ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাশিত রেলপথ

প্রকাশিত: ২০:২২, ৫ আগস্ট ২০২১

প্রত্যাশিত রেলপথ

সমুদ্র, পাহাড়, বন আর নদী পরিবেষ্টিত চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্ভারের এক অপূর্ব লীলাভূমি। কক্সবাজার যেতে বিমান এবং সড়কপথে যাওয়াই ছিল দীর্ঘকালের যাত্রাপথ। সেখানে সময়ের যৌক্তিক আহ্বানে রেললাইন সংযোগ আধুনিকতার নতুন অধ্যায় বলা যেতে পারে। কারণ, আগে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনে যোগাযোগ ছিল। এবার চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রæততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে করোনা সংক্রমণ তো কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও এখন নিয়মিত কার্যক্রমে গন্তব্যে পৌঁছানোর চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই উন্নয়ন অবকাঠামো তার লক্ষ্যমাত্রায় ছুটে চলেছে। ইতোমধ্যে ৬১% কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। আর আগামী বছরেই এই রেলপথ বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাত্রীসেবায় সম্পৃক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা অবলোকন করা যাচ্ছে। ফলে, পর্যটন শহর কক্সবাজার নির্মাণাধীন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেলপথে সংযুক্ত হতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। রেলপথ তৈরির লক্ষ্যে মাটি ভরাট সম্পন্ন করে সেখানে প্রস্তুত হচ্ছে লাইন স্থাপনের কাজ। বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের মহাযজ্ঞে যে সম্প্রসারিত কার্যক্রম, কক্সবাজারের সঙ্গে রেললাইন সম্পৃক্তকরণ তারই একটি অবধারিত যাত্রাপথ। সেটাই এখন অত্যধিক গুরুত্ব বিবেচনায় জোর কদমে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সঙ্গত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং শ্রমিকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে নির্মীয়মাণ প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে কাজ করছেন। দোহাজারী কক্সবাজারের ১০০ কিলোমিটার রেলপথের বাস্তবায়ন এখন সময়ের অপেক্ষায়। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজারের পথ মাত্র ১২ কিমি। সর্বসাকুল্যে ১০০ কিলোমিটার রেলযাত্রাপথ পাড়ি দিতে হবে। প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথের কাজও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় ঘুমধুম পর্যন্ত কার্যক্রমটি এখন অবধি শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তা নতুন করে শুরু করার পরিকল্পনাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আছে। দেড় হাজার শ্রমিক এই প্রকল্পে নিয়োজিত থাকলেও করোনা সংক্রমণে এই নির্মাণ গতিতে শিথিলতা আসতে সময় লাগেনি। বর্তমানে অবরুদ্ধতার কঠোর জালে আবর্তিত সারাদেশের রেলপথেও এসেছে এক অনাবশ্যক স্থবিরতা। ফলে চট্টগ্রাম-দোহাজারী পথের ট্রেন চলাচলও আপাতত স্থগিত। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে রামু কক্সবাজার এবং ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে সহজ, স্বাভাবিক, আরামদায়ক ও নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই নতুন রেলপথের যাত্রা শুরু করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী রেলপথের চারপাশে যে অবৈধ দখলদারিত্বে দেশের ভূসম্পত্তি বিভিন্ন চক্রের হাতে জিম্মি হওয়ার দৃশ্য এক অনভিপ্রেত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম। দখলদাররা কোটি কোটি টাকার জমি নিজেদের আয়ত্তে এনে অবৈধভাবে মালিকানাস্বত্ব তৈরি করছে, যা জাতীয় সম্পদের নয় ছয় করার দুরভিসন্ধিমূলক জঘন্য অপরাধ। এসব অপরাধীচক্রের হাত থেকে দেশীয় ভূ-সম্পদ রক্ষা ও নজরদারি করাও সময়ের অনিবার্য দাবি। আবার পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে নতুন রেলপথ স্থাপন ভ্রমণ বিলাসী মানুষের জন্য এক আবশ্যকীয় উপহার। চারপাশের অনাবশ্যক জঞ্জাল সাফ করাও সচেতন দায়বদ্ধতা।
×