ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যে ৬০ প্রকল্প

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৯ জুন ২০২০

স্বাস্থ্যে ৬০ প্রকল্প

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশকেও নাজেহাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে দুঃসহ চিত্র উঠে এসেছে তা এই আপৎকালীন সময়কে আরও বিপর্যস্ত করে দেয়। আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সামগ্রীর সঙ্কটে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি স্বাস্থ্য খাতকে অব্যবস্থাপনার শিকার করেছে তাও এই দুঃসময়ের এক অসহনীয় দৃশ্য। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সামগ্রীর অপ্রতুলতায় যে সমস্যা মাথা চাড়া দেবে তাকে সামলাতে গিয়ে পুরো দেশ হিমশিম খাবে। দৃশ্যত সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে। ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সিংহভাগ মানুষকে হাসপাতালে যেতেও হয় না। সামান্য যে অংশ চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয় তাদের ক্ষেত্রেও যে দুর্গতি আর সমন্বয়হীনতাই শুধু নয়, বরং সেবা নিতে যে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাও মানুষকে আতঙ্কিত করছে প্রতিনিয়তই। মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেন, ভ্যান্টিলেশন কিংবা আইসিইউর মারাত্মক সঙ্কটে প্রাণ সংহারের মতো ঘটনাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে মানুষকে প্রতিদিন। করোনাকালীন দুর্যোগেই নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট ঘোষণা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য এক প্রয়োজনীয় সময়। আগামী বাাজেটে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে স্বাস্থ্য খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অর্থ বরাদ্দও ছিল সময়ের দাবি। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অসঙ্গতি দূর করতে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দিতে হয়। সার্বিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্যবেক্ষণে চিহ্নিত করে তার যথাযথ বিহিত করাও সংশ্লিষ্টদের সচেতন দায়বদ্ধতা রয়েছে। তেমন দায়বদ্ধতা থেকেই নতুন বাজেটে করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে পুনর্নির্মাণে বিবেচনায় আনা হয়। করোনাভাইরাস মোকাবেলা ছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূচককে বিবেচনায় রেখে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। নতুন বরাদ্দের অর্থ নিয়ে পুরো স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নেয়া হয়েছে ৬০টি উন্নয়ন প্রকল্প, যা ৩৮ হাজার ১৮৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন নতুন করে এসব প্রকল্প যুক্ত করেছে অন্যান্য উন্নয়নের কর্মযোগের সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পগুলো তার সার্বিক কার্যক্রমে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে করোনা মোকাবেলায় কয়েকটি প্রকল্পকে কার্যবিধির আওতায় আনা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রে জানা যায় অগ্রাধিকার পাবে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতকে নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসার গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রকল্প। চিকিৎসাসেবার মতোই সমান গুরুত্ব পাবে কৃষি খাতও। মানুষের জীবনে নিত্যপণ্যের যে চাহিদা সেটাও কোনভাবে অবহেলা করা যাবে না। তবে করোনাভাইরাসের সঙ্কটকালীন সময়ে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে যে উন্নয়ন প্রকল্প তার গুরুত্বও সর্বাধিক। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার চরম অসঙ্গতি ছাড়াও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগও সামনে চলে এসেছে। সঙ্গত কারণে স্বাস্থ্য সচিবকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তবে বাজেটে বরাদ্দ দেয়াই শেষ কথা নয়, তাকে সুশৃঙ্খল ও সুপরিকল্পিত উপায়ে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেয়া সেও এক কঠিন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। দক্ষ মানবসম্পদ এবং নীতি-নৈতিকতায় সুষ্ঠু ও যথার্থ পদক্ষেপ নেয়াও বাস্তবায়নের আনুষঙ্গিক পর্যায়। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারটিও এক সম্প্রসারিত নতুন কার্যক্রম, যাকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সাবধানতার সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেয়া সব থেকে বেশি জরুরী। সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয়হীনতার যে দুঃসহ চিত্র ফুটে উঠেছে করোনা সঙ্কটের মধ্যে তাও কোনভাবেই কাম্য ছিল না। নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে সব পর্যায়ের অসঙ্গতি দূর করার নিয়মিত বিষয়টিও নজরদারি করা বাঞ্ছনীয়।
×