ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দেয়া হবে

লকডাউনমুক্ত আমিরাত কর্মী নেবে

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২ জুলাই ২০২০

লকডাউনমুক্ত আমিরাত কর্মী নেবে

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের শ্রমবাজারে একটি সুখবর এসেছে। সুখবরটি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাজারটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এই বাজারের কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আশার আলো তৈরি করেছে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। দেশটিতে বর্তমানে লকডাউন তুলে দেয়া হয়েছে। কর্মীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছেন। দেশটিতে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ১৯ ক্যাটাগরিতে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তবে কোন অফিসিয়াল চিঠি দেয়া হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মরিরুছ সালেহীন জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রমবাজারে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনেক দেশে আমাদের কর্মীদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে কর্মীদের সহযোগিতা পাঠিয়েছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কর্মীদের জন্য সাহায্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশটিতে বিভিন্ন কোম্পানিই কর্মীদের থাকা-খাওয়া দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে কর্মীরা কাজও করছে। শুধু তাই নয়, দেশটি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন সেক্টরে বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটি কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিল। এবার দেশটির কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করার কথা জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যে ১৯টি ক্যাটাগরিতে কর্মী যাবেন সেগুলো হচ্ছে- হাউজমেড (গৃহকর্মী), প্রাইভেট সেইলর (ব্যক্তিমালিকানাধীন জাহাজের নাবিক), ওয়াচশ্যান এ্যান্ড সিকিউরিটি গার্ড (নিরাপত্তাকর্মী), হাউজহোল্ড শেফার্ড (রাখাল), ফ্যামিলি চোফার (গাড়িচালক), পার্কিং ভ্যালে ওয়ার্কার্স (গাড়ি পার্কিংয়ের কর্মী), হাউজহোল্ড হর্স গ্রুমার (ঘোড়া পালার সহিষ), হাউজ ফ্যালকন কেয়ারটেকার এ্যান্ড ট্রেনার (বাজপাখি পালক), ডমেসটিক লেবার (গৃহভৃত্য), হাউজকীপার (গৃহ তত্ত্বাবধায়ক), প্রাইভেট কোচ, বেবি সিটার (শিশু পরিচর্যাকারী, হাউজহোল্ড ফার্মার (কৃষি কর্মী), গার্ডেনার (মালি), প্রাইভেট নার্স (ব্যক্তিগত সেবিকা, প্রাইভেট পিআরও (ব্যক্তিগত সহকারী), প্রাইভেট এ্যাগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ার (কৃষিবিদ), কুক (পাচক)। আরব আমিরাতে বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে অপরাধে জড়িয়ে এক হাজার কর্মী বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু নেতিবাচক কর্মকা-ের কারণেই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারটি এতদিন বন্ধ ছিল। এদিকে বেসরকারী খাতের জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সবার আগে প্রবাসীদের নিরাপদ রাখা জরুরী। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করছে বায়রা। তবে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। তারা দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। অনেকে আবার চলেও এসেছেন। তারা দেশে কোন কাজ না পেয়ে বিভ্রান্তির জীবন কাটাচ্ছেন। তখন তারা নানা অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যেসব কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তাতে ফিরে আসা কর্মীদের কিছু করে খাওয়ার জন্য ঋণ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে কর্মীরা বেকার থাকবেন না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিষয়টি শুনেছি। এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালভাবে কিছু জানানো হয়নি। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচীর প্রধান শরিফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রবাসীদের অর্ধেকের বেশি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তাঁরা আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোর উচিত, ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য সংগ্রহ করে রাখা, যাতে পরবর্তী সময় তাঁদের নানাভাবে সহায়তা করা যায়। প্রবাসীদের পরিস্থিতি নজরদারির জন্য অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ কমিটি বলছে, অনেক জায়গায় নিয়োগকর্তার কাছ থেকে প্রবাসীরা সহায়তা পাচ্ছেন। যাঁরা নিয়মিত কর্মী নন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। ‘বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি-বিশেষ ধরনের উদ্যোগের দাবি রাখে’ বলে জানান মাইগ্রেন্ট ফোরাম ইন এশিয়ার সমন্বয়ক উইলিয়াম গয়েস। এই ধরনের অপরিকল্পিত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে বহু কর্মী তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ নিয়োগকর্তা ব্যক্তি এবং কোম্পানিগুলোকে কর্মীদের মজুরি চুরির একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে কর্মী উৎস এবং গ্রহীতা রাষ্ট্রগুলো এই অন্যায়ের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে গত বছর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় দুই দেশের মধ্যে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, ‘তদবির সেন্টার’ অর্থাৎ ‘ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের’ মাধ্যমে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। ‘তদবির সেন্টারটি’ ইউএই সরকারের মানবসম্পদ ও এমিরাটাইজেশন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কাজ করবে। তবে কবে নাগাদ কর্মী নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে তা জানাতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
×