ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাড. বাবুল রবিদাস

আদালত বিচারক ও আইনজীবীদের করোনাকালীন পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ২০:০৫, ২৯ জুন ২০২০

আদালত বিচারক ও আইনজীবীদের করোনাকালীন পরিস্থিতি

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ, ২০২০ তারিখে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের পর সরকারীভাবে ২৬ মার্চ, ২০২০ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। সুদীর্ঘ ৬৬ দিনের ছুটির অবসান ঘটেছে গত ৩০ মে, ২০২০ তারিখে। এর ফলে সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে ছুটিকালীন সময়ে ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে হাজতি আসামিদের জামিন নির্ধারিত ভার্চুয়াল কোর্টে ই-মেইল বা ই-ফাইলিংয়ের আবেদন প্রেরণ করা হয়। অতঃপর আদালত নিয়োজিত কৌশলীর ই- মেইলে শুনানির জন্য দিন, তারিখ, পিন নং, কোর্ট নং প্রেরণ করেন। আদালত ও আইনজীবীর মধ্যে ‘জুম; এ্যাপস্রে মাধ্যমে শুনানি হয় ঘর বা বাড়ি থেকে। এভাবেই মঞ্জুর বা না-মঞ্জুর আদেশ হয় কোর্ট থেকে। ভার্চুয়াল আদালত দীর্ঘদিন চলার পর দেশের জনগণের আশা ছিল আদালতের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হবে। কিন্তু তা হয়নি। ভার্চুয়াল আদালতে শুধুমাত্র জামিন শুনানি হচ্ছে। অন্য কার্যক্রম হচ্ছে না। যেমন- সাক্ষীর জেরা, জবানবন্দী, যুক্তিতর্ক, রায় ইত্যাদি। মহামারী সংক্রমণ অবস্থায় দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম শুরু করা ঠিক হবে কি? তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আইনজীবীরা। কারও কারওমতে নিয়মিত আদালতের পাশাপাশি ভার্চুয়াল আদালতেও বিচার কাজ চলতে পারে। তবে অধিকাংশ বিচারপতি বর্তমান পরিস্থিতে নিয়মিত আদালত খোলার পক্ষে নন। কারণ- ভার্চুয়াল আদালতে বিচার কাজ পরিচালনা ও দায়িত্ব পালনের সময় সারাদেশে নিম্ন আদালতের এ পর্যন্ত ১৩ জন বিচারক ও ২৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে আছেন আরও চারজন বিচারক (১৭ জুন, ২০২০)। আরও জানা যায় যে, প্রধান বিচারপতি শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিএমএইচ-এ ভর্তি (৪ জুন, ২০২০, দৈনিক যুগান্তর)। সংবিধান অনুসারে আদালতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। তিনিই বর্তমানে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আদালত খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। শুধু যে বিচারকগণই আক্রান্ত তা নয়। সারাদেশে আইনজীবীরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও এ সংখ্যা দেড় শতাধিক বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে ০৪/০৬/২০২০ তারিখের দৈনিক সমকাল পত্রিকার শিরোনাম ছিল- ‘করোনায় আক্রান্ত দেড় শতাধিক আইনজীবী।’ এমনকি ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্সেই আইনজীবীর করুণ মৃত্যুর খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আইনজীবীদের মতে ভার্চুয়াল আদালতের উপযোগী উপকরণ (যেমন- এন্ডুয়েড মোবাইল, জি./ই-মেইল, তঙঙগ এ্যাপস্, স্ক্যানার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য সামগ্রী) ব্যবহার করতে জানেন না বা নেই। তাই ভার্চুয়াল আদালত স্থায়ী কোন সমস্যার সমাধান নয়। আইন বলে, ‘ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু, সাদা-কালো সকলেই আইনের চোখে সমান।’ সবার জন্য সমান বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য। গত ৭ মে, ২০২০ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ -এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ২ দিন পর ৯ মে, ২০২০ তারিখে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়- সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতে হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময় প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে। আইনজীবীগণ প্রতিদিন নিত্যনতুন এবং পুরাতন মক্কেলদের সংস্পর্শে আসেন ও পরামর্শ প্রদান করেন এবং সমস্যার সামাধান দেন। আদালত চত্বরে ও আইনজীবী ভবনে প্রতিদিন জনসমাগম প্রচুর হয়ে থাকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি-কাশি, মক্কেলদের সঙ্গে থাকা অর্থনৈতিক আদান-প্রদান করা, ভাল ব্যবহার করা, চা-নাস্তা একসঙ্গে খাওয়া, গ্রাম্য মানুষের অসতর্কতায় আইনজীবীদের বিপদ অবশ্যম্ভাবী। বিচারকরা মানুষের মধ্যে মেলামেশা না করেও যদি আক্রান্ত হন, তবে আইনজীবীদের কথাও চিন্তা-ভাবনা করুন। কি হবে? আইনজীবীদের জন্য সরকার বাহাদুর মহামারী বিপদকালীন সময়ে মৌলিক অধিকার সরবরাহ করলে আইনজীবীগণ কোর্টে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং সংক্রমণ বিস্তার রোধ হবে বলে মনে করেন। লেখক : এ্যাডভোকেট জজ কোর্ট, জয়পুরহাট, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ [email protected]
×