ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

৩১ বছরেও বিচার হয়নি শিমুলিয়ায় নারকীয় তাণ্ডবের

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

৩১ বছরেও বিচার হয়নি শিমুলিয়ায় নারকীয় তাণ্ডবের

আজাদ সুলায়মান ॥ আজ ১২ ডিসেম্বর। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার শিমুলিয়া গ্রামে ভয়ঙ্কর জঙ্গী হামলার দিবস। ১৯৮৯ সালের এই দিনে কথিত পীর মতিউর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা জঙ্গী সংগঠন ‘মুসলিম মিল্লাত’ পুলিশ তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধের ঘোষণা দেয় এবং এতে ২১ জন নিহত হন। কিশোরগঞ্জের আশপাশের চারটি জেলার চার শতাধিক সশস্ত্র পুলিশের স্েঙ্গ পীর মতিউরের দুর্ধর্ষ অস্ত্রধারীরা টানা তিনদিন লড়াই চালিয়ে যায়। আগুনে ভস্মীভূত হয় শত শত বাড়িঘর ও ফসলের মাঠ। তিন দিনব্যাপী ওই সশস্ত্র যুদ্ধে গোটা এলাকা পরিণত হয় ভযঙ্কর রণক্ষেত্র। মুহুর্মুহু মর্টার শেল নিক্ষেপ, বন্দুকের গুলি আর আগুনে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। শেষে ৪৮ জন জঙ্গী সদস্যসহ মতিউর রহমান পালানোর সময় গাজীপুরের টোক এলাকায় তাকে আহত অবস্থায় ধরা হয়। গুলিতে তিনিও মারাত্মক আহত হয়ে দীর্ঘদিন বন্দী অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। দেশ কাঁপানো ওই ঘটনায় পাকুন্দিয়া থানায় পীর মতিউর রহমানসহ চার শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে পাকুন্দিয়া থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নি সংযোগ ও ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। সিআইডি তিনটি মামলার চার্জশীট দাখিল করার পর কিশোরগঞ্জের সেশন জজ সোহেল হোসেনের আদালতে শুনানি হয়। তারপরই আসামিরা হাইকোর্টে রিট করার পর তা স্থগিত হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত সেই মামলাগুলো উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে আছে। কিশোরগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার নুরুল আনোয়ার যিনি পরবর্তীতে আইজিপি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন, তার ভাষ্যমতে-‘মূলত ওটাই ছিল দেশের প্রথম ভয়ঙ্কর জঙ্গী হামলা। অথচ একত্রিশ বছরেও এই মামলার নিষ্পত্তি ঘটেনি। মামলার মূল আসামি ‘মুসলিম মিল্লাতের’ প্রতিষ্ঠাতা কথিত পীর মতিউর রহমান আজ বেঁচে নেই। কিন্তু মামলাগুলো তিন দশক ধরে ঝুলে আছে উচ্চ আদালতে। আর কতকাল ঝুলে থাকবে সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। যেভাবে গড়ে ওঠে প্রথম জঙ্গী সংগঠন মুসলিম মিল্লাত ॥ বিশ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের হুমকি দিয়েছিলেন এই কথিত পীর- মতিউর রহমান- যিনি ছিলেন চাকরিচ্যুত সেনাকর্মকর্তা। ’৭৭ সালে আদালতের এক রায়ে তিনি তিন বছরের দণ্ডে দন্ডিত হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে দেশে ফিরে ১৯৮৬ সালে আফগান ফেরত মুজাহিদদের নিয়ে গড়ে তোলেন মুসলিম মিল্লাত বাহিনী নামের একটি জঙ্গী সংগঠন- যার মাধ্যমে দেশে জঙ্গী তৎপরতার সূচনা ঘটে। এ সময়ের মধ্যে তিনি নিজেকে পীর দাবি করে এলাকায় আস্তানা গড়ে তোলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গার ভক্ত-অনুসারীরাও এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে ‘ইসলামের সেবা’ করতে থাকেন। ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম এলাকার অনুসারীর সংখ্যাই বেশি ছিল। সামরিক কায়দায়, সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিতভাবে তার ধর্ম প্রচারে অনেকটা জোর জবরদস্তিও ছিল। এলাকার ধর্মভীর মানুষও বিষয়টি মেনে নেন। তৎকালীন চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর মতিউর রহমান মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে এসে এই বাহিনী গঠন করেন। নিজ গ্রাম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার শিমুলিয়ায় ১১৩টি ঘর ও ৬১টি বাঙ্কার খনন করে শুরু করেন যুদ্ধবিদ্যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। তার সংগঠনে যোগ দেয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বহারা পার্টি ও অন্যান্য নিষিদ্ধ সগঠন থেকে আসা লোকজন। যারা ছিল ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। শিমুলিয়ায় তাদের দিবারাত্রি পালাক্রমে উগ্র ধর্মীয় জিহাদের বয়ান দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। সেখানে শিমুলিয়া ফরজে আইন মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়। তার ফরজে কেফায়া বিভাগে যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা দেয়া হতো। এখানকার তিন শতাধিক ছাত্রের সবাই ছিল যশোর, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া ও নারায়ণগঞ্জের। আস্তানাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। লাঠি, বল্লম, কিরিচ, চাপাতি, পিস্তল, বন্দুুক, এসএমজি, গোলাবারুদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো প্রকাশ্যেই। ছিল