ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৮ আগস্ট ২০২০

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র তথা সংশোধনাগারে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় তো বটেই, একই সঙ্গে মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক। উল্লেখ্য, এদিন সামান্য চুল কাটতে অস্বীকার করায় কেন্দ্রটির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এক কিশোরকে অহেতুক বকাঝকা ও গালিগালাজ করে। এতে সেই কর্মকর্তাকে মারধর করে কয়েক কিশোর। অতঃপর উক্ত কর্মকর্তা কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়কসহ ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বৈঠক করে শিশু-কিশোরদের শায়েস্তা করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে আবাসিক ভবন থেকে ১৮ কিশোরকে ধরে এনে জানালার গ্রিলের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয়। ফলে প্রায় সবাই মারাত্মক জখম ও আহত হয় এবং তিন কিশোর মৃত্যুবরণ করে। এহেন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পরও উর্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে রাখা হয় সম্পূর্ণ অন্ধকারে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের। ঘটনাটিকে প্রথমে কিশোরদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘর্ষে নিহত বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা হলেও পুলিশী তৎপরতায় অবিলম্বে আসল চিত্র বেরিয়ে আসে। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার খবরও আছে। আছে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশও। কয়েক কিশোরকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে একাধিক। প্রশ্ন হলো এটুকুই যথেষ্ট কিনা? তদুপরি এই তিন কিশোর হত্যার দায় নেবে কে বা কারা? দেশে তিনটি কিশোর সংশোধনাগার তথা উন্নয়ন কেন্দ্র আছে। দুটি ছেলেদের- টঙ্গী ও যশোরে এবং একটি মেয়েদের- গাজীপুরে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কোনটির অবস্থা ও ব্যবস্থাপনাই ভাল নয়। সাধারণত ১৮ বছরের নিচে কোন কিশোর বা কিশোরী অপরাধ সংঘটন করলে আইনের বিধান অনুযায়ী তাদের পাঠানো হয় কিশোর সংশোধনাগার তথা উন্নয়ন কেন্দ্রে। সে অবস্থায় এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মীসহ যে বা যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের অবশ্যই মানবিক ও সহানুভূতিশীল হতে হবে। এর যদি ব্যত্যয় ঘটে তবেই অনর্থ ঘটে। যেমন হয়েছে যশোরে। ইতোপূর্বে ২০১৪ সালে যশোর কেন্দ্রটির অনিয়ম, দুর্নীতি, নিম্নমানের খাবার ইত্যাদির খবর এসেছিল গণমাধ্যমে। অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে টঙ্গী ও যশোর কেন্দ্র থেকে কয়েক কিশোরের পালিয়ে যাওয়ার খবরও আছে। দুঃখজনক হলো, পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হয়নি। অতঃপর তিন কিশোর হত্যার ঘটনাটির যথাযথ তদন্তসহ জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রত্যাশিত। শিশুর প্রতি সহিংসতার মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২০ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫৩ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪৫৭ শিশু। আগের বছরে প্রতিমাসে শিশু নির্যাতনের সংখ্যা ছিল ৩৮১। এর পাশাপাশি বাড়ছে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সময়ে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করার পাশাপাশি শিশু নির্যাতন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা শিশু আইন-২০১৩ বাস্তবায়ন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়ার নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাল্যবিবাহ রোধে প্রণীত আইন, নীতিমালা ও জাতীয় পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
×