ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে সাত জেলা লকডাউন

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২২ জুন ২০২১

আজ থেকে সাত জেলা লকডাউন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রæত বেড়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সাত জেলার যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সোমবার সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের এক বৈঠকে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সাত জেলায় লকডাউনের ফলে ঢাকার সঙ্গে দেশের সকল জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। করোনার বিস্তার রোধে এই সময় এমন পদক্ষেপ জরুরী ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এসব জেলা আমরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকতে পারবেন না। ঢাকার সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ হলে এমনিতেই সারাদেশে কমে যাবে। তিনি জানান, করোনা বেড়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আগামী ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও মুন্সীগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ডিআইজি হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার সাত জেলায় যে লকডাউনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে যথাযথভাবে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ এবার সীমান্ত এলাকা থেকে ক্রমান্বয়ে রাজধানীর দিকে আসছে। প্রথমে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ সময় সাতক্ষীরা, যশোর, কোটচাঁদপুর, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি হয়। করোনার এই সংক্রমণ ধীরে ধীরে রাজধানীর দিকে আসতে শুরু করে। চারিদিক দিয়ে রাজধানীর দিকে ধাবিত হওয়ায় বিভিন্ন মহল সঙ্কিত হয়ে পড়ে। রাজধানী শহরে এই প্রকোপ দেখা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশেষে সোমবার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সাত জেলায় লকডাউন দিলে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এতে যেমন কেউ ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না, তেমনি ঢাকা থেকে কেউ বাইরে যেতেও পারবেন না। পরে এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী এবং গোপালগঞ্জ জেলাগুলোর সার্বিক কার্যাবলী/চলাচল আজ ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ‘এ সময়ে শুধু আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা (যেমন- কৃষি উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেয়া, বিদ্যুত, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরী ও অত্যাবশকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভ‚ত থাকবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব সিনিয়র সচিব এবং সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যে কোন জেলা প্রশাসন মনে করলে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবেন। আমরা একেক দিন একেক বিভাগের সঙ্গে বসবো। ঢাকার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আছে কিনাÑ এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢাকা আমরা বন্ধ করিনি। ঢাকার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সন্ধ্যায় আমরা আবার বসবো। ভিডিও কনফারেন্স করব। দেখা যাক, আগে বসি, তারপর কি হয়। এখানে স্বাস্থ্য রিলেটেড সবাই থাকবেন। তিনি জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরা, বাগেরহাটের মংলা, যশোর পৌরসভা, অভয়নগর, শার্শা, ঝিকরগাছা, কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, মেহেরপুরের পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড, মাগুরা পৌরসভা লকডাউন আছে। এছাড়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, নাটোর পৌরসভা ও সিংড়া, বগুড়া পৌরসভা, জয়পুরহাট পৌরসভা, কালাই ও পাঁচিবিবি লকডাউনের বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে। এই সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং এ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছু চলবে না। জেলাগুলো ‘বøকড’ থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না।
×