ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিজ বাড়ি হাসপাতাল করোনামুক্ত বাংলাদেশ’

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৭ নভেম্বর ২০২০

‘নিজ বাড়ি হাসপাতাল করোনামুক্ত বাংলাদেশ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এটি ছিল ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে বিনামূল্যে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাজধানী থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় ঘুরে বেরিয়েছেন তারা। দেশের প্রখ্যাত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে এই সেবা দলটি রাজধানী থেকে শুরু করেছিল তাদের কার্যক্রম। পরে পর্যায়ক্রমে ১৪টি জেলায় এই সেবা দিয়েছে। ‘নিজ বাড়ি নিজ হাসপাতাল, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকল্পটির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ সেবা পেয়েছে। প্রফেসর ডাঃ মোহাম্মদ রাশিদুল হাসানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ইনজিনিয়াস হেলথ কেয়ার ও সৌহার্দ্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রকল্পের অধীনে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা সমাপ্ত হলেও অক্সিজেন সেবাটি চালু রাখা হয়েছে বলে জানান প্রকল্পের কর্মকর্তা রবিউল আলম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি এ কার্যক্রম শুরু করা হয় শ্যামলী খিলজি রোড থেকে। পরে রাজধানীতে আরও কয়েকটি ক্যাম্প পরিচালিত হয়। ঢাকার বাইরে প্রথম ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় গোপালগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকার বাইরেও বিনামূল্যে সেবার লক্ষ্যে জেলা ভিত্তিক দুইদিনের ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় ১৪ জেলায়। প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জন দফতর, বিএম’র জেলা শাখাসমূহ এবং দেশের পাঁচটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি- অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিমেড-ইউনিহেলথ, ইনসেপ্টা ফার্মা, এ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এতে সহযোগিতা করে। গোপালগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া এই হেলথ ক্যাম্পের ভ্রাম্যমাণ দল দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়। এ প্রকল্পটি সর্বমোট ২৮,১১৯ জনকে তাদের এ সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর রবিউল আলম। তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে ঢাকায় সেবাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৮,৫০৭ এবং ঢাকার বাইরে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে এই সেবাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৯,৬১২ জন যারা সাধারণভাবে তিনদিনের ওষুধ পেলেও কোথায় পেয়েছেন সাত, পনেরো, এক মাস এমনকি দুই মাসের ওষুধও দিয়েছেন কোন কোন গরিব ও দুস্থ রোগীকে। করোনার প্রাদুর্ভাব এলাকাব্যাপী কেমন বলতে গিয়ে তিনি বলেন হ্যাঁ, করোনা আছে। ঢাকার বাইরে চৌদ্দ জেলায় মোট ৩১ জনকে আমরা ফেভিপিরাভির দিয়েছি আর ঢাকায় এ পর্যন্ত আমরা তা দিয়েছি মোট ৬৫ জনকে। নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে গিয়ে প্রতিটি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ এবং সন্দেহভাজন রোগীর তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমের রোগীদের স্থানীয় সেন্টারে বিভিন্ন টেস্টসহ রোগীদের বিনামূল্যে এ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া শুরু করে এ প্রকল্পটি। প্রকল্পের আওতায় রোগীরা পেয়েছে বিনামূল্যে ডাক্তারী পরামর্শ এবং করোনা শনাক্তের সুবিধার্থে নানাবিধ ডায়াগনস্টিক টেস্ট যেমন বুকের এক্স-রে, সিবিসি, স্পাইরোমেট্রি, আরবিএস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল এবং ইসিজি। করোনার আরও সঠিক শনাক্তকরণের জন্য আইইডিসিআর এর সহযোগিতায় বিনামূল্যে আরটিপিসিআর টেস্টও প্রদান করেছে। করোনা বা অন্য যে কোন রোগের ক্ষেত্রে অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে রোগীরা ঘরে বসেই ২৪ ঘণ্টার অক্সিজেন সেবা পেয়েছে বিনামূল্যে যা এখনও চলমান রয়েছে। অক্টোবরের ৭ ও ৮ তারিখে গোপালগঞ্জ থেকে এ ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প শুরু করে একের পর এক মেডিক্যাল টিমটি কাজ করে পিরোজপুর, খুলনা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মাগুড়া ও ফরিদপুর। ১৪তম জেলা হিসেবে তারা কাজ করে বরিশালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে।
×