জনকল্যাণে দায়িত্বশীলতার কোন বিকল্প নেই। জনকল্যাণমূলক সরকার দেশে গত মার্চে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই তার দৃষ্টান্ত রেখে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মার্চ থেকেই বন্ধ রয়েছে। স্কুল কলেজ খুলে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুঝুঁকির ভেতরে ঠেলে না দেয়ার সিদ্ধান্তটি স্বস্তি দিয়েছে অভিভাবকদের। যদিও শিক্ষার্জনে সমস্যা দেখা দিয়েছে, কিন্তু জীবনের চাইতে বড় কিছু হতে পারে না। তাই শিক্ষাবর্ষ বিনষ্ট না হলেও পড়ালেখার বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে- একথা স্বীকারে দ্বিধা নেই। বর্তমান সরকারের বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার দৃষ্টান্ত বরাবরই দেশবাসী প্রত্যক্ষ করে আসছে। বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ডাকা জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের খুব কষ্ট হচ্ছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। করোনাভাইরাস একটা সংক্রামক ব্যাধি। এখনও এটার চিকিৎসা বের হয়নি। তারপরও আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, মানুষ ভাল হচ্ছে। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে এই ঝুঁকিটা আমরা ছেলেমেয়েদের জন্য কেন নেব? ছেলেমেয়েদের তো আমরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ঠেলে দিতে পারি না।
ইতোমধ্যে সরকার এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আগাম ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছে। বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে বলে ধারণা করা যায়। ইতোমধ্যে দেশে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এমনটাই অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, ভাইরাস সংক্রমণের নবপর্যায়ে প্রবেশ করছে দেশ। এই সময়পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজের সুরক্ষায় করণীয় কড়াকড়িভাবে পালনের আবশ্যকতা রয়েছে। এখানে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমরা এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে পাঠক তথা দেশবাসীর কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলার। মাস্ক পরা এবং একে অপরের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। তাছাড়া ঘন ঘন অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ধরে দুই হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে।
আমাদের স্মরণে রয়েছে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে পরবর্তী তিনটি মাস প্রায় প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী কোন না কোন আয়োজন বা বিবৃতিতে দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার তাগিদ দিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে তিনি বক্তব্যের শুরুতেই দেশবাসীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সবাইকে চলতে এবং মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে পৃথিবীজুড়ে। এখন আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। সেই ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন।
মৃত্যুঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে করোনাপূর্ব জীবনযাপনে ফিরে গেলে শেষাবধি ক্ষতিই ডেকে আনা হবে। শুধু নিজেরই নয়, আপনজনদেরও। একইভাবে সমাজের সর্বস্তরে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মানুষকে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়েছে। তার মানে এ নয় যে, করোনা সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে। গত কয়েক দিন ক্রমাগতভাবে সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাই বেপরোয়া চলাফেরা সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, এমনটি ভেবে প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নবেম্বরের মাঝামাঝি এসে দেশে করোনা পরিস্থিতির বাস্তবচিত্র অতিঝুঁকিপূর্ণ, এতথ্য অবশ্যই আমলে নিতে হবে। এখন আমরা সংক্রমণের অতিঝুঁকির মধ্যেই রয়েছি। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে পরিপূর্ণভাবে আগের জীবনযাপনে ফিরে গেলে স্বল্পতম সময়ের ভেতর পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সাবধানের বিকল্প নেই।