ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

শেখ হাসিনা ফিরে এলেন এবং অতঃপর

প্রকাশিত: ২০:১২, ৩০ মে ২০২০

শেখ হাসিনা ফিরে এলেন এবং অতঃপর

১৯৮১ সালের ১৭ মে দিনটি আমার জীবনস্মৃতির একটি বড় ঘটনা। আজ থেকে ৩৯ বছর আগের কথা। বৈশাখ মাস কেবল শেষ হলো, ঝড়ের মৌসুমটা তখনও পূর্ণ যৌবন নিয়ে জগত সরকারকে কখনও কখনও লন্ডভন্ড করে চলে যাচ্ছিল। সেদিনও তেমনি প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারে। সময়টা মনে নেই তবে পূর্বাহ্নই হবে। দীর্ঘ ৬ বছর বাধ্যতামূলক প্রবাস জীবন কাটিয়ে শেখ হাসিনা তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখলেন। স্বজন হারানোর বুক ভরা কান্না তার চোখে-মুখে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। বরং বলা যায় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে এক নজর দেখার জন্য তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সভামঞ্চ এবং সেখান থেকে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন হয়ে ৫ নম্বরের সুধাসদন পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে অপেক্ষমাণ অর্ধকোটি মানুষের চোখের জলের সঙ্গে শেখ হাসিনার রোদনভরা অশ্রু মিশে বাংলার জল মাটি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে তাকে স্বাগত জানাচ্ছিল। অপেক্ষমাণ জনতার চোখেও আবদ্ধ বেদনার অশ্রু তার আগমনে জনতা যতটা না আনন্দিত হয়েছিল তার চেয়ে বেশি শোকার্ত হয়ে ওঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন করে স্মরণ করে। ছয় বছর পর প্রিয় জাতির পিতাকে নতুনভাবে মনে করে জনতার চোখেও অশ্রুগঙ্গা বইতে শুরু করে। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে শেখ হাসিনা একটা ট্রাকের ওপর উঠলেন। সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পেছনে আরেকটি ট্রাকে নেতাদের সঙ্গে আমি উঠেছিলাম। নেতারা আমাকে সামনে ঠেলে দিয়েছিলেন এজন্য তখন আমি দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র পলিটিক্যাল করেস্পন্ডেন্ট। এই সুযোগে আমি অল্প দূর থেকে শেখ হাসিনার যে বেদনা ভরা মুখমন্ডল সেদিন দেখেছিলাম তার বর্ণনা ১০ শতাংশ দেয়াও আমার বিদ্যেয় কুলুবে না। আজও না। মানিক মিয়া এভিনিউর আশপাশে সংসদ চত্বর খামারবাড়ি মিরপুর রোডে লাখো লাখো জনতার সামনে একপাশে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আরেকপাশে আব্দুর রাজ্জাক কে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন শেখ হাসিনা দুই চোখে অশ্রুর ধারা। খুবই সাদামাটা পোশাকে মাইক ধরলেন, ‘ভাইয়েরা মা বোনেরা মুরব্বিরা আমার, বাবা-মা-ভাই ভ্রাতৃবধূ সবাইকে হারিয়ে আপনাদের মাঝে বাংলার মানুষের মাঝে এসেছি। আপনাদের মধ্যে বাংলার মানুষের মাঝে আমি আমার বাবা-মা ভাই ভাতৃবধূদের খুঁজে পেতে চাই। জানি আপনাদের স্নেহ থেকে আমি বঞ্চিত হবো না। আমি আপনাদের মাঝে থেকে কাজ করতে চাই। রক্তের দেশে রক্ত নয় হিংসার জবাবে প্রতিহিংসা নয় অর্থ সামাজিক রাজনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্য সামাজিক অবক্ষয় চিরতরে দূর করে বাংলার গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। সকল বঞ্চনার অবসান ঘটাতে চাই। এইভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা কায়েমের মাধ্যমে সকল হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে চাই। আমি আপনাদের দোয়া চাই’ সেই ১৭ মে ১৯৮১ থেকে ১৭ মে ২০২০ এই ৩৯ বছর পরও শেখ হাসিনাকে দেখি এক মানবতাবাদী মহীয়সী মানবী রূপে। ঝড়ঝঞ্ঝা জলোচ্ছ্বাসে মানুষের পাশে আর্তমানবতার সেবায়। তাকে দেখি এই করোনাকালেও ঘুম নিদ্রাহীন মানুষের কথা বলতে। কখনো তার সভাকক্ষে বৈঠক করতে কখনো সরকার ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে যাবতীয় নির্দেশনা দিতে। করোনার প্রথম দিন