ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টেলি মেডিসিনে আস্থা

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১১ জুলাই ২০২০

টেলি মেডিসিনে আস্থা

বাংলাদেশ এখন করোনা সংক্রমণের চরম দুঃসময় পার করছে। বহুল সংক্রমিত এই রোগটি থেকে সুরক্ষার মূল নিয়ামকই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। দ্রুত ছড়ানো এই করোনা তার আশপাশের মানুষদের সংক্রমিত করতে খুব বেশি সময় নেয় না। যথার্থ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা পেতে আক্রান্ত রোগীদের ছুটে বেড়াতে হয় হাসপাতালে, চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়াতে মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে রোগীরা নিরাপদ দূরত্বে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চিকিৎসাসেবা নিতে অধিকতর মনোযোগী হয়েছে। শুধু কোভিড-১৯-এর সেবাই নয়, যে কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ফোনকলের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদের স্বাস্থ্যসেবাকে নিরাপদ অবস্থায় নিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাকেও হাতের নাগালে পাচ্ছে। মহামারীর এই দুঃসময়ে অন্য রোগে আক্রান্তরা হাসপাতালে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। আর করোনা ছাড়া ভিন্ন রোগীদের কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করার ব্যাপারেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সব থেকে জরুরী তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া। সেটার জন্য এখন পর্যাপ্ত সুযোগ উন্মোচন করেছে জরুরী টেলি মেডিসিন সেবা। এমন প্রযুক্তিগত সেবা একেবারেই নতুন তা কিন্তু নয়। অনলাইনভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান আমাদের আগেরও অভিজ্ঞতা আছে। জরুরী প্রয়োজনে ফোন করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার রীতি অনেক আগেই চালু হয়েছে, যখন সামাজিক দূরত্বকে স্বাস্থ্যবিধির উপায় হিসেবে বিবেচিত করা হয়নি। সুতরাং স্বল্প পরিচিত এবং প্রচলিত এই চিকিৎসাসেবাটি করোনাকালে তার বহুল আবেদন নিয়ে আক্রান্তদের উপযুক্ত পরামর্শ এবং যথার্থ পদ্ধতি অনুসরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আক্রান্তরা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুফলও পেয়ে যাচ্ছে। আর করোনাকালে এমন টেলি মেডিসিনই হয়েছে আস্থাভাজন এক স্বাস্থ্যসেবা। করোনার বৈশিষ্ট্যগুণে অনেক রোগীকে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতেও হয় না। ঘরে বসেই দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যসেবায় সুস্থও হয়ে যায়। আর প্রাথমিক উপসর্গের আভাস পাওয়া গেলে ফোনকলের মাধ্যমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধ সেবন করা এক অন্যতম ভরসার জায়গা। কারণ সময় ও অর্থ ব্যয় করে হাসপাতাল কিংবা চেম্বারে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘরে বসে চিকিৎসাসেবা অনুসরণ করা যায়। একটু উন্নতমানের চিকিৎসা পেতে গেলে রোগীদের হয়রানি ও ভোগান্তির শেষ থাকে না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা থেকে শুরু করে অত্যধিক চিকিৎসা ফির ঝামেলা পোহানোও এক আপদকালীন সময়। তেমন অব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে আসতে অনলাইনভিত্তিক চিকিৎসাসেবা সময়ের প্রয়োজনীয় আবেদন। এক তথ্যে উঠে আসে সরকারী কল সেন্টারে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে। বাংলাদেশের ৪৮২ জেলা-উপজেলার হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে এই টেলি মেডিসিন সেবাদান প্রকল্প চালু আছে। সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও পাচ্ছে বলে জানা যায়। আধুনিক চিকিৎসা ও উন্নত প্রযুক্তির অবাধ বিস্তারের এমন সুবর্ণ সময়ে চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চলেছে এই টেলি মেডিসিন সেবাদান প্রক্রিয়াটি। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এক সময় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চালু থাকলেও বর্তমানে করোনা দুর্যোগে তা অতি আবশ্যিক চিকিৎসার মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পেতে সময়ও লাগেনি। ফলে চিকিৎসক ও রোগী এমন তথ্যপ্রযুক্তির সেবায় অভ্যস্তও হয়ে উঠেছে। সেটা আরও সম্প্রসারিত করাও সময়ের দাবি। শুধু যে চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয় তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি পরীক্ষা এবং ওষুধ প্রাপ্তি নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যও প্রদান করে থাকে এই প্রক্রিয়াটি। তাতে রোগীদের অহেতুক ভোগান্তি এবং সময় ও অর্থ অপচয় কম হওয়ার সম্ভাবনাও প্রচুর। যদিও বিশিষ্টজনেরা বলছেন সরাসরি রোগী দেখে চিকিৎসা দেয়া আর কল সেন্টারের মাধ্যমে পরামর্শে পার্থক্য থাকলেও মহামারীর এমন সঙ্কটকালে টেলি মেডিসিনই সর্বোত্তম উপায়। সুনির্দিষ্ট জাতীয় নির্দেশনা ব্যতিরেকে প্রদান করা এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ভুল-ভ্রান্তির অবকাশ থাকলেও সতর্ক-সাবধানতায় যথার্থ নজরদারিরও প্রয়োজন আছে। সংশ্লিষ্টদের এই ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক।
×