ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চোখ বন্ধ পরিবেশ অধিদফতরের

লকডাউন কাজে লাগিয়েছে পাহাড়খেকোরা

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

লকডাউন কাজে লাগিয়েছে পাহাড়খেকোরা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষায় দেয়া হয়েছিল লকডাউন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়খেকোরা কেটেছে পাহাড়। চোখ বন্ধ করে রেখেছে পরিবেশ অধিদফতর। কাটা পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে মৃত্যুকূপ থেকে রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। নগরীর ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, চূড়ায় অথবা কাটা পাহাড়ের কোলে থাকাদের সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন করছে মাইকিং। আশ্রয় দিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ভবনসহ ১৯টি আশ্রয়স্থল। অভিযান পরিচালনা করেও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা স্থায়ীভাবে মৃত্যুমুখে থাকা এসব পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে এনে রাখতে পারছে না। এর কারণ হলো মোবাইল ফোনে হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে ভয় দেখাচ্ছে পাহাড়খেকোরা। অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়খেকোদের অবৈধ তৎপরতার কারণে হতদরিদ্র শ্রেণী বিনা ভাড়ায় পাহাড়ের চূড়ায়, কোলে, কিংবা ধাপে বসবাস করছে চট্টগ্রামে। পরিবেশ অধিদফতরের নাকের ডগায় পাহাড় কেটে চুয়েটের এক শিক্ষক যেমন ৫তলা বিল্ডিং করেছেন, তেমনি পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা ৯০ এর দশকে পাহাড় কেটে প্লট নির্মাণ করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। এসব পাহাড়ের পাশেই পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবার পরিজনসহ বসবাস করলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেই। ভূমিদস্যুরা পাহাড় কাটছে ঠিকই। নিশ্চুপ রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে হতদরিদ্র পরিবার পরিজনকে সরিয়ে নিতে একের পর এক অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৬ সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এদের তত্ত্বাবধানে যেমন চলছে মাইকিং, তেমনি চলছে সরিয়ে নেয়ার কাজ। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে কিন্তু রাতের আঁধারে আবারও পাহাড়খেকোদের মোবাইল ফোনের হুমকিতে ফিরে আসছে মৃত্যুকূপে হতদরিদ্ররা। অন্যথায় পাহাড় ছেড়ে চলে যেতে হবে এ শ্রেণীর মানুষকে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ও জেলা প্রশাসনের তালিকায় থাকা পাহাড়গুলোর মধ্যে রয়েছে- মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, এ কে খানের পাহাড়, ওয়াসার টাঙ্কির পাহাড়, আমিন জুট মিল সংলগ্ন পাহাড়, রৌফাবাদের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়, উত্তর ও দক্ষিণ খুলশীর পাহাড়, পাহাড়তলীর ইস্পাহানি ও রেলওয়ের পাহাড়, ফিরোজশাহ এলাকায় থাকা ফয়’স লেকের ঝিলের পাহাড়, জিয়া নগর পাহাড়, মধ্যমনগর পাহাড়, মুজিবনগর পাহাড়, শান্তিনগর এলাকার পাহাড়, কৈবল্যধামের পাহাড়, বিশ^ কলোনি এলাকার পাহাড়, মুরাদপুরের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পাহাড়, বায়েজিদ চন্দ্রনগর পাহাড়, বাংলা বাজার পাহাড়, বায়েজিদের সিডিএ লিংক রোডের দুই পাশের ঝুঁকিপূর্ণ ১৬টি পাহাড়, মধুশাহ পাহাড়, সীতাকু-ের সিলিমপুর পাহাড়সহ লকডাউনে ভূমিদস্যুদের বুলডোজারে কর্তনকৃত পাহাড়তলী, হাটহাজারী ও সীতাকু- মৌজায় থাকা পাহাড়গুলো অনেকটা মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। ফলে অতি বৃষ্টি অথবা নিম্নচাপের কারণে ভারি বর্ষণের হাত থেকে পাহাড়ে থাকাদের রক্ষা করতে জেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে হতদরিদ্র শ্রেণীকে সরিয়ে নিতে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
×