থেকে এইভাবে অতিবাহিত করছেন। এতটুকু ক্লান্তি নেই নিরলস কাজ করে চলেছেন। এমনকি গ্রাম বাংলার কোন্ অঞ্চলে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছেনি কোথায় ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির খবর ছাপা হয়েছে সবকিছু দেখছেন একাগ্রচিত্তে। গণভবনে বসেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত যাবতীয় ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছেন। নিজে ডাক্তার নন তবুও বিশেষজ্ঞের মতো করোনা প্রতিরোধে বা করোনা আক্রান্ত হলে কি কি করতে হবে কি কি করা যাবে না সহজ করে সব নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী তাবত বড় বড় দেশের কাছেও ঈর্ষণীয় গতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কর্মধারা আকস্মিক করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পরও এতটুকু ভেঙ্গে পড়েননি। দীর্ঘদিন কৃষি শিল্প ক্ষেত্রে কর্মহীন হয়ে পড়ার কারণে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে সেজন্য আগে থেকেই একটার পর একটা ঘোষণা দিয়ে চলেছেন। দেশে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতে শুরু করেছে মানুষ কাজে নেমে পড়েছে যদিও এখনও লকডাউন কার্যকর এবং অপরিহার্য। * এই আমাদের প্রধানমন্ত্রী * এই আমাদের শেখ হাসিনা * জাতির পিতার কন্যা * বাংলাদেশের রাষ্ট্রনেতা * Mother of humanity কয়েকদিন পূর্বেই গত হয়েছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর যা বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক আনন্দের দিন। গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার দিন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান করোনাকালেও এর প্রাসঙ্গিকতা অতুলনীয়। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ’ আজকের বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে নজরুলের ওই আসমানী তাগিদের উল্লেখ অর্থাৎ দেশের কর্মহীন অসহায় গরিব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বান কবির দ্বিতীয় লাইনে বিদ্যমান। কবি কিন্তু পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দ থেকে দূরে থাকার কথা বলেননি। বরং নিজের আনন্দের মাঝে অন্যদেরও শামিল করার বা আনন্দ ভাগ করার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো যারা কবি কাজী নজরুলকে এককালে কাফের বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি তারাই আবার তাকে মুসলমানের কবি অভিধায় ভূষিত করেছেন। তারা আমাদের মতো সাদা কাপড়ের ভদ্রলোকেরা কবির ওই তাগিদ অনুভব করছেন না। * এখানে শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম * এখানে শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আপনজনসহ হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সহধর্মিণী সহযোদ্ধা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৯ বছরের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল দুই মুক্তিযোদ্ধা পুত্র শেখ কামাল শেখ জামালও ঐ হত্যাকান্ডের শিকার হন। অন্য বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে দুর্দান্ত যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরানিয়ারাত ও তার চার বছরের নাতি সুকান্ত বাবুকেও রেহাই দেয়নি খুনীরা। শেখ হাসিনা তখন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ জার্মানিতে স্বামী খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কাছে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এমন জঘন্য হত্যাকা- কেবল আইয়ামে জাহেলিয়াত বা কারবালার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। খন্দকার মুশতাক মিলিটারি জিয়া মিলিটারি ফারুক-রশীদ ডালিমরা একেকজন সীমারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। মুশতাক