ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী সেলিম

ডেঙ্গু মোকাবেলায় আগাম পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৩০ মে ২০২০

ডেঙ্গু মোকাবেলায় আগাম পদক্ষেপ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী আগামী ৩০-৪০ দিনের মধ্যে মশক লাভা ফুটে ডেঙ্গু জ্বরের সর্বনাশা মশক ‘এডিস’ পূর্ণাঙ্গ মশকে পরিণত হওয়ার পূর্বেই তার বংশ ও নিশ্চিহ্ন করার ব্যাপক ও বিস্তারিত জরুরী পদক্ষেপ ও কর্মসূচী গ্রহণ করা উচিত এখনই। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী করেনাভাইরাস প্রতিরোধের গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বহু সংখ্যক রোগী ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু জ্বরের মারাত্মক জীবাণু বাহক এডিস মশার জন্মস্থান ও বসবাসের স্থানগুলোকে চিহ্নিত করে জীবিত মশা ও তার লাভাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার সর্বাত্মক ব্যবস্থা ও কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এখনই। পাশাপাশি ম্যারেরিয়া, চিকুনগুনিয়া জ্বরের জীবণুবাহক মশাসহ যেমন ‘কিউলিস্ক’ মশার বসবাস, অবস্থান ও বংশ বৃদ্ধির উৎসস্থল, শহরের স্ট্রম স্যুয়ারেজ ড্রেন, পয়ঃপ্রণালীর পানি নিষ্কাশন ড্রেনসহ আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনগুলোতে শক্তিশালী ও কার্যকরী মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করে নতুন শক্তিশালী কর্মক্ষম বেকার যুবকদের নিয়োগ ও যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করে শহর ও বিভাগীয় জেলা পর্যায়ে নিয়োজিত করা উচিত। ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা এলাকার জলাশয়গুলো সারা বছরই কচুরিপানায় ভরা থাকে। ঐ কচুরিপানায় মশার বংশবৃদ্ধিকরণসহ, সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনের কাজে ব্যবহৃত মেশিনের সাদা ধোঁয়া সংবলিত ওষুধের ক্রিয়ায় মশককূল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না হয়ে কয়েক ঘণ্টা নিস্তেজ থেকে গুলশান, বনানী, বাড্ডা ও শিল্প অঞ্চলের আশপাশের কচুরিপানায় ঘাপটি মেরে থেকে, অধিক শক্তি সঞ্চয় করে নগরবাসীকে বিষাক্তভাবে আক্রমণ করে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া জ্বরের সর্বাত্মক জীবাণু মানব শরীরে প্রবেশ করে দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। দুই সিটি কর্পোরেশকে মশক নিধনের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত : ঢাকা শহরের সকল ডোবা নালা ঝিল বিল থেকে যুগ যুগ ধরে জমাকৃত স্তূপকৃত ভাবে সাজানো কচুরিপানা ধ্বংস করে ঐ সকল ডোবা নালাকে সম্পূর্ণভাবে মশামুক্ত করে জনসাধারণের ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ধনের কর্মসূচী নিতে হবে। দ্বিতীয়ত : সকল ঢাকনা যুক্ত ড্রেন, স্ট্রম স্যুয়ারেজ ড্রেন, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশনে ড্রেনগুলোর অভ্যন্তরে শক্তিশালী ওষুধ, আধুনিক স্প্রে-মেশিনের মাধ্যমে আঘাত করে প্রয়োগ করতে হবে। ঢাকা শহরসহ সকল জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের খাল, বিল জলাশয় পুকুর থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হলেই মশক বংশ বিস্তার রোধ করা হবে এবং দেশের মানুষ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রকোপ থেকে নিরাপদে কিছুটা হলেও সুস্থ থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সর্বাত্মক মনিটরিং, পরামর্শ প্রদান ও সার্বিক তদারকির নিমিত্তে একটি বিশেষ শেল গঠন করে জাতীয় পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন এখনই। দেশের সকল হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ, বিভিন্ন গ্রুপের রক্ত, বিছানার ব্যবস্থা করে একটি সম্ভাব্য জরুরী অবস্থাকে মোকাবেলা করার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানদের চব্বিশ ঘণ্টার জন্য ডিউটিতে থাকার প্রস্তুতিসহ ছুটি বা কাজে অনুপস্থিতি থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সংক্রান্ত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের প্রতিকার, প্রতিহত এবং মোকাবেলা করার একটি একক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা পরিচালনার অভাব রয়েছে। দেশব্যাপী বিস্তার লাভকারী এই জাতীয় মহামারী নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরিচালনায় ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কেন্দ্র’ চালু করা উচিত। এই কেন্দ্রই নিয়ন্ত্রণ করবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধ চিকিৎসা ও সতর্কতামূলক নির্দেশনা জারির দেশব্যাপী কার্যক্রম। সামরিক বাহিনীর মেডিক্যাল কোরের প্রধান অথবা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক/বেসামরিক অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তিদের পরিচালনায়, ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরঞ্জামাদিসহ এই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কেন্দ্রটির জরুরী কার্যক্রমসহ স্থাপন করা উচিত। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়া জ্বরের মতো ভয়াবহ জ্বরের ভবিষ্যত মোকাবেলার জন্য একটি শক্তিশালী বিভাগ বা টিমকে এখনই পর্যাপ্ত, প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, ওষুধ প্রয়োগ থেকে শুরু করে তার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও জনসচেতনতার কর্মসূচী সংবলিত একটি বিশেষ শক্তিশালী ‘টাস্কফোর্স গঠন করে সদা প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র অথবা আঞ্চলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিকভিত্তিক বিশাল প্রশস্ত যেকোন একটি স্থানে ঢাকা শহর ও আশপাশের সম্ভাব্য এলাকার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য সকল সাজ সরঞ্জাম ওষুধপত্র টেস্টিং কিট ও পর্যাপ্ত বেডসহ এই কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্রটির চালু থাকা উচিত। এটা ছাড়া ঢাকা শহরের সকল সরকারী কমিউনিটি সেন্টারগুলোকে ডেঙ্গুর প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে টেস্টিং কিট ওষুধপত্রসহ প্রস্তুত করা উচিত। দেশের সকল বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রগুলোকে ও যথাযথভাবে জরুরীভাবে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জনগণের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার এবং বৃষ্টির মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও অঞ্চলে এই ডেঙ্গু জ্বর তার বিস্তৃতি মোকাবেলা করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও কার্যক্রমকে আরও জোরদার ও শক্তিশালী করতে হবে। লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক
×