ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

টিসিবির মতো কম দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করবে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ

প্রকাশিত: ০০:৫০, ৩০ এপ্রিল ২০২০

টিসিবির মতো কম দামে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করবে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ

এম শাহজাহান ॥ সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মতো কম দামে ঢাকা মহানগরীতে ট্রাক সেলে ভোগ্যপণ্য বিক্রি করবে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ। সরকারের অনুরোধে রমজান মাসব্যাপী বাজারে বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বেসরকারী খাতের এই দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রাথমিকভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬টি স্থানে ১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পণ্যগুলো হচ্ছে-ভোজ্যতেল, চিনি ও এ্যাংকর ডাল। এর পাশাপাশি টিসিবি বাজারে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সরকারী এই উদ্যোগের ফলে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের জেলা শহরের ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারগুলো খোলা রাখা হবে। এছাড়া এসব বাজারের স্বাভাবিক কাজকর্ম যাতে বিঘিœত না হয় সেজন্য আড়ত কিংবা মোকাম মালিকদের সহযোগিতা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে শ্রমিক সরবরাহ নির্বিঘœ করতে শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাসে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশন দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে মেঘনা ও সিটি গ্রুপ ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রির ফলে বাজারের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিটি ও মেঘনা গ্রুপ ট্রাক সেলে প্রতি কেজি চিনি ৬৫, এ্যাংকর ডাল ৪০ এবং ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৮০ টাকায় বিক্রি করবে। বাজারের তুলনায় এই দাম কম হলেও টিসিবির তুলনায় কিছুটা বেশি। এদিকে, ইতোমধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশে পণ্যের কোন সঙ্কট নেই। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এ মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। দেশে কোন পণ্যের সঙ্কট নেই। তবে কৃত্রিম উপায়ে পণ্যের কোন সঙ্কট তৈরি করা হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রমজান উপলক্ষে এবং বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায়ও দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রমজান মাস উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। রাজধানীতে ১১৬টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। আর সারাদেশে ৫০৫টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাক সেলেই ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, গত ১ এপ্রিল থেকে রমজানের পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। শুরুতে ঢাকায় ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছিল। বাড়তে বাড়তে তা এখন ১১৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি এলাকায় ৯৯টি ও সিটির বাইরে ১৭টি ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার ২০০ স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলছে। একদিন অন্তর অন্তর ওই স্থানগুলোতে টিসিবির ট্রাক দঁাঁড়াচ্ছে। আর সারাদেশে এখন ৫০০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি চলছে। রমজানে নতুন করে টিসিবির ট্রাকে আবারও পেঁয়াজ যুক্ত হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি জানিয়েছে, ট্রাক থেকে চিনি ৫০ টাকা (সর্বোচ্চ ৪ কেজি), মসুর ডাল ৫০ টাকা (সর্বোচ্চ ২ কেজি) ও সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটার (সর্বোচ্চ ৫ লিটার) দরে কেনা যাবে। এছাড়া ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, রমজান মাস সামনে রেখে দেশে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন অব্যাহত থাকায় আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক লাখ টন পণ্য। ফলে রমজান কিংবা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের কোন সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারের কাছে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার টন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন বেশি। এছাড়া ১২ মার্চ পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারীভাবে চাল ও গম আমদানি হয়েছে প্রায় ৫১ লাখ ৭৯ হাজার টন। এর মধ্যে গম ৫১ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং চাল ৪ হাজার টন। চালের পুরোটাই বেসরকারীভাবে আমদানি করা হয়েছে। রমজান কিংবা করোনা পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেল ও চিনির সরবরাহেও ঘাটতির কোন আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কেননা চলতি অর্থবছরের আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন পাম অয়েল বেশি আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বাজারে পণ্যের কোন সঙ্কট নেই।
×