ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে ঝুঁকিতে চিকিৎসা

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৩১ মে ২০২০

করোনাকালে ঝুঁকিতে চিকিৎসা

বৈশ্বিক মহামারীকালে সংশ্লিষ্ট রোগটিই হয়ে ওঠে সব কিছু ছাপিয়ে প্রধান ফোকাসবিন্দু। তাতে চাপা পড়ে যায় আর সব রোগের ভুক্তভোগীরা। এটা খুব যে অস্বাভাবিক তাও নয়। এখন নতুন রোগ কোভিড-১৯ নিয়েই যত আলোচনা ও আলোকপাত। অল্প কিছু সংক্রামক রোগের বাইরে মূলত কয়েকটি প্রধান অসংক্রামক রোগÑ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও রক্তচাপই ছিল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিশেষ মনোযোগের কেন্দ্র। বিশ্বের এক নম্বর হন্তারক রোগ হিসেবে শনাক্ত করা হয় হৃদরোগকে। প্রতি বছর পৌনে দ্ইু কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে। অন্যদিকে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এইডস এবং যক্ষ্মাÑ এই তিনটি রোগ মিলে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে মারা যাচ্ছে ৩৮ লাখ মানুষ। অথচ এ তিনটি রোগকেই ভয়ঙ্করভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে হৃদরোগের ভয়াবহতার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা অনুপস্থিত। যাহোক, দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যাও প্রায় এক কোটি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এখন বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ রোগটিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগীর বাইরেও যে লাখ লাখ রোগী রয়েছেন যারা দীর্ঘকাল যাবত অন্যবিধ নানা অসুখে ভুগছেন, তাদের চিকিৎসা সেবা যেন গৌণ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দের অনেকেই ব্যক্তিগত চেম্বারে বসছেন না দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই। প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছে মানুষ। তাদের জরুরী চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন হচ্ছে। অথচ বেশিরভাগ মানুষই তাৎক্ষণিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না। কিডনি রোগীদের দুরবস্থা অবর্ণনীয়। নতুন সংক্রামক ব্যাধি এসে অন্য সব ব্যাধিগ্রস্ত মানুষকে বরং বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যেই ফেলে দিয়েছে। মোটা দাগে যদি আমরা দুই ভাগে ভাগ করি তাহলে এর একদিকে রয়েছেন করোনা রোগী, অন্য দিকে বাদবাকি সব রোগী। করোনার সংক্রমণের ফলে এই দু’পক্ষের রোগীরাই সঙ্কটে পড়েছেন, সে কথা গত দুই মাসে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমে করোনা রোগীদের কথাই ধরা যাক। শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ করোনা আক্রান্তের হিসাব গণমাধ্যমে এসেছে। একদিনে আড়াই হাজারের ওপর করোনা রোগী শনাক্তের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঢাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দানের জন্য কিছু হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করোনা হাসপাতালও যুক্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে পরিমাণ রোগী প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে সে পরিমাণ রোগীর কথা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দানের সুবন্দোবস্ত কি রয়েছে? রোগটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য একেবারে নতুন। ফলে শুরুর দিকে অনভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্সদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিতভাবে সর্বোচ্চ সেবা প্রাপ্তি ছিল অনেকটাই অসম্ভব। তাই ডাক্তার-নার্সদের ভেতর অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন কয়েকজন। করোনাযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়েও এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশে এখনও করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে যারা ঘরে ফিরেছেন তাদের কাছ থেকে হাসপাতালের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা সন্তোষজনক নয়। তাই ক্রমবর্ধমান করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালগুলোকে আরও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। এক্ষেত্রে লোকবল ও বাজেট বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে বিশ্ব। তাই এর ব্যবস্থাপনাও হতে হবে আরও গতিশীল ও সুচারু। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতাগুলোকে অতিক্রম করার এখনই সময়। পাশাপাশি করোনা ছাড়া বাদবাকি রোগের রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্যও প্রতিটি হাসপাতালকে আন্তরিকতা ও পেশাগত অঙ্গীকারবোধের পরিচয় দিতে হবে।
×