ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আমিনূর রশীদ বাবর

জানতে হবে ইতিহাস

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

জানতে হবে ইতিহাস

দীর্ঘ নয়টি মাস কি দুর্বিষহ জ্বালা-যন্ত্রণা অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তা একমাত্র তারাই বলতে পারবে যারা দেশত্যাগ করেনি, দেশের মধ্যে ছিল। ওই সময় প্রতিটি মুহূর্ত যাপিত হয়েছে সাক্ষাত মৃত্যুর সঙ্গে। প্রতিটি রাত কেটেছে মানুষের বিনিদ্ররজনী। কখন জানি নাপাক বাহিনীর দোসর রাজাকার এসে হাজির হয়। ওই সময় রাজাকার, আলবদর ছিল সাক্ষাত মৃত্যুদূত। ওই সময় রাজাকার আলবদররা অত্র অঞ্চলে কি তাণ্ডব করেছিল তা নতুন প্রজন্ম কিছুই জানেও না এবং বুঝেও না। তখন মা-বোনদের পরনের কাপড় ঘরের বাহিরে রোদে দেয়া যেত না। পরনের ভেজা কাপড় ঘরেই শুকানো হতো। মা, বোনদের গায়ে উনুনের ছাই লাগিয়ে রাখা হতো। কখন জানি রাজাকারের নজরে পড়ে যায়। এই ভয়ে সবসময় মানুষ তটস্থ থাকত। এক জায়গায় বেশি দিন থাকা যেত না। ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করতে হতো। এ এক বিভৎস অবর্ণনীয় নিদারুণ সময় অতিবাহিত করেছে মানুষ। মূলত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। একই ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। ২৬ মার্চ অত্র অঞ্চল হানাদার কবলিত হয়ে পড়ে। ২৭ মার্চ মৌলভীবাজারে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় শহর থেকে প্রায় তিন কি.মি. পশ্চিমে শ্রীরাইনগর নামক স্থানে। ওইদিন সকাল প্রায় ১০টার দিকে কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই স্থানে হানাদার বাহিনীর মুখোমুখি হলে হানাদার বাহিনী মিছিলের উপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তখন মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় শাহবন্দর গ্রামের তারা মিয়া ও রাধানগর গ্রামের জমির মিয়া নামক দুজন মাতৃভূমির জন্য শাহাদাতবরণ করেন। এই দুজনই মৌলভীবাজারে সর্বপ্রথম শহীদ হন। পাকবাহিনীর কুকর্মের ধারাবাহিকতায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অত্র অঞ্চলে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। মহকুমা থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত শান্তি কমিটি গঠিত হয়। তৎকালীন মহকুমা শহরের পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের শান্তি কমিটির সভাপতি হানাদার বাহিনীর দোসর আব্দুল জালাল চৌধুরী। দীর্ঘ নয় মাস যারা কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সমগ্র অঞ্চলজুড়ে তাণ্ডব করল স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর দেখি তারাই আবার বীরদর্পে বুক চিতিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে এই শহরে চলাফেরা করছে। যে চিহ্নিত রাজাকার ওই সময় মিত্রবাহিনীর চার লাশের বুকের উপর উঠে নাচানাচি করল আজ দেখি এই শহরে তার দুটি বহুতল বাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি। এসব কিছুই ছিল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। নতুন প্রজন্ম এই সব ইতিহাস জানে না। নতুন প্রজন্মের কাছে অনুরোধ, অন্তত মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাসটি জানার জন্য। গীর্জাপাড়া, মৌলভীবাজার থেকে
×