জিয়া হত্যাকা- কতখানি জড়িত ছিল তার প্রমাণ মেলে এই দুই খুনী অপর খুনী কর্নেল ফারুক-রশিদ গংদের নিরাপদে যেতে সাহায্য করে। জিয়া তো তাদের বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বড় বড় পদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। ব্যাঙ্ককে ফারুক ইন্টারভিউ দিয়ে জিয়ার অংশগ্রহণ প্রকাশ করে। মিলিটারি জিয়া অল্পদিনেই মুশতাককে বঙ্গভবন থেকে অর্থাৎ ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা যাতে দেশে ফিরতে না পারে সেজন্য হেনো ষড়যন্ত্র নেই যা করেননি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে পথে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মিলিটারি জিয়া তখন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট (অবশ্যই মিলিটারি ক্যুর মাধ্যমে দখল করে)। তাইতো দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধার দারিদার জিয়া প্রথমেই রাষ্ট্রের শহীদদের রক্তে লেখা সংবিধানে হাত দেয়: * সরকারী গণমাধ্যমে জয় বাংলা ধ্বনি নিষিদ্ধ করে পরিবর্তে পাকিস্তান জিন্দাবাদ আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ প্রতিষ্ঠা করে। * বাঙালী জাতীয়তাবাদের স্থলে পাকিস্তানী আদলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে * বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তানী আদলে রেডিও বাংলাদেশ নাম দেয় * সংবিধান থেকে সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেয় জিয়ারা ভাবে দেশ তো পাকিস্তান হয়ে গেল। শেখ হাসিনাও আর দেশে ফিরতে পারবে না এবং সে নির্বিঘ্নে পাকিস্তানের তল্পি বহন করবে। কিন্তু শেখ হাসিনা বিপ্লবী, বিপ্লবী তার বেড়ে ওঠা তাকে ঠেকায় কার সাধ্য। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ঢাকা ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মত ভোটে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপরেই শেখ হাসিনা সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলার মাটিতে পা রাখেন। আমার মনে হয় মিলিটারি জিয়া যত বড় ক্ষমাধরই হোন বাংলার জননেত্রীর কাছে তা তুচ্ছ। এটি জিয়া বুঝতে পেরে ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বাধা দিতে সাহস পাননি। অবশ্য আমি আগেই চিনেছি সাহসী শেখ হাসিনাকে। একসঙ্গে ১৯৬৭, ৬৮, ৬৯ এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে কলাভবন থেকে কার্জন হল ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মিছিলের অগ্রভাগে দেখেছি। আজকের শেখ হাসিনাকে সেদিনও কিছুটা চিনতে পেরেছিলাম। ‘মর্নিং শওজ দ্য ডে’ সেদিনের শেখ হাসিনা আজকে শেখ হাসিনার মর্নিং। তার সঙ্গে জাতির পিতার রক্ত আর পারিবারিক ঐতিহ্য যোগ হয় তাকে আজকের বিশ্বের মানবিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা ভেবেছিলাম বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। জিয়ার মতো কট্টর পাকিস্তানী মিলিটারির দোসর যখন ক্ষমতায় তখন দেশটাকে একদিকে যেমন পাকিস্তানের মতোই পশ্চাদপদ করে রাখবে অপরদিকে পাকিস্তান বানাতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহপাকের অশেষ কৃপায় তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত নেতৃত্ব কাজ তথা জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তার কন্যাকে পাঠিয়ে দিলেন। