ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টকে দেয়া রিপোর্টে সঠিক চিত্র উঠে না আসার অভিযোগ

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর দুঃসহ যন্ত্রণা

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৩ জুন ২০২০

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর দুঃসহ যন্ত্রণা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারী হাসপাতালের বিপরীতে অসংখ্য বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা হলেও করোনাকালীন বর্তমান সময়ে যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা ব্যাপক হতাশাজনক। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর দুঃসহ যন্ত্রণা ও মৃত্যুর চিত্র সকল মহলে মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, বিত্তবানরা প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় আরও উন্নত চিকিৎসার আশায় স্থানান্তরিত হচ্ছেন। এছাড়া যারা আর্থিকভাবে সক্ষম নন, তারা স্থানীয় সরকারী, বেসরকারী, ক্লিনিকগুলোতে ধুঁকছেন। শুধু বেসরকারী পর্যায়ে নয়, সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও জরুরী ভিত্তিতে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফলে হতাশায় জর্জরিত চিকিৎসা সেবা গ্রহণে উন্মুখ সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীদের যে দুরবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আলোচনা-সমালোচনা কেবলই বেড়ে চলেছে। বেসরকারী পর্যায় থেকে আগ্রহীরা এগিয়ে না আসলে বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো আরও ভয়াবহ রূপ নিত। অপরদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রামে যে ১২টি বেসরকারী হাসপাতালকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশনা পালন করেছে তা নিয়ে গড়িমসি সৃষ্টি হওয়ায় হাইকোর্ট এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করে। এ প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন গত রবিবার রাতে তার প্রদত্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, এই ১২ হাসপাতালে বর্তমানে ৬৪ করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ২০টি আইসিইউ বেড ব্যবহার হচ্ছে করোনা সংক্রমিত রোগীর জন্য। এ রিপোর্ট নিয়ে অভিযোগ তোলা হলেও সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি সোমবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, রিপোর্ট প্রদানের সময় যা পাওয়া গেছে তিনি তাই হাইকোর্টকে অবহিত করেছেন। এদিকে, রিপোর্ট আলোচনা করলে বেরিয়ে আসছে এসব হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এখনও টালবাহানা করে চলেছে। সিট খালি নেই বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম অপ্রতুল বলে প্রতিনিয়ত রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার এন্তার অভিযোগ। আবার কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অক্সিজেন সরবরাহ সুবিধায় যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। যে ক’টি হাসপাতালে রোগীদের চাপ রয়েছে সেসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে রোগীদের চিকিৎসায় মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ভুক্তভোগীরা এই জাতীয় নানা অভিযোগ উত্থাপন করছে ঠিকই কিন্তু এসব নিয়ে প্রশাসনের কেউ তেমন নাক গলাচ্ছেনা। এছাড়া অভিযুক্ত হাসপাতালগুলোর পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষায় যে বেহাল অবস্থা চলছে তার উন্নতি আদৌ হবে কিনা বলা মুশকিল। কেননা, প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েই চলেছে। তবে সিভিল সার্জনের এই রিপোর্ট বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানতে নারাজ। কয়েকটি হাসপাতালের পক্ষে জানানো হয়েছে, এর চেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে, ভুক্তভোগীদের পক্ষে অভিযোগ উঠেছে, বেসরকারী এই ১২ হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। নামমাত্র কিছু রোগী ভর্তি করিয়ে তারা সরকারী আদেশ পালন করছে বলে দেখাচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, চট্টগ্রামে যে ১২টি হাসপাতালকে সরকার করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বাধ্যবাধকতার আদেশ দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে পার্কভিউ হাসপাতাল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল, সিএসসিআর হাসপাতাল, ডেল্টা হাসপাতাল, সিএসটিসি হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল সেন্টার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ১২ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১৮শ’। এর মধ্যে সিভিল সার্জন যেদিন রিপোর্ট দেন সেদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭শ’। তন্মধ্যে করোনা রোগী ছিল ৬৪ জন। এছাড়া করোনা সন্ধিগ্ন রোগী ছিলেন ৩ শতাধিক। এসব হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধার বেড রয়েছে ১০১। এছাড়া বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বেসরকারী হাসপাতাল হাইফ্লো অক্সিজেন নেসাল ক্যানোলা সংগ্রহ করেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরও বেশ কিছু এ জাতীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম এসব হাসপাতালে সংযুক্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সোমবার পর্যন্ত করোনা রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮০। করোনায় মারা গেছেন ১৪৪ জন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে দুজন আলোচিত শিল্পপতিও রয়েছেন। রয়েছেন ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষকসহ আরও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এমনিতর পরিস্থিতিতে ২২ জুনের মধ্যে চট্টগ্রামে সরকারী, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কি পরিমাণ করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে তৎসংক্রান্তে রিপোর্ট প্রদানের জন্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন নির্দেশনা প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২০ জুন একটি রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট নিয়ে বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সূত্রে ভিন্নমত পোষণ করা হয়েছে। তাদের দাবি এর চাইতে বহু বেশি করোনা সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যা চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়নি।
×