ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনেতা ইরফান খান আর নেই

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৩০ এপ্রিল ২০২০

অভিনেতা ইরফান খান আর নেই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকা ইরফান খান আর নেই। বুধবার সকালে মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে কোলন ইনফেকশনে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এই অভিনেতা কয়েক মাস ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। কয়েক মাস আগে টিউমারের চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে মুম্বাইয়ে ফিরেছিলেন তিনি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরফান খান তার জীবনের শেষ সময়গুলো তার প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ছিলেন। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ইরফানের ব্যক্তিগত মুখপাত্র এক বিবৃতিতে ‘খান এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন’ বলে জানিয়েছিলেন। ইরফানকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন এই মুখপাত্র। পরে ইরফানের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা নাকচ করেছিলেন তিনি। মাত্র চার দিন আগে শনিবার সকালে রাজস্থানের জয়পুর শহরে ৯৫ বছর বয়সে ইরফানের মা সায়ীদা বেগমের মৃত্যু হয়। বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে ইরফান মুম্বাই থেকে জয়পুর যেতে পারেননি, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৃত মাকে শেষ বিদায় জানান তিনি। তবে অসুস্থতার জন্যই এ অভিনেতা মায়ের শেষকৃত্যে অংশ নিতে পারেননি বলে ভারতের বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইরফানের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, হ্যাঁ, এটি সত্য। কোলন ইনফেকশনের কারণে ইরফান খান মুম্বাইয়ের কোকিলাবেনের আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন। তিনি চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে আছেন। তার শক্তি ও সাহস তাকে লড়াই করতে এবং এ পর্যন্ত আসতে সাহায্য করেছে। আমরা নিশ্চিত তার অসাধারণ মনোবল ও তার শুভাকাঙ্খীদের প্রার্থনা তাকে দ্রুত রোগমুক্ত করবে। ইরফানের স্ত্রী ও তার দুই সন্তানও হাসপাতালে ছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। ২০১৮ সালের মার্চে ইরফান খানের নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমার ধরা পড়ে। এর পরপরই চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যান। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইংরেজী মিডিয়াম’ চলচ্চিত্রের শূটিংয়ের জন্য তিনি ভারতে ফিরেন। এরপর তিনি আবার লন্ডনে চলে যান। সেখানে অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার পর সেপ্টেম্বরে আবার দেশে ফেরেন। ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে ‘ইংরেজী মিডিয়াম’ মুক্তি পেয়েছিল। এটিই তার অভিনীত শেষ ছবি। ১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি জয়পুরের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইরফান। ১৯৮৪ সালে তিনি নয়াদিল্লীর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি) ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ৫৩ বছর বয়সে স্ত্রী সুতপা সিকদার ও দুই সন্তান, বাবিল ও আয়ান খানকে রেখে চিরবিদায় নিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের এই খ্যাতিমান অভিনেতা। একজন ভাল মনের মানুষ ছিলেন -ফারুকী ॥ ইরফান খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমার পরিচালনায় ‘ডুব’ সিনেমায় অভিনয় করার মধ্য দিয়ে ইরফান খানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়। যৌথ প্রযোজনার এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি বাংলাদেশেও এসেছিলেন। তার মতো একজন অভিনেতার চলে যাওয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রায় বছরখানেক আগে ইরফান খান যখন লন্ডনে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তখন তার সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু সেটাই যে শেষ দেখা হবে কখনই ভাবতে পারিনি। ফারুকী বলেন, এই মুহূর্তে আসলে কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি যেমন অসাধারণ একজন অভিনেতা ছিলেন। তিনি শুধু একজন ভাল অভিনেতা নয়, একজন ভাল মনের মানুষ ছিলেন।
×