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলার মানুষকে নিয়ে জিয়া এরশাদ সাত্তার খালেদার মিলিটারি শাসন স্বৈরশাসন তছনছ করে দিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দিশেহারা আওয়ামী লীগকে পথ দেখালেন সংগ্রামী করে তুললেন সাহসের সঙ্গে পথ চলার পথ দেখালেন ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসলেন এবং এক এক করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনলেন। এখানে একটি ব্যাপার খুবই ইন্টারেস্টিং। আওয়ামী লীগ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন বিএনপি খালেদা জিয়াকে সামনে আনল শেখ হাসিনাকে কাউন্টার করার জন্য। প্রথমে খালেদা জিয়াকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়। পদের নাম দেয়া হয় ভাইস-চেয়ারপার্সন। তখনও বিচারপতি সাত্তার দলের চেয়ারম্যান। ১৯৮৩ সালে এক ক্যুর মাধ্যমে বিচারপতি সাত্তারকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। অনেকদিন আগের কথা তো। যদ্দূর মনে পড়ে সেই ক্যু সংগঠিত করেন দুজন অব মিলিটারি একজন জামাল উদ্দিন আরেকজন জাফর ইমাম। প্রথমজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দ্বিতীয়জন মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল। রীতিমতো অস্ত্রের মুখে বিচারপতি সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ঘোষণা করে ম্যাডাম ডাকা শুরু করে। দলের সভাপতি না বলে চেয়ারপার্সন নেত্রী না বলে ম্যাডাম ডাকা এসবের পেছনে যে মানসিকতা কাজ করেছে তা একটি প্রবাদ দিয়ে বলতে হয়- কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন একে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাকরণে ফেললে হয় কানা মেয়ের নাম পদ্মলোচনী। আসলে বিষয়টি হলো খালেদা জিয়া দেখতে সুন্দর তাই তাকে ম্যাডাম কুইনও ডাকা যেতে পারে। আর সভাপতি বা নেত্রীর চেয়ে চেয়ারপার্সন একটু ভারি এবং মিলিটারির সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু ভেতরে জিনিস না থাকলে কি আর বাইরে জ্বলে ওঠে। খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়েও ম্যাডামের মতো নানান মুখরোচক গল্প আছে। একবার শুনি ৫ আগস্ট আবার বলে ১৯ আগস্ট, তাতে কুলোয়না তাই একেবারে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবস ১৫ আগস্ট জন্মদিন ঘোষণা করে কেক কাটা শুরু করে। একে স্বাভাবিক বলা যায় না, বিকৃত আনন্দ বলা যায়। কখনও শোনা যায় ক্লাস ৯ পর্যন্ত কখনও কলেজে পড়েছেন এসব নিয়ে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে হাসাহাসি শুরু হচ্ছিল তখন বলা হলো স্বশিক্ষিত। কিন্তু যত নামেই ডাকা হোক কিন্তু আজিমপুর গবর্নমেন্ট হাইস্কুল, ইডেন গার্লস কলেজ (এখানে নির্বাচিত ভিপি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানীয় গ্র্যাজুয়েট (বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণে ফাইনাল দিতে পারেননি) এবং সঙ্গে যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য জন্ম থেকেই যিনি কবি ভালোবাসিয়াছেন তার সঙ্গে এক তথাকথিত স্বশিক্ষিত নারীর কি কোন তুলনা চলে। শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার জন্য নামের পাশে দেশনেত্রী কখনও আপোষহীন নেত্রী জুড়ে দেয়া হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে কখনও হোটেল পূর্বাণী ৪৮ ঘণ্টা হাইড করে বা কখনও অন্যত্র চারদিন নিরুদ্দেশ থেকে তার আপোষহীন নেতৃত্ব প্রমাণ করতে যেয়ে আরও হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পড়েন। তারপরও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নাকি তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। হ্যাঁ এটা ঠিক মিলিটারি জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আলবদর বাহিনীর দুই নেতাকে মন্ত্রী বানিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। মিলিটারি জিয়া যেমন যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে এবং পাকি মিলিটারি প্রধান এজেন্ট গোলাম আযমকে দেশে এনে প্রতিষ্ঠিত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিএনপি গণতন্ত্র বা বহুদলীয় গণতন্ত্র সব রাজাকারতন্ত্র আলবদরতন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। এইভাবে