ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

অভিশাপ না প্রকৃতির প্রতিশোধ?

প্রকাশিত: ২১:০২, ৬ জুন ২০২০

অভিশাপ না প্রকৃতির প্রতিশোধ?

একজন মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যখন কোনো দুর্যোগ নেমে আসে ধরণীতে এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের গজব আবার যখন দেখি ধরনীতে সুবাতাস বইছে মানুষ সুখে-দুঃখে একে অপরের জন্য হাসছে কাঁদছে তখনো আমরা বিশ্বাস করি এটি আল্লাহ পাকের রহমত কৃপা আশীর্বাদ। অনেক সময় আমরা আমাদের কৃত অপরাধগুলোর কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের জন্য আল্লাহর অভিশাপের মাঝে ফেলে নিজেদের গা বাঁচাতে চাই। অপরাধ করি আমরা দোষ চাপাই আল্লাহপাক (নাউজুবিল্লাহ) এর ওপর। এই পৃথিবীতে মাখলুকাতের মধ্যে এমন অনেক প্রাণী আছে যেগুলো ভক্ষণ করার বা ক্ষুণ্ণিবৃত্তি নিবারণের জন্য নয় বরং জলবায়ু আলো-বাতাস তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য। এমনকি ইউটিউবে দেখলাম ব্যাঙ মারা ইসলামে নিষিদ্ধ অথচ মানবজাতির একটা বড় অংশ ব্যাঙ ভক্ষণ করে মুরগির ঠ্যাং-এর মতো ব্যাঙের ঠ্যাং চিবোয়। ক্যানো ব্যাঙ মারা নিষিদ্ধ জানিনা তবে অনুমান করতে পারি ব্যাঙ ঘরের কোণে লুকিয়ে থেকে নানান ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ঘর-দোর নিরাপদ রাখে। তেমনি ক্ষেতে ফসল বিনষ্টকারী পোকামাকর ধ্বংস করে। এটি একটি উদাহরণ। এমনি ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। সাপও পোকামাকড় খায়। সাপ ভয়ঙ্কর বিষাক্ত এবং মানুষকে ছোবল মারলে সে মানুষ কমই বাঁচে যে কারণে সাপ মেরে ফেলতে বাধা নেই। আদিম যুগে যখন মানুষ কাঁচা মাছ মাংস পোকামাকড় ভক্ষণ করত। তখন তাদের রোগ নির্ণয়ের কোন ব্যবস্থা ছিলনা মৃত্যুর কারণও জানত না। যেদিন থেকে আগুন আবিষ্কার হলো এবং মানুষ মাছ পশু মারত, আগুনে পুড়িয়ে বা রান্না করে খাওয়া শুরু করল সেদিন থেকে রোগ-ব্যাধিও কমতে শুরু করল। বস্তত আমরা যাকে প্রস্তর যুগ বলি তখনও মানুষ গুহাবাসী এবং তারা পাথরে ঘষে ঘষে অস্ত্র বানাতো এবং সেই অস্ত্র দিয়ে পশু পাখি জলজ প্রাণী শিকার করত তবে সেসব কাঁচা খেতে। সেই পাথর ঘষতে ঘষতে যেদিন আগুন আবিষ্কার হলো এবং মানুষ মাছ মাংস রান্না করে খেতে শুরু করল সেদিন থেকেই মূলত সভ্যতার দ্বিতীয় স্তর গুনা হয়। প্রথম স্তর হলো প্রস্তর যুগ। সে হাজার হাজার বছর আগে। তারপর থেকে সভ্যতার অনেক স্তর পার করে মানব জাতি আজ সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। এখন মানুষ নানান রসনা ভেজা ব্যঞ্জন দিয়ে রান্না করে। এখানে একটি কথা বলা দরকার আগুনে পুড়িয়ে রান্না করে যাই খাক তার মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না বা খুব কমই থাকে। তবে কাক কুকুর বাদুর শুকর বিড়াল সাপ জঙ্গলের হিংস্র প্রাণী যারা খায় রান্না করে খেলেও সেগুলোর ক্ষতিকারক উপাদান একেবারে নিঃশেষ হয় না। সাপতো এতই ক্ষতিকারক দেখামাত্রই মেরে ফেলতে হয়। যদিও দক্ষিণ এশিয়াসহ অনেক অঞ্চলের মানুষ এই সাপ খায়। অনেকের মুখে শুনেছি বিষাক্ত সাপ রশিতে টানিয়ে রাখা হয় রেস্টুরেন্টের সামনে। খাদক যেটি পছন্দ করে সেটি নামিয়ে প্রথমে মাথা কেটে ফেলে তারপর চামড়া ছিলে ফেলে পুড়িয়ে অথবা রান্না করে পরিবেশন করে। তাদের কাছে সাপ নাকি খুবই উপাদেয় খাবার। যেমন বাদুর কাক এসব রান্না করে খেলেও মানবদেহে নানান রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এর