ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধরা রাঘব বোয়াল!

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১১ আগস্ট ২০২০

অধরা রাঘব বোয়াল!

ঘৃণ্য মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক উদ্যোগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও থেমে নেই বিষয়টি। একের পর এক মানবপাচার, যাদের মধ্যে রয়েছে অসহায় নারী ও শিশু, চলছেই, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। সর্বশেষ লিবিয়ায় মানবপাচারকারীচক্রের সঙ্গে বাকবিত-ায় জড়িয়ে অন্তত ২৬ বাংলাদেশীর নৃশংস হত্যাকা- এবং থাইল্যান্ডের জঙ্গলে একাধিক দাসশিবিরসহ গণকবর আবিষ্কারের পর আবারও দেশে-বিদেশে আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি। পুলিশী তৎপরতায় কয়েকজনকে গ্রেফতারের খবরও আছে। গ্রেফতারের খবর আছে থাইল্যান্ড, লিবিয়ায়ও। তবে দুঃখজনক হলো, ওই দুটি দেশে গ্রেফতারকৃতরা রীতিমতো হোমড়াচোমড়া, কেউ কেউ মেজর জেনারেল অথবা এমপি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। কিন্তু বাংলাদেশে যাদের ধরা হয়েছে তারা প্রধানত দালাল শ্রেণীর অথবা মধ্যস্বত্বভোগী। অর্থাৎ মানবপাচারচক্রের রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যাদের ধরা হচ্ছে তারা অধিকাংশই চুনোপুঁটি। ফলে কয়েকমাস জেল খেটেই জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। মাদকপাচারকারীদের মতো মানবপাচারকারীদের ক্রসফায়ারে মৃত্যুর খবর নেই। ফলে মানবপাচার থামছে না কিছুতেই। সর্বশেষ মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে অন্তত ৩৮ বাংলাদেশীর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মোট ৩০ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশী। এর জন্য বাংলাদেশ দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মানবপাচারকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া না হলে এটা বন্ধ হবে না। উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেননা, বহু বাংলাদেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস ও আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে নিবন্ধনের বাইরেও দালাল এবং মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এর বাইরেও বিদেশের বাজারে নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। এক হিসাবে হোম রেমিটেন্সের পরিমাণ ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। পোশাক রফতানি আয়ের পরেই এর অবস্থান। তবে প্রবাসী অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য তেমন নীতিমালা ও আইন নেই। বিশেষ করে প্রতারক এজেন্সি ও দালালচক্রের দ্বারা প্রলোভিত হয়ে যেসব পুরুষ-নারী ও শিশু জীবনের সমূহ ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান বিদেশের অজানা-অচেনা গন্তব্যে, তাদের দুঃখ-কষ্ট-মানবেতর জীবন এক কথায় অবর্ণনীয়, অসহনীয়। এসব ক্ষেত্রে বিদেশ-বিভুঁইয়ে জেলখানা ও বন্দী শিবিরে অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুর খবরও আছে। আছে জিম্মি করে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের খবরও। অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানবপাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। তদুপরি বিদেশে নারী ও শিশু প্রেরণের ক্ষেত্রে আরও অধিক মাত্রায় সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
×