ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সংস্কৃতিই পূর্ব বাংলার মানুষকে ‘পাকিস্তানী’ হতে দেয়নি ॥ শাহেদ

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

সংস্কৃতিই পূর্ব বাংলার মানুষকে ‘পাকিস্তানী’ হতে দেয়নি ॥ শাহেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি জাতির যাপিত জীবনের স্রোতধারায় বেড়ে ওঠে সংস্কৃতি। তাই সহজাতভাবে সংস্কৃতি গড়ে ওঠে; আরোপিতভাবে সংস্কৃতি বানানো যায় না। সেই সুবাদে বাঙালীর সংস্কৃতি জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিস্তৃত। সেখানে রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি, সমাজ থেকে ধর্ম। এর যা কিছু বাঙালী সংস্কৃতির প্রতিকূল, তার স্থান এখানে হবে না। পাকিস্তানী শাসনামলে বাঙালীর স্বাধিকার আদায়ের দুই দশকের সংগ্রামকে তাই চিহ্নিত করা যায় ভাষা আন্দোলন নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পরিণতিরূপে। সংস্কৃতির কারণেই পাকিস্তানকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি এদেশের মানুষ। সংস্কৃতিই পূর্ব বাংলার মানুষকে ‘পাকিস্তানী’ হতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একক বক্তৃতায় কথাগুলো বলেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। একাডেমির ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সবার আগে সংস্কৃতি সবার সঙ্গে সংস্কৃতি’ শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। হেমন্তের সকালে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্্যাপিত হয়। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সজ্জিত হয় আয়োজন। বিরাজ করে উৎসবমুখর আমেজ। একাডেমির কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বয়ে যায় প্রাণের প্রবাহ। সকালে লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচী। একই সঙ্গে উড্ডয়ন করা হয় বাংলা একাডেমির পতাকা। এরপর শোভাযাত্রাসহকারে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি। ভাষাশহীদদের প্রতি ভালবাসা জানানোর পর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র সমাধিতে। সবার আগে সংস্কৃতি সবার সঙ্গে সংস্কৃতি শীর্ষক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বক্তৃতা করেন রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্প্রতি প্রয়াত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সুরক্ষা ও বিকাশের জন্য। ছয় দশকের পরিক্রমায় আমরা এ কথা দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারিÑ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সুরক্ষা বিধানের একাডেমিক দায়িত্ব পেরিয়ে বাংলা একাডেমি আজ আক্ষরিক অর্থেই বাঙালী জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান। সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, সংস্কৃতি এক চলমান ও জীবন্ত বিষয়। একে কোন সংজ্ঞায় আবদ্ধ করা যায় না। গতিময়তাই এর নান্দনিকতা। বাংলা একাডেমি বাঙালীর জীবনে সংস্কৃতির সংগ্রামকেই সার্থক করে তুলেছে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যতদিন বাংলাদেশ স্থিত থাকবে, ততদিনই বাংলা একাডেমি তার প্রকৃত মহিমায় উজ্জ্বল থাকবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক নূরুন্নাহার খানম।
×