ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেই

সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১৩ মে ২০২০

সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি খুবই কম। অনেক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাদের কাজ সীমিত করে দেয়া হয়েছে। সুযোগটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছেন মানুষ। তারা ইচ্ছেমতো বের হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই তাদের মধ্যে। ভেঙ্গে পড়ছে সামাজিক দূরত্ব ব্যবস্থাপনা। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার শর্তেই দেশে অঘোষিত লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বেড়েই যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সীমিত আকারে ও শর্তসাপেক্ষে গার্মেন্টস, দোকানপাট, শপিংমল থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় দোকানপাট খুলছেও। যদিও সেই অনুপাতে ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম হচ্ছে না। এতে করে স্বাভাবিক কারণেই রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। সে তুলনায় রাস্তায় পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে না। ফলে সড়কে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে যানবাহন। যেন দেখার কেউ নেই। মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য দেখা না যাওয়ার সুযোগ নিতে পারে ছিনতাইকারী, টানা পার্টি, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ নানা ধরনের দুর্বৃত্তরা। এমন সুযোগে যাত্রাবাড়ী থেকে ফিল্মিস্টাইলে ৫৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই রাস্তায় লোকজন ও যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহের প্রথম থেকেই রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে, রাজধানী তার আগের চেহারায় ফিরছে। যদিও দেশের কোন বাস টার্মিনাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি। পরিবহন মালিকরা ঈদের আগে স্বল্প পরিসরে হলেও যানবাহন চলাচল করার দাবি করে আসছেন। বিষয়টি সরকার ভেবে দেখছে। দূরপাল্লার গণপরিবহন না চললেও, মানুষ নানাভাবে গন্তব্যে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে মানুষ আবার ঢাকা আসা শুরু করেছে। রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল না করলেও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে বেপরোয়া গতিতে। এমন বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল করার মূল কারণ রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তুলনামূলক ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে। ঢাকার বড় বড় সড়ক এখন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, লরি, ট্রাক, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনের দখলে। সিগন্যাল মানার কোন বালাই নেই। কারণ প্রায় অধিকাংশ জায়গায়ই ট্রাফিক পুলিশের দেখা মিলছে না। এজন্য যানবাহনগুলোর মধ্যে কে কার আগে যাবে, তা নিয়ে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এমন সুযোগে যাত্রাবাড়ী থেকে ফিল্মিস্টাইলে ৫৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে পুলিশ সদস্যের আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের কোঠায়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্য। ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে সাত পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মারা যাওয়া পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্য। এতে করে মাঠে কাজ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যেমন বেশি, আবার তারা রীতিমতো আতঙ্কিতও। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কিছুটা ঢিলেমিভাব চলে এসেছে। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্য ও তাদের আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। যাতে পুলিশের মধ্যে আবারও কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে পারে। এজন্য তাদের নানাভাবে মোটিভেশন বা মানসিকভাবে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই সরকার কড়াকড়ি আরোপ করতে থাকে। গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। অকারণে মানুষকে ঘর থেকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সারাদেশে ভোর ছয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলার রাখার সময়সূচী বেঁধে দেয়া হয়। আর পাড়া মহল্লার দোকান দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এবং অহেতুক ঘোরাফেরা বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। আদালত দোষীদের জরিমানা করছে।
×