ভাঙ্গা কোমর নিয়ে লাফাতে যেয়ে আজ কারাভোগী। যদিও এখন প্যারোলে ছয় মাসের জন্য গুলশানের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তার পুত্র দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে পলাতক আছেন। লোকে বলে প্রতিটি ইলেকশন মৌসুমে তারেক রহমানের শত শত কোটি টাকা পকেটে ঢোকে। অর্থাৎ নমিনেশন বাণিজ্য। বিগত ২০১৮-এর নির্বাচনে এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে নমিনেশন দিয়ে তারেক তো পকেট ভরালেন। মাঠ রইল ফাঁকা। এজেন্ট দেবার মতো কর্মী খুঁজে পেলেন না। অতএব আওয়ামী লীগের ওপর কারচুপির দোষ চাপিয়ে দিলেন। আমার এলাকা চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে প্রথমে একজনকে নমিনেশন দেয়া হয় নির্বাচনের তিন দিন আগে আরেকজনকে পাঠানো হয় বাজারে নিলামের মতো অর্থাৎ হাইইয়েন্ট ভিডারকে অবশেষে পাঠানো হয়। কিন্তু বেচারা ১/২ দিনের বেশি এলাকায় থাকেননি। বিএনপির কর্মীরা এমনই হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে ঘরে ঢুকে গেল। বেরোলো নির্বাচনের পর। এসব দেখে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধু তখন বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন করত পঁচাত্তরের পর মশিউর রহমানের সঙ্গে বিএনপিতে যোগ দিলেন ঠিকই কিন্তু বেশিদিন নয় নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেন কথায় কথায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কারিশমায় বলেছিলেন শেখ হাসিনাই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যোগ্য এবং খালেদা জিয়া গুলশানে বসে রাজনীতি করুক জাতি উপকৃত হবে। অপরদিকে শেখ হাসিনা ১৭ মে ১৯৮১ থেকে ১৭ মে ২০২০ এই ৩৯ বছর বাংলাদেশের রাজনীতি একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছেন। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন প্রশ্ন করছেন- * আপনার হাতে কি ম্যাজিক আছে? * কি করে করলেন অতসব? শেখ হাসিনা এর উত্তরে দুটি কথা বলেন * আমাদের উর্বর মাটি আছে * আমাদের পানি আছে * আমাদের মানুষ আছে * আমাদের দেশপ্রেম আছে * বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে * আমি তাদের ভালোবাসি একে কাজে লাগিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কায়েম করে চলেছি। অনেকখানি রাস্তা পার করে চলেছি। আমাদের পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না পথে পথে কাঁটা ছিল এবং আমাদের কাঁটা সরিয়ে হাঁটতে হচ্ছে কিন্তু সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা যখন দ্রুতগতিতে সোনার বাংলার পথে এগিয়ে চলেছি ঠিক তখনই বিশ্বব্যাপী নেমে এলো কোভিড ১৯ বা করোনাভাইরাস। আমাদের বেশিরভাগ প্রজেক্টের গতি থেমে গেল শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেল তারপরও বলব আমাদের কৃষিজীবী ভায়েরা তাদের জীবন বাজি রেখে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন এবং এবারও বোরো বাম্পার ফলন হয়েছে মাশাআল্লাহ। করোনাভাইরাস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর বিএনপির বক্তব্য করোনা মোকাবেলায়- * সরকার ব্যর্থ * সরকার ত্রাণ লোপাট করছেন এমনই অভিযোগ উত্থাপন করে চলেছিল। এতদিনে প্রায় দু মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। যতই বলুক সরকার ব্যর্থ কিন্তু সরকার তার কাজ করে চলেছেন: * শুরুতেই ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেন * তারপর কৃষকের জন্য প্রণোদনা ক্ষুদ্র দোকানদারদের জন্য প্রণোদনা * প্রচুর ত্রাণ তৎপরতা * কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করতে হবে সেজন্য বেতার টিভির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতিকে সচেতন করে চলেছেন * সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন ঘোষণা করেন মানুষ যাতে ভিড় করে জনসমাগম করে করোনা সংক্রমণ করার পথ থেকে দূরে থাকে। * সকল শপিংমল বন্ধ ধর্মালয়সমূহে নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি পদক্ষেপ নেন * করোনা একটি অতীব ছোঁয়াচে ব্যাধি, যা দেখা যায় না যার কোন মেডিসিন আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি, না প্রতিরোধক না প্রতিশোধক। আমাদের ডাক্তারগণ কেবল আইসোলেশন আর কোয়ারেন্টাইন এই দুটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেছেন। ওষুধ দিচ্ছেন সর্দি কাশি জ্বরের ডাক্তার নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী কর্তব্যরত পুলিশ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সচেতনতা কথা বলা হচ্ছে বেতার টিভির মাধ্যমে। * সেই সঙ্গে সাবান দিয়ে বারেবারে হাত ধোয়ার এবং স্যানাটাইজার হাতে মাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে * এককথায় সম্ভাব্য কোন দিকই সরকার বাদ দিচ্ছে না * সবচেয়ে বড় কথা হলো করোনা বাংলাদেশে আসার আগ থেকেই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতিকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন * ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দিলেন সচিবসহ সচিবালয় জেলা-উপজেলা ক্যাডার সার্ভিসের সদস্যদের। তখন অবশ্য বেশ কয়েক স্থানে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কতিপয় জনপ্রতিনিধির ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির খবর মিডিয়ায় আসছিল এটি বিএনপি এবং তাদের সহযোগী সোশ্যাল মিডিয়া খুব প্রচার চালাচ্ছিল। * প্রধানমন্ত্রীর ত্বরিত পদক্ষেপে তাও বন্ধ হয়ে গেল * প্রধানমন্ত্রী এবার ত্রাণ বিতরণে যাতে কোন ঘাটতি না থাকে সেজন্য বিভিন্ন গ্রুপে তালিকাভুক্ত করে ত্রাণ পাঠাচ্ছেন- ক. ভিজিএফ কার্ড গ্রুপ খ. ১০ টাকা কেজি চাল কার্ড গ্রুপ গ. বিশেষ বরাদ্দের চাল গ্রুপ ঘ. বিধবা ভাতা গ্রুপ ঙ. বয়স্ক ভাতা গ্রুপ চ. মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রুপ ছ. ছাত্র ছাত্রী উপবৃত্তি গ্রুপ জ. একজন মানুষও যাতে ঘরহীন না থাকে সেলক্ষ্যে যার জমি আছে ঘর নেই তাকে ঘর করে দেয়া এবং যার জমিও নেই ঘরও নেই তাকে জমি ঘর করে দেয়া ঝ. এসব সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক সকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরই মাঝে দু-তিন দিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘোষণা দেন- * ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে একেক পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে তালিকাভুক্ত ব্যক্তির মোবাইল ফোনে চলে যাচ্ছে * ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে (৫০ গুন ৪/৫)= দুই থেকে আড়াই আড়াই কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই অনুদানের আওতায় এলো। এটি নজিরবিহীন। সর্বশেষ যে কথাটি বলতে হচ্ছে তা হলো বিএনপি দিশেহারা হয়ে প্রথমে ঘোষণা দিল করোনার দেড় মাস অতিক্রান্ত হবার পর যে তারা দুই কোটি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করবে। ২/৩ দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে শুনলাম (টিভি) এরই মধ্যে তারা ৩০ লাখের মতো পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে। তদন্ত করলে দেখা যাবে মির্জা সাহেবকে বলতে হবে তাই বলছেন। যেমন ‘লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারে, হিসেব করিয়া দেখে সাড়ে তিন হাজার..’ । একটা পরামর্শ দেব খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করানোর চেষ্টা অনেক হয়েছে কোন লাভ হয়নি ভবিষ্যতেও হবে না। নিজের ওজন মনে রেখে পথে নামতে হয়। ঢাকা- ২১ মে ২০২০ লেখক : এমপি, সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×