ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার চিকিৎসায় একমাত্র পথ প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ২৩ নভেম্বর ২০২০

ক্যান্সার চিকিৎসায় একমাত্র পথ প্রতিরোধ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, ২০৩০ নাগাদ ভারতবর্ষে প্রতিবছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। বর্তমান বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের মধ্যে ৯৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এবার স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে আক্রান্তের হার এত কেন? বিশ্ব পরিসংখ্যান বলছে ২৫-৩০ ভাগ ক্যান্সারের মূল কারণ হচ্ছে ধূমপান, ৩০-৩৫ ভাগ খাদ্যাভাস এবং ওজন বৃদ্ধি। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ, রেডিয়েশন, ইনফেকসন (জীবাণু সংক্রমণ), হেরিডিটারি (বংশানুগত), রাসায়নিক ইত্যাদি কারণে ৫-১০ ভাগ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যান্সার ও মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার সারা বিশ্বে প্রথম স্থান দখল করে আছে এবং এতে মৃত্যুর হারও অনেক বেশি। ক্যান্সার হ্যাজ এ্যান্সার দুরারোগ্য এই ব্যাধি, মানে ক্যান্সার হলেই কি তাহলে মৃত্যু হবে? সত্যি কি ‘ক্যান্সার হ্যাজ নো এ্যান্সার?’ বদলে গেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। ক্যান্সার নিয়ে নতুন নতুন গবেষণা চলছে গোটা বিশ্বজুড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বলা যায় ক্যান্সার হ্যাজ নো এ্যান্সার নয়। এক কথায় যদি বলি তা একদমই নয়। আমি বলব, ক্যান্সার হ্যাজ এ্যান্সার। এ জন্য চাই সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তা প্রতিটি ঘরে ঘরে। যত আগে রোগ ধরা পড়বে, তত সেটি সম্পূর্ণ নিরাময় হওয়ার সুযোগ থাকবে। জানতে হবে ক্যান্সারের মূল লক্ষণগুলো, যেমন দীর্ঘদিন ধরে কাশি ও কাশির সঙ্গে রক্ত বের হওয়া, শ্বাসকষ্ট, মলদ্বার দিয়ে রক্ত ক্ষরণ, দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথা কিংবা মহিলাদের স্তনে হঠাৎ একটি শক্ত পিণ্ড (lump), যা আস্তে আস্তে স্তনের আকার এবং প্রকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে অথবা দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর এবং এর সঙ্গে ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। আমরা যদি এই সমস্ত লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হই এবং নিয়মিত (বছরে একবার) ক্যান্সার স্ক্রিনিং করানো হয়, তবে ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণ সম্ভব এবং শুধু তা সার্জারি করেই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। অসুখ যত বিলম্বে ধরা পড়বে ক্যান্সার তত শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকবে এবং ফলাফল খারাপ হবে। এর ফলে দীর্ঘদিন রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপি লাগবে, ফলে চিকিৎসা ব্যয়বহুল হবে। খাওয়া দাওয়া এবার আমি আসব, খাদ্যাভাস চর্চার ব্যাপারে। কি খেতে হবে এবং কি কি খাওয়া বর্জন করতে হবে, এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত রকম ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় খাবার, রেডমিট, চিনি প্রভৃতি খাদ্য তালিকা থেকে কমাতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে সবুজ শাক-সব্জি, ফলমূল ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ওজন বাড়তে দেয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে কোন ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়া চলবে না, এতেও ক্যান্সার হতে পারে। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে তো সাধারণ মানুষের পিজ্জা বা বার্গার খাওয়ার সুযোগ নেই। তবে সেখানে কেন ক্যান্সার বাড়ছে? তার কারণ খাদ্যোৎপাদনে বা প্রক্রিয়াকরণে এবং সংরক্ষণেও লাগামহীন রাসায়নিক, কীটনাশক ও রঙের ব্যবহার চলছে। এসব বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমাদের সবাইকে সামাজিক স্তরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সুস্থ জীবনযাপন ও সুস্থ খাদ্যাভাসই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারবে। আর সেটাই হবে ক্যান্সার গতিরোধের একমাত্র লক্ষ্য। ২০৩০ এর ভবিষ্যদ্বাণী যদি পাল্টাতে হয় তবে প্রতিরোধই হছে একমাত্র পথ আর তার জন্য চাই যথেষ্ট সচেতনতা। লেখক : ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, রুবী জেনারেল হাসপাতাল ও ক্যান্সার রিচার্স ইনস্টিটিউট, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
×