ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চরাঞ্চলে বিদ্যুত

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৯ নভেম্বর ২০২১

চরাঞ্চলে বিদ্যুত

এবার দেশের চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোকে বিদ্যুতের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সত্য বটে, দেশের অনেক চরাঞ্চল, প্রায় যোগাযোগবিহীন দুর্গম কিছু এলাকা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশকিছু অংশ এমন কি সুন্দরবন সন্নিহিত কিছু এলাকাও বিদ্যুতের আওতায় আসেনি এখন পর্যন্ত। অবশ্য দেশের অনেক দুর্গম অংশে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে, তবে তা সীমিত পরিসরে। জাতীয় গ্রিড এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় হোম সোলার প্যানেলের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তবে সরকার দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনতে ইচ্ছুক। পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের অধীনে ‘বাংলাদেশের বিদ্যুতবিহীন প্রত্যন্ত ও চর এলাকায় সৌরশক্তি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে হোম সোলার প্যানেল। এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ২ কোটি মানুষ। বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। যার অনেকটাই অব্যবহৃত। সুতরাং ঘরে ঘরে আলো পৌঁছানো আদৌ কোন স্বপ্ন কিংবা বিলাসিতা নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের একটি ঘরও অনালোকিত, অর্থাৎ অন্ধকারে থাকবে না। মুজিববর্ষে বাংলার প্রতিটি ঘরে জ্বলবে আলো। আর কে না জানে যে, আলো মানেই দূরীভ‚ত অন্ধকার। এই আলো প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানের আলো। মন ও মননের বহ্নিশিখা, যা মানুষের চিন্তা-চেতনাকে প্রতিনিয়ত শাণিত করে, বুদ্ধিদীপ্ত ও মননশীল করে গড়ে তোলে। দেখায় মুক্তি, যুক্তি ও প্রজ্ঞার পথ। দূর করে কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও সামাজিক অচলায়তন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় এর চেয়ে আকাক্সিক্ষত আর কি হতে পারে! বিদ্যুত মানেই নতুন শিল্প-কারখানা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, আধুনিক চাষাবাদসহ সর্বদা সচল অর্থনীতির চাকা। আগামী দুই বছরের মধ্যে বড় দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করলে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুত উৎপন্ন হবে দেশে। সে দিকটি মাথায় রেখেই মূলত মুজিববর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়ার আয়োজন। দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো এখন পর্যন্ত ডিজেল ও কয়লাভিত্তিক হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ে। তদুপরি এগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। সে অবস্থায় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, পছন্দনীয় ও পরিবেশবান্ধব হতে পারে নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে বিদ্যুত উৎপাদন ও পারস্পরিক আমদানি-রফতানি। নেপাল ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেদেশে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর পাশাপাশি চলমান সৌর ও বায়ু বিদ্যুত প্রকল্প। বিদ্যুত সেক্টরে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সরকার এবার জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে, যার মধ্যে অন্যতম জলবিদ্যুত, সৌর ও বায়ুবিদ্যুত। প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তা দেশে এনে ব্যবহারের ওপর। এতে সাশ্রয়ী দামে যেমন জলবিদ্যুত পাওয়া যাবে, তেমনি তা হবে পরিবেশবান্ধব। সৌর বিদ্যুত ব্যবহারের ওপরেও সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
×