ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতা

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০২১

রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার জাতীয় সংসদে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলসমূহকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান যেমন সময়োপযোগী, তেমনি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদানই হলো বহুমত ধারণ এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে সঙ্গত সুসম্পর্ক। বন্ধুতাই জাতিকে এগিয়ে দেয়, বৈরিতা নয়। সে কারণে রাষ্ট্রের অভিভাবক সোনার বাংলা গড়তে সবার ঐক্য গড়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি যথার্থই অনুধাবন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজন ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। তাই ঋজু উচ্চারণে তিনি বলেছেন, আসুন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দলমত পথের পার্থক্য ভুলে, ধর্মবর্ণগোত্র নির্বিশেষে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সুদীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস বিস্মৃত হলে চলবে না। নতুন প্রজন্মের কাছে সেই গৌরবগাথা তুলে ধরতে হবে বারবার। বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শ্রেষ্ঠ ঘটনা। এটিকে পাশ কাটিয়ে কখনই সামনের দিকে এগোনো যাবে না। ইতিহাসবিস্মৃত মানুষ দেশ ও সমাজের কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতায় বাংলাদেশের নানা ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার ইতিহাসও তাই উঠে এসেছে। এসেছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সুশীল সমাজকেও সম্মিলিতভাবে যুক্ত হতে হবে, এই জরুরী বার্তাটি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের প্রয়োজন চতুর্থ বিপ্লবকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখা। এটি সর্বজনবিদিত যে জাতি হিসেবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণ তোরণে। এরকম একটি সুন্দর কালপর্বে অগ্রসরতার প্রত্যয় বিশেষ গুরুত্ববহ। দেশকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের সড়কে সক্রিয় ও গতিময় রাখার নেপথ্যে রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা অস্বীকার করা চলে না। রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে সেই রাষ্ট্রনায়ক তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। যা যথোচিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ‘পদ্মা সেতু’ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন জাতি হিসেবে আমাদের স্বকীয়তা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীকস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। জীবন ও জীবিকার অসাধারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব প্রদানের কারণে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, যা বিশ্ব দরবারে আমাদের সম্মান আরও বৃদ্ধি করেছে। রাষ্ট্রপতি বিষয়টির পুনরুল্লেখ করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে দেশপ্রেম ও অঙ্গীকারবোধের বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছেন। সবার ওপরে দেশপ্রেম। দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালবাসলে ক্ষুদ্রতা সঙ্কীর্ণতা চাপা পড়ে যায়। দেশপ্রেমই রচে দিতে পারে জাতীয় ঐক্য। আর এই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে একদিন স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
×