একটি বড় উদাহরণ হলো যে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস ইতোমধ্যেই অর্থাৎ গত বুধবার ৩ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। বাংলাদেশের দিকে তাকালে রীতিমতো চমকানোর মতো ঘটনা। ঐদিন ৩ জুন বুধবার পর্যন্ত সংক্রমিত ৫৩ হাজারের মতো এবং মৃত্যু সাত শতাধিক। এটি অফিশিয়াল পরিসংখ্যান। বস্তুতপক্ষে কত সংক্রমিত এবং কত মৃত তার হিসাব এখনো কেউ জানে না। ভবিষ্যতে হয়তো এর হিসেবে জানা যাবে যেমন বিভিন্ন হাসপাতালে বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে বা কাগজে ছাপা হচ্ছে সর্দি কাশি গলাব্যথা হাঁপানিতে মারা গেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই মানুষগুলো করোনা শিকার হননি তা হলফ করে বলা যাবে না। সর্দি কাশি গলাব্যথা মানুষ মারা যাচ্ছে এমন ব্যাপার এবারেই প্রথম কাগজে দেখছি মিডিয়ায় বলা হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখানো হয় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আগে ২৪ ঘণ্টার ৭৩০ জন তার আগে ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন দেহত্যাগ করেছেন করোনায়। অর্থাৎ তার আগের দুটি ২৪ ঘণ্টায় যথাক্রমে ২০ ও ২১ মারা যান এবং একদিনেই লাফ দিয়ে ডাবল হয়ে গেল। আরও শঙ্কা হচ্ছে বাংলাদেশ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই যে এত বড় দুর্যোগ নেমে এলো বিশ্বব্যাপী এর উৎপত্তি স্থল চীনের উহান প্রদেশ। বলা হয় তারা বাদুর খেত এবং তা থেকেই ভাইরাসটির উৎপত্তি। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। প্রস্তর যুগ বা কাঁচা মাছ মাংস খাবার যুগ হাজার হাজার বছর পেরিয়ে মানুষ আজ সভ্যতার আধুনিক বা চূড়ান্ত অবস্থানে পৌঁছেছে অথচ এই সময়েও একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর এখনও কাঁচা মাছ এবং ক্ষেত্রবিশেষ কাঁচা মাংস খাচ্ছে। একটি ছোট্ট ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলব। ৪৫ বছর আগে ১৯৮৫ সালের দিকে আমি সাংবাদিকতায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য জাপানের টোকিওর জার্নালিস্টিক ইনস্টিটিউটে যাই ফেলোশিপ নিয়ে। তখন আমি দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র পলিটিকাল এ্যান্ড পার্লামেন্টারি এফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট। সেখানে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় তার নাম আকেমি মায়েদা। আজ এত বছর পরও মনে আছে জাপানের মানুষের জীবন বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ও উন্নত অর্থনৈতিক জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারি তার কাছ থেকে। ওদের কালচারে চুষি সবচেয়ে উপাদেয় এবং অভিজাত খাবার। এই চুষি আসলে কিছুই নয়, কাঁচা মাছ, কুচিয়া খাবার দোকান। কুচিয়ার ভেতরের মাংস কাঁটা ফেলে দিয়ে সেদ্ধ চাল চামড়া দিয়ে মুড়িয়ে তারপর টুকরো টুকরো করে পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে পিঁয়াজ কাটা। আমি প্রথম ভেবেছিলাম বুঝি বাইং মাছ। পরে জিজ্ঞেস করে আসল পরিচয় জানতে পারি। মায়েদার সঙ্গে তার এক বান্ধবী ছিল। ওরা দুজন টপাটপ এক একটা চপ-স্টিকে নিচ্ছে আর সসে ডুবিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। আমি যে কেবল নাড়াছাড়া করে কালক্ষেপণ করছি খাচ্ছি না ওরা দেখেও না দেখার ভান করছিল। আমাকে লজ্জা দিচ্ছিল না বা