ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১৯ অক্টোবর ২০২১

খাদ্য নিরাপত্তা

গত শনিবার বিশ্বখাদ্য নিরাপত্তা দিবসের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিশেষ করে ধান এবং অন্যবিধ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্যশস্যে প্রায় স্বনির্ভরতা অর্জনের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। গত ২০-২১ অর্থবছরে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি টনের বেশি, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মোট চালের উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন। এর বাইরে গম, ভুট্টা, আলু, শাক-সবজি, ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনও বেড়েছে বহুলাংশে। পাশাপাশি বেড়েছে ফলমূল, শাক-সজবি ও মাছের উৎপাদন। হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া, গবাদিপশুর খামারের সংখ্যাও বেড়েছে। বেড়েছে দুধ, ডিম, মাংস বিশেষ করে পোল্ট্রির উৎপাদন। প্রতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো হয় প্রধানত দেশীয় পশুসম্পদ থেকেই। বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ বোরো মৌসুমের উচ্চ জিঙ্ক সমৃৃদ্ধ ধানের জাত, যা মানবদেহে জিঙ্কের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ধানের নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এই কৃতিত্বের দাবিদার। বহুমুখী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি-২০২০, জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতি-২০২০ এবং জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি-২০২০ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এসব নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। পাশাপাশি রোধ করতে হবে খাদ্যের অপচয়। অতিরিক্ত খাদ্য পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থাও করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমণের প্রাক্কালেও প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন। অকপটে স্বীকার করতে হয় যে, সরকার তার কথা রেখেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দফায় দফায় লকডাউন তথা শাটডাউনে থাকলেও দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। এ সময়ে দেশের সাধারণ মানুষ তথা খেটে খাওয়া দিনমজুরদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার কমেছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছেন গ্রামে। তবে দেশের কোথাও খাদ্য সঙ্কট ও খাদ্যাভাব হয়নি। সরকার আর্থিক অনুদানসহ ত্রাণ তৎপরতা বাড়িয়েছে দেশের সর্বত্র। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নগদ প্রণোদনাসহ নিত্যপণ্য পৌঁছে দিয়েছে গরিবের ঘরে ঘরে, যা অব্যাহত রয়েছে। কৃষকদের ধান-চালের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য ক্রয়মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি মজুদও বাড়িয়েছে বেশি পরিমাণে কিনে, যাতে গড়ে তোলা যায় খাদ্য নিরাপত্তা। এরই সুফল পেয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। যে কারণে করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিসহ দোকানপাট, কল-কারখানা খুলে দেয়ার জন্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ-ভাংচুর-ধর্মঘট হলেও বাংলাদেশে সেসব ছিল অনুপস্থিত। খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের এই সময়োচিত হস্তক্ষেপ ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সহজেই এড়ানো সম্ভব হয়েছে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি। এরই প্রতিফলন ঘটেছে আয়ারল্যান্ডের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মান সংস্থা ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফের যৌথভাবে প্রণীত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স তথা জিএইচআইয়ের বৈশি^ক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, বিশ^ ক্ষুধাসূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম। গত বছরের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ভারতের অবস্থান ১০১তম এবং পাকিস্তানের ৯২তম। অর্থাৎ. ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের একটি ইতিবাচক অর্জন। তবে ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এখন আরও জোর দিতে হবে পুষ্টিপূরণ অর্থাৎ, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, ডাল, মসলা উৎপাদনের দিকে।
×