পীরের নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী। যাদের কাজই ছিল সার্বক্ষণিক আইনশৃ্খৃলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি করা। পীরের জিহাদী শিষ্যদের রাতে ঘোড় দৌড় প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এক পর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন শরিয়াহ আইন অনুযায়ী ওই এলাকা শাসিত হবে। এখানে চলবে তার আইন ও শাসন। যা রাষ্ট্রের ভেতর মিনি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করেন তৎকালীন ওসি সাহাবুদ্দিন ও এসপি নুরুল আনোয়ার। মাত্র বছর তিনেকের মধ্যেই গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন পীর মতিউর। একপর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন তার-ওই এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের চার ভাগের একভাগ দিয়ে দিতে হবে তার কোষাগারে যা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক উসুল হিসেবে সবাইকে মানতে হবে। নইলে গর্দান যাবে এই আইন অমান্যকারীদের। এতে গোটা এলাকার কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন কিশোরগঞ্জের এসপি নুরুল আনোয়ারের ভাষ্যমতে- দেশে ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্ঠীর সশস্ত্র তৎপরতার ওটাই ছিল প্রথম বহির্প্রকাশ। ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে ॥ ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। সকাল ১০টার দিকে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওয়াচার (কং-৫২৭) জোয়াদ আলী পীর মতিউর রহমানের আস্তানায় গোপনে প্রবেশ করেন। পীরের লোকজনের সন্দেহ হলে তাকে আটকে রাখা হয়। ফিরে না আসায় জোয়াদ আলীর পরিচিত পাকুন্দিয়া বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সাহেদ উদ্দিন মুন্সীর কর্মচারী বিশ্বনাথ কুণ্ডু ওরফে বিশু পরের দিন ওই আস্তানায় যান। পীরের নির্দেশে তাকেও আটক করা হয়। ১১ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে আটকদের মুক্ত করার লক্ষ্যে তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল খালেকের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ, পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদী থানা পুলিশ তিনটি গাড়ি নিয়ে ওই পীরের আস্তানায় হানা দেয়। ওই সময় মতিউরের অনুসারীরা তাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করতে থাকে। তাদের গুলিতে পুলিশ সদস্য মোঃ মহব্বত আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পীরের লোকজন পুলিশের গাড়িসহ লাশও তাদের জিম্মায় নিয়ে নেয়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় পুলিশ পিছু হটে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়। তবে এলাকার বয়স্ক লোকজন এ ঘটনায় ভিন্নমত পোষণ করে জানান, তাদের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। তারপর রাতেই তৎকালীন পুলিশ সুপার নূরল আনোয়ার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে পীরের আস্তানাসহ পুরো শিমুলিয়া গ্রাম ঘিরে রাখেন। মধ্যরাতে মাইকে পীরের আস্তানা থেকে ঘোষণা আসে- পুিলশ চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে ফিলেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। এ জিহাদের মাধ্যমেই গোটা বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হবে। পীর তার শিষ্যদের সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দেন। শিমুলিয়া গ্রামের আস্তানা থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণায় পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ১২ ডিসেম্বর ভোর থেকে শুরু হয় পুলিশের আক্রমণ, গুলিবর্ষণ। তখন আবারও মাইকযোগে এলাকাবাসীকে প্রতিরোধের আহ্বান জানান পীর মতিউর। এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের মোট ১৪ প্লাটুন পুলিশ অংশ নেয়। প্রথমে পীরের অনুসারীদের দখলে থাকা শিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘরটি দখল করে নেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সুপারের গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক গুলিতে নিহত হন। গুরুতর আহত হন হযরত আলী নামের আরেক পুলিশ সদস্য। ৪০ রাউন্ড গুলিসহ তার রাইফেলটি খোয়া যায়। ওই বিদ্যালয়ের কক্ষে পুলিশের ভয়ে পীরের মুরিদরা আশ্রয় নিয়েছিল। উভয়পক্ষের গোলাগুলির পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এম এ খালেকের নেতৃত্বে পুলিশ চূড়ান্ত আক্রমণ করে পীর মতিউরের আস্তানায় এবং পুরোপুরি দখলে নিয়ে নেয়। নিহত পুলিশ সদস্য মহব্বত আলীর লাশ উদ্ধারসহ পুলিশের তিনটি গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। তিন দিনের অভিযানে দুই পুলিশ, পীরের বড় ছেলেসহ মোট ২১ জন নিহত হন। এক পর্যায়ে আস্তানা ছেড়ে পালানোর সময় ৪৮ জন সশস্ত্র শিষ্য নিয়ে গুলিবিদ্ধ পীর মতিউর রহমান টোক এলাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এদিকে ১৩ ডিসেম্বর সার্বিক পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণে আসার উপক্রম হয়-তখন শিমুলিয়া গ্রামে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একে একে পুড়ে যায় অনেক বাড়িঘর। বিরানভূমিতে পরিণত হয় গোটা এলাকা। এ নিয়ে গোটা এলাকায় চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়। আগুনের লেলিহান শিখা দূর দূরান্ত থেকেও দেখতে পেয়ে মানুষ আঁতকে ওঠে। সেই তাণ্ডবলীলার খবর মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপার দুদিন পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিমুলিয়া পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি পীরের হামলার বর্ণনার পাশাপাশি অগ্নি সন্ত্রাস চালানোর বিষয়ে জানতে চান প্রকাশ্যেই। এতে তৎকালীন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আলমগীর, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজুলল করিম ফালু ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত একেএম শামসুল হক গোলাপ মিঞার উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি এরশাদ আগুন লাগার নেপথ্যনায়কদের বিষয়ে জানতে চান। এতে জাতীয় পাার্টির নেতৃবৃন্দ কিছুটা বিব্রতবোধ করায় একেএম শামসুল হক, গোলাপ মিঞা ও এক বৃদ্ধা স্পষ্ট করে এ জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। তিনি এ ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। এসব তদন্তে উঠে আসে- এই পীরের উত্থান ঘটে কিশোরগঞ্জ জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান খান ও জেলা জাপা নেতৃবৃন্দের মদদে। এ ঘটনায় পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে ও নাম না জানা আরও ৪০০ লোককে আসামি করে হত্যা, জখম, সরকারী কাজে বাধা, সরকার উচ্ছেদ, অস্ত্র ছিনতাই ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ এনে মামলা করে। পুলিশের পাশাপাশি বিচারপতি বারী কমিশনের তদন্তও চালানো হয়। এসব তদন্তে পীরের আস্তানা থেকে প্রথমে উস্কানিমূলক হামলায় পুলিশের সোর্স ও গাড়ির চালক নিহত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এছাড়া অপারেশন শেষ হবার পর নিরীহ গ্রামবাসীর বাড়িঘরে আগুন লাগানোর জন্য সাবেক এসপি আনিসুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পুলিশ সদস্যদের সন্দেহের আওতায় আনা হয়। সে সময়ের কিশোরগঞ্জের এসপি নুরুল আনোয়ার দায়িত্ব নেয়ার আগে সেখানকার এসপি ছিলেন আনিসুর রহমান। তিনি পরে নরসিংদী জেলায় যোগ দেন এবং শিমুলিয়ার অপারেশনের দ্বিতীয়দিন ২ প্লাটুন পুলিশ নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপাড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পীরের জঙ্গী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ায় এসপি নুুরুল আনোয়ারকে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত করার নির্দেশ দেয়া হলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তা এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং কোণঠাসা করে রাখা হয়। উপরন্তু মুসলিম মিল্লাতকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করার দায়ে ২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তাকেসহ ৭৩ ব্যাচের আরও অসংখ্য অফিসারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যদিও ২০০৭ সালে তিনি চাকরি ফিরে পান এবং আইজিপি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল আনোয়ার বলেন- মূলত সে সময়ে সারাদেশের উগ্রপন্থী, সর্বহারা ও দুর্বৃত্তদের সমন্বয়ে মতিউর রহমান ইসলামী লেবাসের আড়ালে গড়ে তোলেন মুসলিম মিল্লাত নামের জঙ্গী সংগঠন। আফগান ফেরত মুজাহিদদের নিয়ে তারই হাতে বাংলাদেশে গোড়াপত্তন ঘটে জঙ্গীবাদের। সঙ্গে ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক রশীদের ফ্রিডম পার্টির লোকজন। তার বড় প্রমাণ ধরা পড়ে শিমুলিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণার কদিন পরই শিমুলিয়ায় প্রকাশ্যে জনসভার ঘোষণা দেয় ফারুক রশীদ ও জয়নাল আবেদীন। তারা সেখানে যাবার পথে মঠখোলা ব্রহ্মপুত্র নদী পাড় হওয়ার সময় এলাকাবাসী বাধা দিলে ওই গাড়ি বহর থেকে গুলি করে একজনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও একটি মামলা হয়। সেদিনের সেই ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় পাকুন্দিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম ইলিয়াছ কাঞ্চন আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট হুমায়ুন, ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেনু, হারুন রশীদ, রঙ্গু মেম্বার, হিরু ও ফরিদের নেতৃত্বে এলাকাবাসী রুখে দাঁড়ান এবং ফারুক রশীদের গাড়ি বহরে হামলা চালান। এ সময় কর্নেল ফারুকের গুলিতে নিহত হন এক যুবক। তাদের প্রতিরোধের মুখে সেদিন বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ভিন্ন পথে শিমুলিয়া ছেড়ে ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হয়।
×