খাবার জন্য বলছিল না। এরপরই এল মাঝারি সাইজের এক একটা কাঁচা চিংড়ি সঙ্গে সস এবং পেঁয়াজ কাটা। আমি ওখান থেকে একটা কাঁচা চিংড়ি টুকরো টুকরো করে সসে ডুবিয়ে পেজ দিয়ে দু’টুকরো মুখে দিয়ে গিলে ফেললাম। মায়েদাকে লজ্জা থেকে বাঁচালাম। পরে একদিন অবশ্য কথায় কথায় মায়েদা জানতে চাইল চিংড়ি খেলাম চুষি খেলাম না কেন। উত্তরে বলেছিলাম প্রথমত কুচিয়া আমরা খাই না। চিংড়ি মাছ মাংস কোনটাই আমরা রান্না করা ছাড়া খাই না। তবে চিংড়ির শরীরের যেহেতু রক্ত থাকে না (মাথা ছাড়া) সেহেতু ওটি সস দিয়ে খেয়ে ফেলা যায়। আরেকদিন আমাদের কোর্স ডাইরেক্টর আমাদের সি-ফুড খাওয়াবেন বলে একটা হোটেলে নিয়ে গেলেন। হোটেলের লাগাও একটা খাল বয়ে গেছে। একেবারে টলটলা পানি। ওতে ২/৩/৪ কেজি ওজনের রুই মৃগেল ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এমন সময় আমাদের খাবার এলো। দেখলাম বিরানির মতো পোলাওর মধ্যে শামুক কাঁকড়া ঝিনুক। অবশ্য বিরানির সঙ্গে সেদ্ধ তারপরও কি খাওয়া যায়? কোর্স ডাইরেক্টর বুঝতে পেরে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারকে ডেকে কি যেন বলল। ভাষার কারণে বুঝতে পারিনি। কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখলাম ফ্রাইড চিংড়িসহ পোলাও নিয়ে এলো। এবার পেট ভরে খেলাম। তেমনি জার্মানিতে টিচিং ইন জার্নালিজম এর ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স (ইকুইভিলেস্ট টু এম এস) করতে গিয়ে দেখলাম সব সেদ্ধ বীপ ও চীলড। আমেরিকায় গিয়ে হালাল রেস্টুরেন্ট খুঁজতে হয়েছে তেমনি চীনেও। আমার এতকিছু বলার অর্থ হলো যারা যা পায় তাই খায় বা যারা কাঁচা খায় বা যারা সেদ্ধ খায় তবে একেবারেই সামান্য সেদ্ধ স্বাভাবিকভাবে আমরা ধরে নেব ওইসব প্রাণীদেহে বহনকারী কীট বা জীবিত ভাইরাস খেয়ে শরীরকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। সে দিক থেকে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নির্দেশিত তথা ইসলামী শরিয়া মতে আমরা যা খাই অর্থাৎ মাছ গরু মহিষ খাসি মুরগি সবই তেল মসলা দিয়ে ভালভাবে রসনা উপযোগী রান্না করে তবেই আমরা খাই। ঐসব মাছ বা প্রাণীর শরীরে তার জীবদ্দশায় কোন কিট বা ভাইরাস থাকলেও রান্নার প্রক্রিয়ায় তা শেষ হয়ে যায়। আমরা পিওর খাদ্য খাবার সুযোগ পাই। এর মধ্যেও কথা থাকে এই যেমন কেউ টাকার গরমে গোমাংস বা খাসির মাংস খেয়ে খেয়ে শরীরের মেদ জমায় এবং হার্টে চর্বি জমায় সে মানুষ কি হার্টফেলের জন্য আল্লাহকে দোষ দেবেন? বা যে মানুষ এ্যালকোহল ভুঁড়িতে ঢুকিয়ে লিভারটাকে পঁছিয়ে ফেলেন তিনি কি লিভার সিরোসিসের জন্য আল্লাহকে দোষ দেবেন? কিংবা যে যুবক সিগারেট গাঁজা হেরোইন ইয়াবা খেয়ে খেয়ে ফুসফুসটাতে হাজারো ফুটো সৃষ্টি করেন তিনিও কি ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য বলবেন আল্লাহর অভিশাপ পড়েছে? না আমি মনে করি ঐসব আমাদেরই কৃতকর্মের ফল। এক সময় আমি নিজেও ধূমপান করেছি অন্য কোন নেশায় নয় তারপর যেদিন জানতে পারলাম মানুষ সিগারেট খায় না সিগারেটই মানুষকে খায় সেদিনই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলাম তাও প্রায় দেড় দশক হবে। কিন্তু তার রেশ এখনো টানছি। এর জন্য আমি কাকে দোষ দেব? শুনেছি আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টির সময় ফেরেশতাদের ডেকে জানালে ফেরেশতারা আপত্তি তুলেছিল। তখন আল্লাহ পাক ইন্নি আলা মু মা’ লা’ তা’লামুন অর্থাৎ আল্লাহ বলেছেন আমি যা জানি তোমরা তা জান না। তারপরই মানুষ সৃষ্টি করলেন। সেইসঙ্গে জীবনযাপন নিরাপদ এবং সুখের জন্য খাদ্যের যেমন ব্যবস্থা করেছেন তেমনি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা অর্থাৎ এই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য পাহাড়-সমুদ্র বনাঞ্চল মরুভূমি সৃষ্টি করেছেন তেমনি নদ-নদী খাল-বিল সৃষ্টি করেছেন মিষ্টি পানির চাহিদা তথা জীবনধারণের জন্য। কিন্তু এই ধরনের মানুষ আমরাই পাহাড় কাটছি সমুদ্র নদী জলাশয় ভরাট করছি। অল্পদিনেই হাজার নদীর বাংলাদেশে এখন মনে হয় শতাধিক নদনদী আছে কিনা সন্দেহ। সব নদী খেকো দস্যুদের পেটে চলে গেছে। আর এসবের কারণে প্রকৃতি যদি বৈরী হয়ে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে তখন আমরা কাকে দোষ দেবো? তাইতো বলি যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এত আদর করে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করলেন তিনি কেন আমাদের ওপর গজব নাযিল করবেন মূলত আমরা ডেকে আনছি বলেই গজব আসছে। যে করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ গোটা পৃথিবীটাকে তছনছ করে দিচ্ছে ল-ভ- করে দিচ্ছে। কথা উঠেছে তার উৎপত্তি চীনের উহান শহরে। ঐ শহরবাসীর বাদুরের মাংস খেত এবং তা থেকেই এই ভাইরাসটির উৎপত্তি এবং বিস্তার। যদিও এই কথার কোন দালিলিক ভিত্তি নেই। তবুুও বলতে হয় এর অর্থ মানুষই বাদুড় থেকে ভাইরাসটিকে আহ্বান করেছে। তারপরও বলবো যেসব বিজ্ঞানী একটি বোমা ফাটিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখেন বলে দাবি করেন তারাওতো এর প্রতিশোধক বা প্রতিরোধক একটি ট্যাবলেটও আবিষ্কার করতে পারলেন না। কিন্তু কেন? এই কেনর উত্তর আমাদের জানা নেই। জানা নেই বলেই আমাদের রাব্বুল আলামিন আছেন। তিনিই আমাদের পথ দেখাবেন। আমাদের বেশি বেশি করে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বেশি বেশি করে ইবাদত করতে হবে। রাত গভীর হয় প্রভাতি সূর্য আসবে বলে। তেমনি দুঃখের নদী পার হয়ে একদিন শান্তির মহাসড়ক সৃষ্টি হবেই। প্রশ্ন হলো সেদিন আমাদের আজকের কথা মনে থাকবে তো? আমরা যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই পরিষ্কার দেখতে পাবো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ গত শতকের প্রথমার্ধে ওলাওঠার মহামারী তারপর গত শতকের মধ্যভাগের কয়েকটি দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে ঐ যে কোটি কোটি মানুষের জীবনহানি হলো তার কতখানি আমরা মনে রেখেছি। আমরা কি মনে রেখেছি ১৯৯১ আর ১৯৭৫-এর মহাদুর্যোগের কথা? ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হলো ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হলো ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো হত্যা করা হলো বঙ্গমাতাসহ অন্যদের হত্যা করা হলো শিশু শেখ রাসেল সুকান্ত এবং দুই পুত্রবধূকে। হত্যা করা হলো এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় চার নেতাকে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে। আমরা কি মনে রেখেছি? হ্যাঁ অনেকেই মনে রেখেছি। রাখেনি শুধু বিশ্বাসঘাতক আর চক্রান্তকারীরা। তবে পরিতাপের বিষয় হলো চক্রান্তকারীরা সংখ্যায় যত কমই হোক তারা সংখ্যা গরিষ্ঠের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয় যদিও তা বেশি দিনের জন্য নয়। বেশি দিনের জন্য শক্তি নিয়ে টিকে থাকে