ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও গ্রেফতার হয়নি সেই চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২৬ আগস্ট ২০২০

এখনও গ্রেফতার হয়নি সেই চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ চকরিয়া হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির ঘটনায় মা মেয়েকে কোমরে রশি দিয়ে টেনে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হলেও এখনও সেই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আটককৃতরা হচ্ছে- হারবাং বিন্দারখালীর মাহমুদুল হকের পুত্র নজরুল ইসলাম, ইমরান হোসেনের পুত্র জসিম উদ্দিন ও জিয়াউল হকের পুত্র নাছির উদ্দিন। চকরিয়া থানা পুলিশ জানায়, গরু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মা মেয়েকে প্রকাশ্যে রাস্তায় কোমরে রশি দিয়ে টেনে নির্যাতনের ঘটনায় তাদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে গরু চুরির ঘটনায় জেলে থাকা নির্যাতিত মা মেয়েকে সোমবার দুপুরে জামিন দিয়েছে চকরিয়া আদালত। এর আগে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত টিম দুপুরে আলোচিত ঘটনার ঘটনাস্থল হারবাং পহরচাঁন্দা এলাকা পরিদর্শন করেছে। তদন্ত টিমের প্রধান কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শ্রাবস্তী রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত টিম সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় তদন্ত টিমের দুই সদস্য চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন ও হারবাং ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপস্থিত ছিলেন। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হবে বলে জানান তদন্ত টিমের প্রধান শ্রাবস্তী রায়। এছাড়া হারবাংয়ে সংগঠিত এ আলোচিত ঘটনা নিয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজের নেতৃত্বে গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও নারকীয় এ ঘটনায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব, গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেন তারা। মা-মেয়েসহ পাঁচ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় আইনগত সহায়তাকারী আইনজীবীদের সঙ্গে সিসিএনএফ এর সদস্যরা সাক্ষাত করেন। বিশেষ করে চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট উমর ফারুখের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি ওইদিন জামিন পাওয়া মা-মেয়েসহ তিনজনের বিষয়টি তুলে ধরেন। এ্যাডভোকেট ওমর ফারুখ ভিকটিমদের সর্বোচ্চ আইনী সহায়তার পাশাপাশি তারা যদি সম্মানহানি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আইনী আশ্রয় নিতে চান, তাতেও তাদের সহযোগিতা থাকবে বলে জানান। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তরফ হতে গঠিত তদন্ত কমিটি সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। অপরদিকে চকরিয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে হারবাং এর ভাইরাল হওয়া ঘটনায় মামলা নিয়েছেন। মামলাটি চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারক রাজীব কুমার দেব। সিসিএনএফ এর কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী ও অপর কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয় সেটা ঠিক করবে বিজ্ঞ আদালত। বিচারের আগেই যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাহলে সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। পুরো বিষয় একটি অমানবিক এবং লোমহর্ষক ঘটনা বলে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করেন। উল্লেখ্য, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিরানুল ইসলামের নেতৃত্বে মা ও মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনার পর রবিবার ওইসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে। চকরিয়া থানার ওসি কোন ধরনের তদন্ত ব্যতিরেকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে মামলা রেকর্ড করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে নির্যাতিত নারী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামসহ চার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দিয়েছে চকরিয়া থানায়।
×