ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী আয়ে চমক

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ৭ আগস্ট ২০২০

প্রবাসী আয়ে চমক

ইতোপূর্বে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম এই বলে যে, অন্তত পবিত্র ঈদ-উল-আজহা অর্থাৎ জুলাই ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স পাঠানো অব্যাহত থাকবে। প্রায় অবিশ্বাস্য ঠেকলেও সত্য যে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর সঙ্কটকালেও প্রবাসী আয়ের উর্ধমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। দেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি প্রবাসী আয় আগে আসেনি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। মূলত কোরবানির ঈদ উপলক্ষেই এতই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুলাই মাসে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বন্যা এবং করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে এটি বাংলাদেশকে প্রবল আশাবাদ ও উদ্দীপনায় উজ্জীবিত করেছে নিঃসন্দেহে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রিজার্ভ। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর এই দুঃসময়েও এটি একটি অনন্য অর্জন বৈকি। বর্তমান ক্রান্তিকাল তথা দুঃসময়ে বাংলাদেশের এই রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে ভারতের পরেই স্থান করে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তদুপরি এই পরিমাণ রিজার্ভ পাকিস্তানের দ্বিগুণের বেশি। প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় ধরে এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে অন্তত নয় মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ অর্থ মজুদ থাকতে হয়। সেদিক থেকে করোনার বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অবশ্য রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কষ্টার্জিত প্রেরিত অর্থ, যা বলতে হবে বিশ্বয়কর। করোনার এই ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকালেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও বলিষ্ঠ করতে ইতিবাচক অবদান রাখতে সমর্থ ও সক্ষম হচ্ছেন। উল্লেখ্য, ক্রয়াদেশ ফিরে আসাসহ নতুন কার্যাদেশের ফলে তৈরি পোশাক শিল্পও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতিসহ জাতীয় অর্থনীতিও যখন ঝুঁকির মুখে তখন সরকারসহ জনসাধারণের মুখে নিঃসন্দেহে ব্যাপক প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়েছে প্রবাসী আয়। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের গত বছর থেকে প্রবাসী আয়ে নগদ ২ শতাংশ হারে প্রণোদনাও ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে প্রবাসীদের মধ্যে। এতে বৈধপথে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ বেড়েছে এবং অবৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে হয়রানিসহ বর্ধিত ব্যয় হচ্ছে না। তবে মহামারীর কারণে বিপন্ন অর্থনীতিসহ তেলের দাম একেবারে কমে যাওয়ায় বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমূহ বিপদে রয়েছেন প্রবাসীরা। করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই হয়েছেন চাকরিচ্যুত। অনেকে দেশেও ফিরে আসছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে হবে। তাতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সতর্ক থাকতে হবে মুদ্রার মান সম্পর্কে। গ্রামীণ অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতি যাতে শক্তিশালী হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রফতানি বৃদ্ধিসহ রেমিটেন্স প্রবাহ যাতে অব্যাহত থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর। যাতে বেকার ও কর্মচ্যুত প্রবাসীরা দেশে ফিরে এলে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়।
×