ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় রফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

বিদায় রফিকুল ইসলাম

বিশিষ্ট নজরুল গবেষক, সাবেক অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বহু কর্মযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ড. রফিকুল ইসলাম আর নেই। ৮৭ বছর বয়সে এই প্রাজ্ঞ অধ্যাপক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। জাতি হারাল জ্ঞান চর্চায় নিবেদিত এক গুণীজনকে। ৩০ নবেম্বর মঙ্গলবার একুশে পদকপ্রাপ্ত এই খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। কিংবদন্তিদের শূন্যস্থান পূরণ হওয়া কঠিন। তবে সৃজন ও মনন সাধনায় তাঁরা নিজেরাই চিরস্থায়ী আসনে অভিষিক্ত হয়ে যান অগণিত পাঠক-শ্রোতার কাছে। এই অসাধারণ শিক্ষকও তাঁর কর্মজীবনের উজ্জ্বল মহিমায় সকলের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। দেশাত্মবোধের অকৃত্রিম চেতনায় ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের অংশীদারিত্ব তাঁর জীবনের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। শুধু ভাষা সংগ্রামী নন, মাতৃভাষার প্রতি অকৃত্রিম দরদ আর সমৃদ্ধ বোধে নিয়তই চর্চা করেছেন মায়ের ভাষাকে আপন মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে। বাতিঘরের বরমাল্যে আলোকিত বাংলাকে যে মাত্রায় পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করেছেন অনন্য সাংস্কৃতিক বোধে তা অতুলনীয়। জীবনব্যাপী শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর সদর্প ও নিভৃত পদচারণায় মাতৃভাষা অনন্য মহিমায় সামনের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে গেছে। ’৬০-এর দশকে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে রবীন্দ্র বর্জন থেকে সংখ্যালঘু লেখকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সম্মুখ সমরে যোদ্ধার ভূমিকায় নামা তখনকার কাল পর্বের অবিস্মরণীয় কর্মযোগ। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের ছবি তুলে সে সময়ের ঘটনাপ্রবাহ চিত্রে অমর করে রাখা তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান। রাজধানী ঢাকার বহু ঐতিহ্যিক ঘটনার সাক্ষী এই অসাধারণ শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। দীর্ঘ জীবন পাওয়া রফিকুল ইসলাম রাজধানীর আবর্তন-বিবর্তনে কালের সাক্ষী হয়ে যে মাত্রায় সমকালকে আত্তীকরণ করেছেন। ত্রিকালদর্শী এই বিদগ্ধ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ’৪৭-এর দেশ বিভাগ, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬০-এর দশকের উত্তাল সময় অবলোকন করে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য শিক্ষা ও শিক্ষকতার জীবন বাংলা সাহিত্যের আঙিনাও বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর অসাধারণ সৃজন ও মনন দ্যোতনায়। নান্দনিক জগতে সমর্পিত হয়ে বিদ্রোহী কবি নজরুলের জীবনচরিত সাবলীলভাবে উপলব্ধি করাও শৈল্পিক মাহাত্ম্যের ক্লান্তিহীন পথযাত্রা। সমৃদ্ধ জীবন যেমন ব্যক্তি মানুষের অভাবনীয় শৈল্পিক ও নন্দনতত্ত্বের অবারিত যাত্রাপথ। পাশাপাশি সেই রথযাত্রা কোন এক সময় থমকে যাওয়াও প্রকৃতির অমোঘ বিধান। চির প্রস্থানের সেই নিয়মের অধীন আমরা সকলেই। তবে সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব অমর এবং চিরস্থায়ী শৌর্যে অম্লান। শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার চাইতেও বেশি জরুরী তাঁর রেখে যাওয়া সাহিত্য সম্ভারকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেয়া। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।
×