ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরমুখী মানুষ

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২২ মে ২০২০

ঈদে ঘরমুখী মানুষ

করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনের ঘোষণা শেষ অবধি বাড়ানো হয়েছে ৩০ মে পর্যন্ত। দুই মাস ধরে চলা এই অবরুদ্ধতার সময়কালেও অনেক মানুষকে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। অকারণে, অপ্রয়োজনে মানুষ বের হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মহাসড়কে করোনা দুর্যোগে টহল দিয়েও মানুষকে ঘরে বন্দী করতে পারেনি। দফায় দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রেক্ষিতে অফিস আদালতের সীমিত কার্যক্রম সেভাবে বাড়ানোও হয়নি। বরং অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদানে বার বার উৎসাহিত করা হয়েছে করোনার স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষায়। এরই মধ্যে পবিত্র রমজান মাস তার মাহাত্ম্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের নিত্যজীবনে অন্যরকম প্রভাব ফেলেছে, যদিও তা প্রতিবারের মতো নয়। মসজিদে, জামাতে তারাবি পড়া নিষিদ্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তা শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধির আওতায় সেখানেও অনুমতি মিলেছে। ঈদের কারণে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ছাড়পত্র দেয়া হলেও অনেক বিচক্ষণ ব্যবসায়ী তাদের কর্মস্থল খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। সঙ্গত কারণেই এবারের ঈদের উৎসবে তেমন আনন্দের জোয়ার আসেনি। সীমিত পরিসরে ঈদের কেনাকাটার বাজার দৃশ্যমান হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধিকে তোয়াক্কা না করার চিত্র গণমাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। এবার সরকার প্রদত্ত ছুটির ঘোষণায় বার বার সতর্ক করা হয়েছে- কেউই ঢাকার বাইরে যেতে পারবে না। বিপরীতভাবে ঢাকায় আসার ব্যাপারেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই মুহূর্তে করোনার হট স্পষ্ট বৃহত্তর ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং পরবর্তীতে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই দুই ঝুঁকিপূর্ণ বিভাগসহ সারা দেশের সবখানেই ঘরমুখো মানুুষের চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এলেও বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে বিপরীত। নিয়মভাঙ্গার অপসংস্কৃতি ঈদের আমেজে সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও এবার চমক লাগার মতো গণপরিবহনে টিকিট বিক্রির হিড়িক ছিল না। বাস-ট্রেন-লঞ্চ, ইস্টিমারের কাউন্টার জনশূন্য। গণপরিবহনের বহুমাত্রিক মাধ্যমগুলো স্থবিরতার কঠিন বেড়াজালে। তবে সেটা বহুমাত্রায় দৃশ্যমান হয়েছে সড়ক-মহাসড়কে। শিকড়ের টানে গ্রামে ফেরা মানুষগুলোর অসহনীয় ভিড়ে করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকিকে কি মাত্রায় বাড়ানো হলো সেই হিসাব তো আসবে আরও কিছু পরে। জেলা থেকে বের হওয়া ও ঢোকার সব চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। বহু মানুষকে ফিরিয়েও দেয়া হয়েছে মাঝপথে। তবু থামানো যায়নি জনস্রোত। নদীপথে ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফেরি থেকে আরম্ভ করে স্টিমার, লঞ্চ সবকিছুর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবু ঘরমুখো মানুষ নদীপথে নৌকা, ক্ষুদ্র লঞ্চ, স্পীডবোটের মাধ্যমে পারাপার করেছে। মূল্যবান জীবনকেও বিপন্ন করতে তারা এক প্রকার মরিয়া। সামাজিক দূরত্ব আর স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটি পদদলিত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। ইতোমধ্যে সংক্রমণ বাড়ার লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে। মানুষ যদি নিজে সচেতন না হয় তার স্বাস্থ্যসম্পদ এবং জীবনকে সুরক্ষা দিতে, সেখানে এত বড় অশনিসঙ্কেতকে মোকাবেলা করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে হয়তো।
×