ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিস

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৮ এপ্রিল ২০২১

বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিস

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনলাইন ওয়ানস্টপ সার্ভিসে পোর্টালে যুক্ত হয়েছে আরও পাঁচটি নতুন সেবা, যা এই করোনাকালীন দুঃসময়ে সুসংবাদ নিঃসন্দেহে। নতুন সংযুক্ত সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইনের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন প্রদান, তিনটি বিদ্যুত কোম্পানির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ, সর্বোপরি বিডার অনলাইনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের যাবতীয় অভিযোগ গ্রহণ ও দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এসব সেবা যুক্ত হওয়ার ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসেই নানাবিধি সেবা পাবেন, যার ফলে বিনিয়োগ হবে আরও সহজ ও দ্রুত। এর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আরও বাড়বে বলেই প্রত্যাশা। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সঙ্কটেও বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির খবরটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। একই সঙ্গে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সূচকভিত্তিক একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই সূচকে গত বছর বাংলাদেশে অবস্থান ১৭৬ থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে উন্নীত হয়েছে ১৬৫টিতে। নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুতির পথে। বিনিয়োগকারীদের ৩৫টি সংস্থা থেকে দেয়া ১৫৪টি সেবা এক স্থানে তথা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার কাজ চলছে। এরই ফলশ্রুতিতে বিডা প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১১ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগ বাস্তবায়িত হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থই প্রধান। এসবই দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতিসহ নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনসহ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। করোনা মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। জাতীয় বাজেটেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য ইতোমধ্যেই সরকার এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার সুফল পেয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এর বাইরেও রয়েছে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে অন্তত দুই মাসের কর রেয়াত, এক অঙ্কের সুদহার, ৪ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ সুবিধা, যার সুবিধা পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। এর পাশাপাশি কৃষিসহ গবাদি পশু, পোল্ট্রি, ফুল-ফল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের জন্য দেয়া হয়েছে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা ও প্রণোদনা। এসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি সরকার জাতীয় বাজেটে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর। এ জন্য নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। যার মধ্যে রয়েছে কর্পোরেট কর হার কমানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী শিল্পঋণ সুবিধা, সর্বোপরি অপ্রদর্শিত আয় তথা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। করমুক্ত আয়ের পরিসীমাও বাড়ানো হয়েছে। এসবই আগামীতে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অন্যদিকে করোনার উৎসস্থল চীনকে নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-অস্বস্তি থাকার কারণে কয়েকটি দেশের কার্যাদেশও চলে আসতে পারে বাংলাদেশে, যা প্রত্যাশিত। কেননা, এ দেশে শ্রমমজুরি সস্তা ও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। জাপান, সৌদি আরব, তুরস্কও আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিনিয়োগে। বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তথা স্বপ্ন নিয়ে অগ্রসর হতে আন্তরিক ও সদিচ্ছুক। ইতোপূর্বের কোন সরকারের মধ্যেই উন্নয়নের এই স্বপ্ন তো দূরে থাক, এমনকি ধারাবাহিকতাও লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের সেই স্বপ্নের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে। উল্লেখ্য, এর আগে সরকার রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছিল, যার সুফল দেশ ও জাতি পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মানুষের মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১-এর সাফল্যের পর সরকার এবার অগ্রসর হচ্ছে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে।
×