ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউটার্ন নিতে গিয়ে বাস প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৬

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৩ আগস্ট ২০২০

ইউটার্ন নিতে গিয়ে বাস প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ৬

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ময়মনসিংহের ভালুকায় বাস ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দু’জন। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ময়মনসিংহের নান্দাইলে দুই গরু ব্যবসায়ী ও ট্রাকের হেলপার, রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাক-লেগুনা সংঘর্ষে ব্যবসায়ী এবং মুন্সীগঞ্জে এক যুবক রয়েছেন। শনিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদাতাদের। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভালুকা সরকারী ডিগ্রি কলেজ গেট এলাকায় শনিবার সকালে যাত্রীবাহী ইমাম পরিবহন ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই শিশুসহ প্রাইভেটকারের ছয় আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় দুই বাসযাত্রী আহত হন। জানা যায়, সকালে গাজীপুরের নিজ বাড়ি থেকে প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহের ত্রিশাল যাওয়ার পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভালুকা সরকারী ডিগ্রি কলেজ গেট এলাকায় ইউটার্ন করে রাস্তার পূর্বপাশে যাওয়ার সময় ঢাকাগামী ইমাম পরিবহনের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের যাত্রী গাজীপুরের রহুদপুরের আব্দুল করিমের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩৫), বোন নাজমা (২৫) ও হাসিনা খাতুনের শিশু ছেলে হাসিবুল হাসান (৮), আব্দুল মান্নানের স্ত্রী জান্নাতি (৬০) ও ত্রিশালের দরিরামপুরের আব্দুস সালামের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় দুই বাসযাত্রী ফুলপুরের কাতালী গ্রামের হাফিজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন (৩৫) ও হালুয়াঘাটের টিকুরিয়া গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে সোহাগ (২৫) আহত হন। আহতদের ভালুকা ৫০ শয্যা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ, মডেল থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দীর্ঘ চেষ্টার পর বাসের নিচ থেকে প্রাইভেটকারটি বের করে নিহতদের উদ্ধার করে। এ সময় মহাসড়কের দু’পাশে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘটনাস্থল থেকে আহত দুই বাসযাত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং প্রাইভেটকারের ছয় যাত্রীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভালুকা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন জানান, বাসের চালক পলাতক রয়েছে। এদিকে নান্দাইলে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গরু বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় সাতটি গরুও মারা গেছে। শনিবার সকালে তসরা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যবসায়ীরা হলো পাকুন্দিয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার পুত্র মোস্তাকিম ও আব্দুল খালেকের পুত্র সাইদুল ইসলাম। জানা গেছে, শনিবার সকালে ময়মনসিংহ থেকে ২৫টি গরু বোঝাই একটি ট্রাক কিশোরগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। নান্দাইলের তসরা এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকটি একই দিকে যাওয়া আরেকটি কাভার্ড ভ্যানকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকে থাকা গরু ব্যবসায়ী মোস্তাকিম ও সাইদুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় ট্রাকে থাকা আরও তিনজন গুরুতর আহত এবং সাতটি গরু মারা গেছে। নান্দাইল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে বালুবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে চালকের সহকারী মানিক মিয়া নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরের দিকে দশালিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মানিক ঈশ্বরগঞ্জের কাটুলিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র। জানা গেছে, বালুবোঝাই একটি ট্রাক ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে নান্দাইল চৌরাস্তার দিকে যাচ্ছিল। দশালিয়া এলাকায় ট্রাকের চাকা বিস্ফোরিত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের নিচে নেমে যায়। এ সময় ট্রাকে থাকা বালুর নিচে চাপা পড়ে চালকের সহকারী মানিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। রাজশাহী ॥ পুঠিয়ায় ট্রাক ও লেগুনা সংঘর্ষে সদানন্দ ঘোষ (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। শনিবার সকালে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের সেনভাগ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সদানন্দ চারঘাটের শলুয়া গ্রামের যগেন্দ্রনাথ ঘোষের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে তিনি লেগুনায় করে নাটোর যাচ্ছিলেন। জানা যায়, সকালে সেনভাগ এলাকায় নাটোর থেকে রাজশাহীগামী ট্রাকের সঙ্গে বিপরীতগামী যাত্রীবোঝাই একটি লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই লেগুনার যাত্রী সদানন্দ নিহত হন। এ সময় আহত হন আরও চারজন যাত্রী। মুন্সীগঞ্জ ॥ সিরাজদিখানের নিমতলায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় অনিক শেখ নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাত নয়টায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অনিক কেয়াইন ইউনিয়নের বড়ই হাজী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। অনিক শেখের চাচাতো ভাই মোঃ লোকমান হোসেন জানান, অনিক নিমতলা সিঙ্গার কোম্পানির একটি শোরুমে চাকরি করত। ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার পথে মাওয়া থেকে ঢাকাগামী দ্রুত গতির একটি প্রাইভেটকার অনিককে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গাজীপুর ॥ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফেরার সময় মোটরসাইকেল যাত্রী এক স্কুল ছাত্র নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে। শনিবার বেপরোয়া গতিতে চলা বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ বাসসহ চালককে আটক করেছে। নিহতের নাম- মোস্তাকিন অপু (১৬)। সে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানার ভাট্টা নয়াপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে। হতাহত দু’জনই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র এবং কাশিমপুর এলাকায় বসবাস করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কাশিমপুর থানার ওসি মাহবুবে খোদা ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে মোস্তাকিন তার বন্ধু বর্ষণ দত্তের (১৬) সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে নরসিংহপুরের দিকে যচ্ছিল। পথে নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়কের সরুপাইতলী এলাকায় পৌঁছলে মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে তারা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। পরে তারা মোটরসাইকেলে চড়ার জন্য ফিরে আসে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে কিরণবালা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে কাশিমপুর যাচ্ছিল। বাসটি অপর একটি গাড়িকে ওভারটেক করার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সড়কের বিপরীত পাশের মোটরসাইকেলসহ মোস্তাকিন ও বর্ষণকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মোস্তাকিন সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে একই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ ঘটনায় তার বন্ধু বর্ষণ দত্ত আহত হয়। স্থানীয়রা আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় এবং চালকসহ বাসটিকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। পরে চালকসহ বাসটিকে আটক করে। আটক বাসের চালকের নাম সালমান শাহরিয়ার ইমন (২৪)।
×