ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ৫ লাখ ইভেন্ট লজিস্টিক কর্মীর জীবিকা বন্ধ

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৬ মে ২০২০

করোনায় ৫ লাখ ইভেন্ট লজিস্টিক কর্মীর জীবিকা বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা দুর্যোগে দেশে প্রায় পাঁচ লাখ ‘ইভেন্ট লজিস্টিক’ কর্মীর জীবন-জীবিকা বন্ধ হয়ে গেছে। ‘ডেইলি’ ভিত্তিতে তারা ইভেন্ট লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। করোনাকালে কোন কাজ না থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের এখন সরকারী-বেসরকারী ত্রাণের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। সবাই ত্রাণও পাচ্ছেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের জীবন আরও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়েছে। ইভেন্ট লজিস্টিকস সাপোর্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ইএলএসএফওবি) আহ্বায়ক মোঃ ফুয়াদ শিহাব জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে ৬ হাজারের বেশি ইভেন্ট লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সারা বছর সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের নেপথ্যে নিবেদিত এই ছয় হাজারের বেশি ইভেন্ট লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন লাইট-এ্যান্ড-সাউন্ড, এলইডি-ডিসপ্লে, ভিজুয়াল, জেনারেটর, ক্যামেরা, মঞ্চনির্মাণ, সাজসজ্জা, ডেকোরেশনসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় পাঁচ লাখের বেশি কর্মী। গত দেড় মাস ধরে তাদের কোন কাজ না থাকায় মহাসঙ্কটের পড়েছেন। বেশিরভাগ কর্মীই দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন। এদের পরিবারে ৩ জন করে সদস্য ধরলেও ১৫ লাখ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে কঠিন পরিস্থিতি। কোভিড-১৯ রোগের কল্পনাতীত প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশের মতো দেশেও ব্যাপক হারে করোনা আক্রান্ত বেড়েই চলেছে। এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশব্যাপী মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের অনুষ্ঠান আয়োজনসহ এই শিল্প সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কার্যক্রম। ফলে রাতারাতি নিদারুণ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গেছে উদ্যোক্তারা। এর সঙ্গে সেসব কর্মী জড়িত তাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। তারা কিভাবে চলবেন এই চিন্তায় দিন রাত কাটছে। কেউ কেউ সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ পেলেও বেশির ভাগই ত্রাণের বাইরে রয়েছেন। ফুয়াদ শিহাব আরও বলেন, কঠিন এইে বাস্তবতার নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষায় ইভেন্ট লজিস্টিকস সাপোর্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ নামে একটি ফোরাম গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা এই ফোরামের মাধ্যমে যতটুকু পেরেছে নিজ নিজ জায়গা থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এখন আর আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজেদের অফিস ও গোডাউন ভাড়াই দিতে পারছি না। অফিস ও গোডাউনের ভবন মালিক আমাদের ভাড়া পরিশোধের তাগিদ দিচ্ছে। আমরা অনেকেই ভাড়া পরিশোধ করতে পারিনি। অনেকেই সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু কয় দিন সময় বাড়ানো যাবে। বাংলাদেশে ইভেন্ট লজিস্টিকস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তিনটি সংগঠন, ভিজুয়াল ইক্যুইপমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড (ভিইএসপিবিএস), লাইট এ্যান্ড সাউন্ড বিজনেস কো-অপারেটিভ এ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড (এলএসবিএ) এবং বাংলাদেশ সাউন্ড লাইট এ্যান্ড লজিস্টিকস রেন্টাল কো-অপারেটিভ (বিএসএলএলআর)। ইএলএসএফওবি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় মহান ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে আজ ইতিহাস হয়েছে কলরেডি, শব্দ প্রক্ষেপণ যন্ত্র সরবরাহকারী। একই ধারাবাহিকতায় আমরাও রাষ্ট্রীয়, শিল্প-বাণিজ্য-সংস্কৃতি ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি বিয়ে, ধর্মীয়, সামাজিক ও বিভিন্ন সভা-সেমিনারসহ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব বরাবর পালন করে আসছি। আমাদের ঘাম ঝরানো হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম রাতের আঁধারেই শুরু হয় আবার রাতের আঁধারেই বিলীন হয়ে যায়। দিনের আলোয় প্রকাশ হয় কেবল আমাদের তৈরি ঝলমলে সৃষ্টি। ফলে বিগত কয়েক যুগেও আমাদের এই একনিষ্ঠ অবদান সেইভাবে নজরে আসেনি সরকার কিংবা শীর্ষ মহলের। চলতি বছরও মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতিমূলক আয়োজনের অংশ হিসেবে বিগত বছর থেকেই আমরা বিভিন্ন খাত, যেমন, এলইডি ডিসপ্লে, স্পিকার, ট্রোস (স্টেজ ইকুইপমেন্ট) ও গোডাউনসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের জন্য ভাড়াসহ আগাম বুকিং দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কেনাকাটা খাতে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে অপ্রত্যাশিত এক ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে এই শিল্প। এখন অনেকেই সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে। ইভেন্ট লজিস্টিকস সহায়তা প্রদানকারী এসব আগামী দিনে কিভাবে টিকে থাকবে তা নিয়ে ভাবছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের এই খাতটির বিকাশ তুলনামূলক নতুন, ফলে বাংলাদেশের শিল্প তালিকায় ইতোমধ্যেই বিরাজমান কোন ক্যাটাগরিতে সেটি না পড়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে এই শিল্পটির টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বপরিচয়ে তালিকাভুক্ত হতে না পারার কারণে সরবরাহকারী হিসেবে বা ডেকোরেটর সার্ভিস হিসেবে আমাদের লাইসেন্স নিতে হয়, যা এই শিল্পের সঠিক পরিচায়ক হিসেবে আদৌ যথার্থ না। অথচ এই খাতটি হতে পারে একটি বিরাট ও সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারী তালিকাভুক্ত হতে না পারায় আমরা কোন ব্যাংকঋণের সুবিধাও পাচ্ছি না। পাচ্ছি না কোন সরকারী অনুদান বা প্রণোদনা। এসব কারণে আমাদের চাওয়া শিল্প, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি ও ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হোক। একটি স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে দেশের শিল্পনীতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার সুযোগ দেয়া দাবি জানানো হয়েছে।
×