ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসন্ন ঈদে গণপরিবহন

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ৯ জুলাই ২০২০

আসন্ন ঈদে গণপরিবহন

পবিত্র ঈদ-উল-আজহা আসন্ন। বড় জোর মাসখানেক বাকি। রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানির পশুরহাট বসানোর আয়োজনও চলছে জোরে শোরে। দীর্ঘদিনের লকডাউন প্রত্যাহারের পর মানুষের দৈনন্দিন আয়-রোজগারসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং পোশাক শিল্প ও অন্যান্য শিল্প কারখানাও চলমান যথারীতি। সত্যি বলতে কি অন্তত এই মুহূর্তে মানুষের জীবনযাপন শতভাগ না হলেও অনেকাংশই সচল ও প্রবহমান। তবে এর মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও যে নেই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেননা, সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিন সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের ওপর গুরুত্বারোপ করা হলেও তা সর্বত্র নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বরং কোথাও কোথাও কিছু মানুষের বেপরোয়া মনোভাব ও আচার-আচরণও প্রত্যক্ষ করা যায়। উদাহরণত বলা যায়, লকডাউন ঘোষিত রাজধানীর মিরপুরের টোলারবাগে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা মানা হলেও পূর্ব রাজাবাজার এবং ওয়ারীর অধিবাসীদের মধ্যে তা মানার চেষ্টা ও প্রবণতা আদৌ লক্ষ্য করা যায় না। কোন কোন মার্কেটে এবং হাটবাজারেও প্রায় একই চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায়। গণপরিবহনে নিরাপদ দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারী নির্দেশ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। সে অবস্থায় দেশে করোনা আক্রান্ত ও সংক্রমণসহ মৃত্যুর হার বাড়ছেই। সে তুলনায় সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা অনেক কম এবং করোনা পরীক্ষার সুযোগও সীমিত। সার্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার আসন্ন কোরবানি ঈদের আগে-পরে পুনরায় গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। তবে গণপরিবহন মালিক সমিতিসহ সর্বস্তরের মানুষ আদৌ তা মানবে কিনা সে বিষয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কেননা, গত ঈদ-উল-ফিতরে লকডাউনে গণপরিহন বন্ধ থাকলেও মানুষ বিশেষ করে পোশাক শ্রমিক ও অন্যরা যে যেভাবে পারে বার বার আসা-যাওয়া করেছে রাজধানী ও গ্রামের বাড়িতে। আসন্ন ঈদেও এর ব্যতিক্রম হবে এমনটি আশা করা বাতুলতা। ঈদে যানজট ও জনজট হ্রাসে আগে-পড়ে ছুটি ঘোষণাও তেমন ফলপ্রসূ হয় না। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, রাজধানী ও আশপাশের এবং বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামেরও অধিকাংশ শ্রমজীবী ও কর্মজীবী প্রধানত বহিরাগত। ফলে ছুটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পড়িমরি করে যে যেভাবে পারে ছুটে যায় গ্রামের বাড়িতে নিজ নিজ জেলায়। সে সময়ে কার্যত দূরপাল্লার যানবাহন ও নৌচলাচল বন্ধ থাকলেও মানুষ একটা না একটা উপায় বের করে নিয়েছে। তদুপরি অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বেসরকারী অফিস, শিল্প-কারখানা ও পোশাক কারখানাগুলোতে কার্যত লকডাউন ঘোষিত হয়নি। ছুটি ঘোষণা নিয়ে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর কিছু দোদুল্যমানতাও লক্ষ্য করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, সব রকম যানবাহন ও নৌচলাচল লকডাউনে বন্ধ থাকলেও লাখ লাখ শ্রমজীবী চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা সত্ত্বেও আসা-যাওয়া করেছিলেন গত ঈদে। অধিকাংশেরই মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে হেঁটে। ফেরিগুলো ছিল ভিড়ে ভিড়াক্কার। সর্বস্তরের মানুষের এই দুর্ভোগ সত্যি বলতে কি ঈদ-উল-আজহায়ও অনেক বেশি হবে যানবাহন বন্ধ থাকলে। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ছুটে যাবে গ্রামের বাড়িতে। আমরা আশা করব, করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং সাধারণ ছুটি যদি আর বাড়ানো না হয়, ট্রেনসহ সব রকম যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হোক স্বাস্থ্যবিধি মেনে। সর্বস্তরের মানুষ যাতে দুর্ঘটনাসহ যে কোন ঝুঁকি ব্যতিরেকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রেল কর্তৃপক্ষসহ বেসরকারী পরিবহন মালিকদেরও সবিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তখন যেন কোনক্রমেই লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। এর পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ সব শ্রমিককে যথাসময়ে বেতন-বোনাস প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
×