ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৪ মার্চ ২০২১

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে

জনকল্যাণমুখী সরকারের কল্যাণী দৃষ্টি যে দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিও রয়েছে তার সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত প্রায় সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত। সমাজের একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক নাগরিকের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরও সমঅধিকার ও সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই সুযোগ দিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপনের পথ তৈরি করা গেলে তাদেরও সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। এর জন্য বিশেষায়িত ব্যক্তিদের বিশেষ স্কুল, কারিগরি সেবা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ। বিশেষ করে এসব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের জন্য সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম নির্মাণ ও ফুটবল-ক্রিকেট খেলার সুবিধা বাড়ানো একান্ত জরুরী। সাভারে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মিত হলে বিরাট একটি কাজ হবে। বছরের বিশেষ বিশেষ দিবসে প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা জেগে ওঠে বা প্রচারমাধ্যম জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব নেয়। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসও পালিত হয় দেশে। এ উপলক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জোরেশোরেই বলা হয়। সকল আহ্বানই যে রুটিনমাফিক গৎবাঁধা শুষ্ক আহ্বান- এমন কথা আমরা বলি না। নিশ্চয়ই এর ভেতরে অনেকেরই আন্তরিকতা রয়েছে, রয়েছে দীর্ঘশ্বাসমিশ্রিত কাতর আর্তি। বিশেষ করে যাদের পরিবারে রয়েছেন অন্তত একজন প্রতিবন্ধী- শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী- অর্থাৎ যারা ভুক্তভোগী তাদের কষ্টের কথা আমাদের হৃদয় মথিত করে যায়। বহুবিচিত্র প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই সমাজে প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে যেতে হয়। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণার্থে একটি মূলবাণী নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সেটি হলো ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় একীভূতকরণ : বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন’। এ ব্যাপারে আমাদের সাফল্য বিরাট না হলেও আমরা এগিয়ে চলেছি। এ দেশের প্রতিবন্ধীদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান জানা যায় না। সঠিকভাবে প্রতিবন্ধীদের গণনা নিশ্চিত করা দরকার। সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া করার অসুবিধা দূর করার কোন বিকল্প নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান পদ্ধতি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সমাজ উপকৃত হবে। বিন্দুমাত্র সংশয়ের কারণ নেই যে, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ছাড়া প্রতিবন্ধীদের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন-২০০১ সংসদে পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও সুবিধাবঞ্চিত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ার বিতরণ অনুষ্ঠানে একটি আশাজাগানিয়া কথা বলেছিলেন- যে কথা শোনার অপেক্ষায় ছিল দেশের লাখ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তিনি সবার প্রতি প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি সুবিধাপ্রাপ্তির আওতায় যোগ হয়েছে আরও বিরাটসংখ্যক ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৫ আমাদের হাতের সামনেই। আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিরা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে আসবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার পথ সুগম করেছিলেন। বর্তমানে দেশের অনেক বেসরকারী সংস্থা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তথা অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতার পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। এটা সুলক্ষণ। তবে সরকারকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়টি মনিটরিং করতে হবে। কারণ, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত টাকা হরিলুট হয়েছে। আগামীতে পুনরাবৃত্তি ঘটবে না এটাই মানুষের প্রত্যাশা। আরেকটি কথা, শুধু পরিবারের নিকটজনই নয়, তাঁদের কাছাকাছি থাকা প্রতিটি মানুষের আচরণই এমন হোক যাতে প্রতিবন্ধীরা নিজেদের উপেক্ষিত ও করুণার পাত্র না ভাবেন। প্রতিবন্ধীরাও পারে সমাজের কল্যাণ ও দেশসেবায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে- একথা যেন আমরা ভুলে না যাই।
×