ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ কর্মপরিবেশ

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৬ অক্টোবর ২০২১

নিরাপদ কর্মপরিবেশ

কোন দেশের সার্বিক আর্থিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান শর্ত হলো নিরাপদ কর্মপরিবেশ। শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট, অফিস-আদালত সকল ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ কর্মপরিবেশ অনুপস্থিত। তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকা- থেকে শুরু করে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা, বনানীতে বহুতল ভবন, পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম এবং সর্বশেষ রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকা-ে এই সঙ্কট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বিদেশী ক্রেতাদের চাপে এ্যাকর্ড এ্যান্ড এ্যালায়েন্সের মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্প-কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ অনেকটা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও অন্যান্য শিল্প-কারখানায় তা অথৈবচ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গঠিত হয়েছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কমিটি। পোশাক খাত বহির্ভূত ৪৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শন করে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করবে এই কমিটি। পর্যায়ক্রমে সকল শিল্প-কারখানাই এর আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে ভবনের নিরাপত্তাসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ওপর। চিহ্নিত করা হবে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থারগুলোর গাফিলতি, অবহেলা। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে গত ১০ বছরে দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ৪ বছরে শিল্প খাতে ঘটেছে ৯৮টি অগ্নিকা-ের ঘটনা। যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১৭ জন শ্রমিক, আহত হয়েছেন ২৭৫ জন। বেশি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে পোশাক বহির্ভূত খাতে, যার সংখ্যা ৯১টি। পোশাক শিল্পে যেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেভাবে নেয়া হয়নি অন্য শিল্পকারখানাগুলোতে। শিল্প-কারখানার জন্য ট্রেড লাইসেন্স, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, বিস্ফোরক দফতরসহ অনেকের অনুমোদন ও সনদপত্র নিতে হয়। শুধু সনদ দিলেই হবে না, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে অগ্নিনির্বাপণসহ জরুরী নির্গমন পথ রাখার ওপর। অগ্নি দুর্ঘটনা মানুষের জীবনকে বিপর্যয় করে দেয়। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব যাপিতজীবনে বয়ে আনে দুঃসহ সময়। সবচেয়ে অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয় কোন ভবন কিংবা বস্তিতে অগ্নিকা- ঘটলো। সঙ্কট মোকাবেলার চেয়েও বেশি দৃশ্যমান হয় নানা ধরনের অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা। আগুন লাগলে প্রথমে প্রয়োজন এটি নিয়ন্ত্রণ করা। এরপর কারণ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুঃখজনক ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। এর মধ্যে সংঘটিত অগ্নিকা-গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিটি ঘটনাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে কিছু দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি। একই সঙ্গে দ্রুত নির্গমন ব্যবস্থার ত্রুটি জীবনহানির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। শিল্পকারখানা যাই হোক, দাহ্য পদার্থগুলো সংরক্ষণ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে, যাতে এগুলো অগ্নিকা-ের কারণ না হয়। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে সকল শিল্পকারখানা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ নির্গমন পথ রাখতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাতে সহজে পৌঁছতে পারে সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
×