযোগ থাকে উচ্চ আদালতে আপীল করার। চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির বেলায়ও অভিন্ন আইনী প্রক্রিয়া অনুসৃত হবে। রায়ে সবাই সন্তুষ্ট হবেন এমন কোন কথা নেই। একমাত্র বিজ্ঞ বিচারকই ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত রায় দেয়ার অধিকার রাখেন। এভাবেই সমাজে বিচার ব্যবস্থা সমুন্নত থাকে এবং মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ ফিরে আসে। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলেই কেবল পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব, সেকথা লেখাই বাহুল্য।
×