মেজরিটিরা এবং আল্লাহর রহমতও তাদের জন্যই। যেমন খুনি মোশতাক মিলিটারি জিয়া এই দুই চক্রান্তকারী এবং তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা টিকে থাকেনি টিকে আছেন বাংলার জনগণ এবং জনগণের নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতাদের হত্যা করা হয়েছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে হত্যা করতে পারেনি। তাইতো ভাতে কাপড়ে ফসল উৎপাদনে মানে সম্মানে সমৃদ্ধ যে বাংলাদেশ সে বাংলাদেশেরই প্রত্যয়া সম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস থেকে বলেন এ দিন থাকবে না, সুদিন আসবে। এরকম দিন থাকবে না। আমরা যে কোন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারব। সে ভাবেই আমাদের সকলকে নিজ নিজ কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রেখে কাজ করে যেতে হবে যেন দেশের মানুষ কষ্ট না পায়। আমাদের সবকিছু দেশের মানুষের জন্য দেশের গরিব দুখী দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের জন্য। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তাতে করে আশা ছিল প্রস্তুতিও ছিল ২০২০ মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মাঝেই আমরা আমাদের দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনব এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নত উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাব। কিন্তু করোনার কারণে সেই গতিশীলতা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তবে এরকম দিন থাকবে না। আমরা এগিয়ে যেতে পারব ইনশাল্লাহ। এই সংকটের মধ্যেও এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় আশানুরূপ ভাল রেজাল্ট করায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই কৃতজ্ঞতা জানাই। দোয়া করি আপনি সুস্থ জীবন মান নিয়ে দীর্ঘজীবী হোন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। সম্প্রতিকালে আমি ণড়ঁঞঁনব দেখা শুরু করেছি। আগে নোংরা গল্প ছবির কারণে দেখা যেত না। সম্প্রতিককালে বেশি পপুলার হয়েছে ওয়াজ মাহফিল এবং কতগুলো ধর্মীয় চ্যানেল। তবে এই সব চ্যানেল দেখা মানে নিজেকে ঈড়হভঁংব করা, অন্তত আমি ঈড়হভঁংব হচ্ছি। কারণ বাংলাদেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এত বেশি বিভাজিত যে আমরা নন-ওয়ায়েজীন মুসলমানরা কোন ভাগের মতামত অনুসরণ করব এটি একটি বড় সমস্যা। তবে অধিকাংশ ওয়াজিই একটা প্রশ্নে দারুণভাবে ঐক্যবদ্ধ যে তারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাজীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবি করেন। এক ওয়াজ মাহফিলে দেখলাম এক ওয়াজী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির কথা বলতে গিয়ে বলেছেন জালেম সরকার তাকে কারাবন্দী করে রেখেছেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে থাকা কয়েকজন উঠে এসে তাকে ওয়াজির আসন থেকে তুলে বের করে দেন। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো সাঈদী সম্পর্কে কথা বলার সময় ওয়াজিরা ভীষণ উত্তেজিত হন এবং তাদের কণ্ঠ থাকে উত্তেজিত। তারা এক সুরে কথা বলেন। মাঝখানে একটু অন্য কথা বললাম। যা-হোক মূল আলোচনায় ফিরে আসিঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে এতদিন আমরা জেনে এসেছি ঝড়-জলোচ্ছাস-বন্যা ইত্যাদি। এর সঙ্গে বেশ আগে থেকে যোগ হয়েছে কয়েকটি ব্যাধি ডেঙ্গুজ্বর চিকনগুনিয়া এবং সর্বশেষ এবারের ভয়ঙ্কর কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস। একে আমরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলবো, না প্রকৃতির প্রতিশোধ, না আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে গজব কোনটা বলবো জানিনা। আমরা আমজনতা জানি শুধু ভয়ানক কষ্টে আছি আমাদের জীবন-জীবিকা দুটোই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। এতদিন আমরা মনে করতাম আমরা ঘনবসতি বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় আমাদের সঙ্কট বেশি এবং সমাধান কম। অর্থাৎ ব্যতিক্রম। আমেরিকার মতো পাতলা বসতি দেশেও আমাদের মতো সঙ্কট মৃত্যু ও সংক্রমণের হার আমাদের চেয়ে বেশি। তবে তাদের কতগুলো সুবিধা আছে যেমন হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরত পাঠানোর ঘটনা নেই বললেই চলে চিকিৎসার উপকরণও আমাদের তুলনায় আধুনিক। তাদের আরেকটি সুবিধা হল তারা সহজেই অধিকাংশ এলাকায় সামাজিক দূরত্বের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারে যেটা ঘনবসতি হওয়ার কারণে আমাদের এখানে প্রায় অসম্ভব। ভারতের কয়েকটি শহর ছাড়া এমন ঘনবসতি দেড়শ কোটি মানুষের দেশ চিনেও নেই। চীনের দেড়শ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে আয়তন ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬১ বর্গ কিঃমিঃ এবং ভারতে ১৩০ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে দেশের আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গ কিঃমিঃ সেই তুলনায় বাংলাদেশে ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে আয়তন ০১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিঃমিঃ অবশ্য বর্ডার ও সমুদ্রসীমা চুক্তির আওতায় যথাক্রমে ভারতের কাছ থেকে ২৮ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিঃমিঃ এবং মায়ানমারের কাছ থেকে ৭০ হাজার বর্গ কিঃমিঃ শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে ভারত এবং মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা চুক্তি হওয়ায় আমাদের ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃমিঃ থেকে বেড়ে হয়েছে ২,৪৬,০৩৭ বর্গ কিঃমিঃ। (সূত্র উইকিপিডিয়া) বাড়লে কি হবে? মায়ানমার থেকে বিতাড়িত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর (শরণার্থী) বোঝা আমাদের সংকট বাড়িয়েছে বই কমেনি, কমছে না। কাজেই আজ সময় এসেছে কঠোর হস্তে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের। যদিও এখনকার কনসেপ্ট হচ্ছে জনসংখ্যা কোন বোঝা নয় এটি সম্পদ। যে কারণে এখন যঁসধহ নবরহম না বলে বলা হচ্ছে যঁসধহ ৎবংড়ঁৎপবং তারপরও বলবো বাংলাদেশকে ভাববার সময় এসেছে। প্রায় এক কোটি জনসংখ্যা বহিঃর্বিশ্বে কাজ করায় বেকারত্বের চাপ কিছুটা হলেও কমেছে। বলা যায় অনেকটা। বিশেষ করে এই করোনা কালেই দেখা যাচ্ছে জনসংখ্যা কম হলে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রেখে চলাচল বা কাজে যাওয়া আরও সহজ হতে পারে। এই নিবন্ধ শুরু করে বর্তমান করোনা বা কোভিড-১৯ জনিত সংকট আল্লাহ পাক-এর অভিশাপ না প্রকৃতির প্রতিশোধ (?) এ প্রশ্নের মীমাংসাও “আলেমুল গায়েব” আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই কেবল বলতে পারবেন। ঢাকা- ০৪ জুন ২০২০ লেখক : এমপি, সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×