ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জমির দাম নির্ধারণ

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

জমির দাম নির্ধারণ

নতুন বছর আসছে। বছরের শুরু থেকেই যাতে জমির নতুন দাম নির্ধারণ সম্পন্ন হয় তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণত দু বছর পরপর জমির দাম পুনর্নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। তবে সব সময়ই দেখা যায় সরকার নির্ধারিত দাম অনেকেই মানতে চান না। এ নিয়ে চলে বিভিন্ন কারসাজি। তার ওপর রয়েছে ক্রয়কৃত জমি রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপার। সেখানেও ইচ্ছাকৃতভাবে অনিয়ম করা হয়। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। জমির দাম নির্ধারণ সহজ কাজ নয়। এই কঠিন কাজটি নিয়ে জটিলতাও সৃষ্টি করা হয়। জমির দাম নির্ধারণের জন্য যে মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় সেগুলো পরবর্তীকালে নতুন দাম নির্ধারণের সময় যথাযথভাবে অনুসৃত না হলে সমস্যা দেখা দেয়া স্বাভাবিক। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে জমির যে মূল্য নির্ধারণ করা আছে তা চার বছর আগে করা। অবশ্য সারাদেশে জমির সরকারী মূল্য এক নয়। স্থান, শ্রেণী অনুযায়ী একেক জায়গায় একেক দাম। সরকারীভাবে মৌজাভিত্তিক জমির শ্রেণী হিসেবে দাম নির্ধারিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চার বছর আগে নির্ধারিত মূল্যে জমি বেচাকেনা চলতে থাকার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তাছাড়া কোন কোন এলাকায় সরকারী মূল্যের চেয়ে বেশি দামে জমি বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা পড়েন বিপাকে। আবার কোন কোন এলাকায় সরকারী মূল্যের চেয়ে প্রকৃত মূল্য কম হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন বিক্রেতারা। এ কারণে সরকার নতুন করে জমির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। সারাদেশে সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর উদ্দেশ্যে পাঠানো জমির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন অধিদফতরের আদেশে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে জমির নির্ধারিত বাজারমূল্য ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। বাজারমূল্য বিধিমালা সর্বশেষ সংশোধনী-২০১৫ অনুযায়ী ২০২১ ও ২০২২ সালের জন্য স্থাবর সম্পত্তির বাজারমূল্য নির্ধারণ অতীব জরুরী। সম্পত্তির সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা ২০১০-এর সংশোধনী অনুসারে ২০২১-২২ সালের জন্য নির্ধারিত সর্বনিম্ন বাজারমূল্য চূড়ান্ত করে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ এ থেকে স্পষ্ট যে, নতুন বছরের প্রথম মাস থেকেই যেন জমির নতুন মূল্য কার্যকর করা যায় সেজন্য কর্তৃপক্ষ দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে জমি নিবন্ধনের ফি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আবার ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ফি ও অন্যান্য চার্জ দিতে হয়। রেজিস্ট্রেশন করতে অধিক খরচের কারণে মানুষ প্রকৃত মূল্য গোপন করে কম দাম দেখিয়ে কম খরচে রেজিস্ট্রেশন করছে। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিক্রেতার বৈধ অর্থ অবৈধ হচ্ছে। আবার ক্রেতাও তার সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন করছে। রেজিস্ট্রেশন খরচ কমিয়ে জমির দাম নির্ধারণ করা হলে সব পক্ষই স্বচ্ছতার সঙ্গে দলিল করবে। তাতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। দেশবাসীর প্রত্যাশা জমির দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবদিক বিবেচনা করা হবে এবং সেইসঙ্গে চার বছর আগে নির্ধারিত দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবধান থাকবে। অর্থাৎ, আকাশ-পাতাল পার্থক্য থাকবে না জমির দামের ক্ষেত্রে। পরবর্তী পদক্ষেপ হলো সরকার নির্ধারিত দামেই জমি বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করা। জমির ক্রেতা-বিক্রেতা আইনের প্রতি সম্মান দেখাবেন সেটিই প্রত্যাশিত।
×