ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনব মঙ্গল বারতা চারু শিল্পীদের

ফেসশিল্ডে জীবনের রং কারুকৃতি

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ১৪ এপ্রিল ২০২১

ফেসশিল্ডে জীবনের রং কারুকৃতি

মোরসালিন মিজান ॥ শিল্পী মনের স্বাধীনতার কাছে আর সবই গৌণ। বার বার তা প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা সে সত্যকে আরও জোরালোভাবে সামনে আনলেন। তছনছ করে দেয়া করোনাকেই শিল্পের অনুষঙ্গ করলেন তারা। শিল্পীদের রং তুলির আঁচড়ে ফেসশিল্ড হয়ে উঠল অনন্য কারুকৃতি। সংক্রমণ থেকে ব্যবহারকারীকে রক্ষা করা নয় শুধু, জীবনের রংকে ধারণ করল। ভয়ভীতি ভুলিয়ে দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার অংশ হলো ফেসশিল্ড। না, আজ পহেলা বৈশাখে বের করা হচ্ছে না মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেভাবে বের করার কথা ছিল, সেভাবে আর বের হচ্ছে না। তবে টেলিভিশনের পর্দায় আকর্ষণীয়ভাবেই আয়োজনটিকে তুলে ধরা হবে। সেখানে আরও অনেক কিছুর মতো থাকবে ফেসশিল্ডও। বর্তমান বাস্তবতায় ফেসশিল্ডকে মুখোশে রূপান্তর করা হয়েছে। রাজধানীর পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের প্রধানতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলা নববর্ষের সকাল শুরু হয় ছায়ানটের সঙ্গে। নগরবাসী রমনা বটমূলে গান গেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। তার পরই যোগ দেন মঙ্গল শোভাযাত্রায়। চারুকলা থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এটাই হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় গতবার তা করা যায়নি। এবার নিউ নরমাল সময়। অনেক কিছুই চলমান ছিল। একই কারণে উৎসবে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় চারুকলা। শুধু উৎসবে ফেরা নয়, সাম্প্রতিক মৌলবাদী তা-বের বিপরীতে উদার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলবেন বলে ঠিক করেন শিল্পীরা। এর অংশ হিসেবে চারুকলার বাইরের দেয়ালে লেখাচিত্র অঙ্কন করা হয়। গ্রামীণ ঐতিহ্য লোকজ ফর্ম দিয়ে সাজানো হয় দেয়াল। তাতেই প্রথম দৃশ্যমান হয় বৈশাখের প্রস্তুতি। গত কয়েকদিন টানা কাজ করেন শিল্পীরা। চারটি চর্কা তৈরি করা হয়। চর্কাগুলোর মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের কথা গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়। সড়াচিত্র অঙ্কন করা হয়। বর্ষবরণ উৎসবে সব সময় ব্যবহৃত হয় এমন চেনাজানা শিল্পকর্মে ভরে ওঠে জয়নুল গ্যালারি। সবচেয়ে বেশি তৈরি করা হয় রাজা রানীর মুখোশ। সাধারণত কাগজের ম- দিয়ে মুখোশ তৈরি করা হয়। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো এ কাজে ব্যবহৃত হয় ফেসশিল্ড। হ্যাঁ, করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষায় এটি দিয়ে অনেকে মুখম-ল ঢেকে রাখেন। এর বিকল্প ব্যবহারের কথা কেউ হয়ত চিন্তাও করেননি কোনদিন। শিল্পীরা তা-ই করে দেখান। রং তুলি দিয়ে ফেসশিল্ড এঁকে নেন তারা। বিবর্ণ ফেসশিল্ড দেখতে দেখতে আশ্চর্য রঙিন হয়ে ওঠে। যে বস্তুটির দিকে তাকালে মহামারীর কথাই শুধু মনে পড়ত সেটি রূপান্তরিত হয়ে যায় অপরূপ শিল্পকর্মে। অদ্ভুত এ রূপান্তর সম্পর্কে অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেন, গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে। বর্তমানে সংক্রমণ আরও উর্ধমুখী। এ অবস্থায় আমরা মনে করি, মনোবল ধরে রাখতে হবে। ভীত না হয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী। হতাশা কাটিয়ে জীবনের জয়গান করতে হবে আমাদের। ফেসশিল্ডকে রঙিন করার মাধ্যমে এ কথাটিই বলার চেষ্টা করা হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া সকলেই মুখে চিত্রিত ফেসশিল্ড ব্যবহার করবেন বলে জানান তিনি। প্রতি বছর সমকালকে পর্যবেক্ষণে নিয়ে তার আলোকে জাতির উদ্দেশে একটি বার্তা দেয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সে অনুযায়ী, এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্বাচন ও পোস্টার ডিজাইন করা হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘কাল ভয়ঙ্করের বেশে এবার ঐ আসে সুন্দর।’ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত রচনা থেকে এ অংশটুকু গ্রহণ করা হয়েছে। পোস্টার ডিজাইন করেছেন আনিসুজ্জামান সোহেল। এতে দেখা যায়, গভীর অন্ধকার ভেদ করে উড়ে আসছে ভীষণ রঙিন দুটি পাখি। এক ঝলক আলো হয়ে উৎসব আনন্দ আর ভরপুর প্রাণ হয়ে আসছে। বার্তা দিচ্ছে, জয় হবে শুভ সুন্দরের। জীবনের জয় হবে। রূপ বদলানো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনটি ক্যামেরায় ধারণ করে আজ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। তবে ঠিক কী দেখানো হবে, কিভাবে দেখানো হবে তা পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি আয়োজকরা।
×