ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার উৎস নিয়ে তদন্ত

প্রকাশিত: ২০:০৯, ৩০ মে ২০২০

করোনার উৎস নিয়ে তদন্ত

বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত করোনাভাইরাসের বহুল বিস্তারে আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে দিশেহারা, শঙ্কিত মানবগোষ্ঠী। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে উৎপত্তি এই ভাইরাসটি প্রথমে এখানেই তার সর্বব্যাপী বিস্তারটিকে দৃশ্যমান করে তোলে। চীন যখন উহান শহরের এই সংক্রমণটির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে তখন সারা পৃথিবী ভ্রমেও ভাবতে পারেনি এই ছোঁয়াচে রোগটি কি মাত্রায় বিশ্বমানবকে বিপন্নতার আবর্তে ফেলে দিতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব তো নয়ই। বৃহত্তর ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত বিশ্ব, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ অর্জন জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রয়োগ করতে সক্ষম তাদেরও আস্থা ছিল করোনা সংক্রমণকে তার সর্বব্যাপী বিস্তার রুখতে পারবে। কিন্তু সেই ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করা হলো কোভিড-১৯ হিসেবে। যার বিস্তার তখন অবধি চীন পর্যন্ত ছিল। কিছুদিন চীন তার সচেতন দায়বদ্ধতায় শুধু উহানকে অবরুদ্ধ করে অন্য কোন জায়গায় সংক্রমিত হতে প্রতিরোধ করার ব্যাপারে পূর্ণ সফলতা দেখায়। যখন ক্রমে ক্রমে এই করোনা বিশ্বব্যাপী তার সংক্রমণের তান্ডব শুরু করে দেয় তখন সব দেশেই এর বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে অভিযোগের আঙ্গুল তোলে চীনের বিরুদ্ধে। ধারণা করা হয় উহানের কোন গবেষণাগার থেকেই এই বহুল আলোচিত সংক্রমণ ব্যাধিটির উৎপত্তি হয়েছে। চীন দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে জোরালো মত দেয় অন্যান্য ভাইরাসের মতো এই রোগটিও প্রকৃতি থেকেই উৎপত্তি। তবে আমেরিকা তো বটেই, আরও অনেক দেশ এর উৎপত্তি নিয়ে তদন্ত এবং গবেষণার নিরপেক্ষতায় ঐকমত্য প্রকাশ করে। ফলে করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক মহামারীর উৎস এবং সংক্রমণের ব্যাপারটি শতাধিক রাষ্ট্র একযোগে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলে। ১৮ মে সোমবার জেনেভায় করোনা পরবর্তী ৭৩তম বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের সভায় এই ভাইরাসকে নিয়ে নতুন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আফ্রিকার ৫০টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য রাষ্ট্রসহ শতাধিক দেশ করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব উত্থাপনকে সমর্থন করে। ১১৬টি দেশ এই সময়োপযোগী প্রস্তাবনাকে দৃঢ়ভাবে এর অনুকূলে তাদের অভিমত ব্যক্ত করে। নিয়মানুযায়ী প্রথমেই উত্থাপন করা হয় খসড়া প্রস্তাব। সেখানে সবাই একমত হয়ে স্বাক্ষর করে। কেউ কেউ প্রস্তাবটি স্বাক্ষর না করেও ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে। ব্রিটেন, কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়া প্রস্তাবটির বিষয়ে সম্মতিসূচক সাড়া প্রদান করে। চীনের অভিমত ছিল কিছুটা নেতিবাচক। প্রথমত ক্ষুব্ধ হয়ে প্রস্তাব উত্থাপক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সতর্কও করে দেয় চীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও দোষারোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাসের বহুল বিস্তারে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই ৭৩তম সভায় বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও তার বক্তব্যে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আসা এই ভাইরাসটির উৎস খুঁজতে একটি সম্মিলিত পর্যালোচনা হতে পারে বলে জানান। তবে সেটা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষতার দাবি করে। শুধু তাই নয়, আগামী দুই বছর এই ভাইরাসটির মোকাবেলায় ২০০ কোটি ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেন চীনা সরকারপ্রধান। তবে তিনি টিকা আবিষ্কারের প্রতিও বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এই প্রতিষেধক যদি প্রথমেই চীন তৈরি করতে পারে তাহলে তা বিশ্বপণ্য হিসেবেও বিবেচিত হবে। আর ফরাসী প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে অভিমত দেন যে দেশই প্রতিষেধক আবিষ্কার করুক। তা হতে হবে সর্বজনীন। সবাইকে যদি এর আওতায় আনা না যায় তাহলে সংক্রমণ নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে সময় নেবে না। মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে তর্ক-বিতর্কের অবকাশ কিংবা সুযোগ থাকে না। বেচা-বিক্রির ব্যাপারও নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিধি মোতাবেক নতুন প্রতিষেধক বিশ্বের সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তা না হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। এঞ্জেলা মের্কেল তার অভিমতে আশা ব্যক্ত করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি বৈধ ও বৈশ্বিক সংস্থা, যা সর্বমানুষের কল্যাণে সমন্বিত একটি স্বাস্থ্যবান্ধব কাজের জায়গাও।
×