ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা

ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার দৃষ্টান্ত সমাজে খুব একটা দেখা যায় না। তাই এমন কোন সতর্ক উদ্যোগের সংবাদ জানা গেলে মানুষ স্বস্তি বোধ করে। শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানায়। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন গুদামে নানা ধরনের রাসায়নিক বহু বছর ধরে রক্ষিত থাকলেও নিমতলির মতো একাধিক ট্র্যাজেডির পরও এখনও বহু গুদাম খালাস করা হয়নি। এমন বাস্তবতায় চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য নিলাম ও ধ্বংসের ঘোষণা এলো, যা আকস্মিক হলেও সাধুবাদযোগ্য। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্যই মানুষের ধন্যবাদ পাবে। যুগপৎ বিস্মিত ও শঙ্কিত হতে হয় এমন তথ্য জেনে যে, প্রায় ৩০ বছর আগের কেমিক্যাল পণ্যসামগ্রীও বন্দরের নির্দিষ্ট ‘পি’ সেডে পড়ে রয়েছে। লেবাননের বৈরুত বন্দরে জাহাজে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে অনেকের দৃষ্টি পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বন্দরের ভেতরে কেমিক্যাল পণ্যের গুদাম ‘পি’ সেড ও তৎসংলগ্ন এলাকার কেমিক্যাল দ্রব্যাদির তালিকা প্রস্তুত করেছে। লেবাননে বিস্ফোরণের পর গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও এ সব ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্য দ্রুত সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমসকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেও বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যাদি ধ্বংস করার তাগাদা দেয়া হয়েছে। সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা সকল রাসায়নিক দ্রব্য ও পণ্যসামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করেছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর নিলামযোগ্য পণ্যসামগ্রী নিলামের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানিকারকদের প্রত্যেককে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের আমদানিকৃত রাসায়নিক পণ্যসামগ্রী খালাস করে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এসব তৎপরতা নিঃসন্দেহে দায়িত্বশীলতারই প্রকাশ। চট্টগ্রাম বন্দরের ‘পি’ সেডে থাকা বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্যাদির কয়েকটি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের মালিকানাধীন। খুব ভাল হতো যদি ওইসব শিল্পগ্রুপ স্বপ্রণোদিত হয়েই দ্রুত ক্ষতিকর রাসায়সিক অপসারণ কিংবা নিলামের বিষয়টি উত্থাপন করত। তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল হতো। আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতির বিষয়ে সদা সতর্ক থাকবে এবং প্রয়োজনে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। লেবাননের বৈরুতে রাসায়নিক ভর্তি জাহাজে বিস্ফোরণের কারণে বহু মানুষের মৃত্যুই ঘটেনি, কয়েক লাখ মানুষ গৃহহারাও হয়েছে। আমরা সম্পাদকীয়তে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলাম যে, এ বিস্ফোরণ থেকে বিশ্বের শিক্ষা নেয়ার আছে। রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্য মানববসতি থেকে দূরবর্তী অবস্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সুরক্ষিত রাখা চাই। তা না হলে এ ধরনের মর্মান্তিক মানবিক বিপর্যয় বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের সন্নিকটে বসবাসকারী মানুষ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের জন্য নিশ্চয়ই স্বস্তি বোধ করবে। তবে একইসঙ্গে এ কথা বলাও জরুরী যে, রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে দেশের সর্বত্রই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের নজরদারিও আবশ্যক। তাই শুধু বন্দরের রাসায়নিকের স্বল্পসময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণই নয়, দেশের সব স্থানে দাহ্য পদার্থ, জ্বালানি ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরী। রাসায়নিক দ্রব্যাদি যথাযথভাবে রাখার জন্য সেডের সংস্কার করার কথাও বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। বলা বাহুল্য, একটি বন্দরের সার্বিক ব্যবস্থাপনারই অংশ এটি। বন্দরের নিরাপত্তার সঙ্গে বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি হ্রাসে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।
×