ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় ত্রাণের তালিকা করায় যুবককে নির্যাতন

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৩ এপ্রিল ২০২০

 কুমিল্লায় ত্রাণের  তালিকা করায়  যুবককে  নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ১২ এপ্রিল ॥ কুমিল্লায় চেয়ারম্যানের বাড়িতে মাদ্রাসার শিক্ষককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় জড়িত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও এখনও মামলা রেকর্ড করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক মাওলানা আজিজুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার জেলার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম তাকে পিটিয়ে আহত করার পর শনিবার সন্ধ্যায় তিনি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এদিকে ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই এলাকার দুস্থ লোকদের জন্য ত্রাণের তালিকা তৈরিসহ নিজ উদ্যোগে শতাধিক লোকের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করায় স্থানীয় ১০ নং (দক্ষিণ) গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম খানের নির্দেশে ইউনিয়ন অফিসে ডেকে নিয়ে মাশিকাড়া গ্রামের মোঃ আশেকে এলাহী নামের যুবককে (২৪) কয়েক দফায় মারধর করা হয়। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে বিকেল ৪টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই যুবক। রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হলে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এদিকে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনার প্রতিবাদ করায় জড়িতরা মারধর করেছেন মাঈনুদ্দিন রুবেল নামের এক ব্যক্তিকে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া গ্রামের আশেকে এলাহী ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় ১১০ জনকে কিছু ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। এরপর স্থানীয় আরও অনেকে তার নিকট ত্রাণের জন্য আসলে তাদের ত্রাণ দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খানকে অনুরোধ জানিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫৯ জনের একটি তালিকার বিষয়ে চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। পরে ফেসবুকে লেখালেখি করার অভিযোগ এনে গত শনিবার চার চৌকিদার দিয়ে তাকে তুলে নিতে চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে এলাহী আরও জানান, ‘শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চেয়ারম্যান আমার বাসায় চারজন চৌকিদার পাঠানোর পর আমি বাড়ি থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়ার পর প্রথমে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। পরে তাকে আটকে রেখে তিন দফায় মারধর করেন। তিনি জানান, স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং ফেসবুকে চেয়ারম্যানের পক্ষে ভিডিও বার্তা দেয়ার পর বিকেল চারটার দিকে তাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাড়াবাড়ি করলে জামায়াত-শিবির বানিয়ে মামলা জড়ানো হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। এদিকে ইউপি ভবন থেকে মুক্ত হয়ে শনিবার ওই যুবককে চেয়ারম্যানের কক্ষে ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়া, মারধর, পরে কক্ষে আটকে রাখার ভিডিও এবং পরে বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে ভুক্তভোগী আশেকে এলাহী রাতে ফেসবুক লাইভে পুরো ঘটনার আদ্যপান্ত বর্ণনা করার কয়েকটি ভিডিও তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করেন। যা এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খান জানান, সরকারীভাবে সকলকে ত্রাণ দেয়া সম্ভব নয়। যারা ন্যায্য ও বিধি মোতাবেক প্রাপ্য তাদের করোনার ত্রাণ দেয়া হবে। কিন্তু সে (এলাহী) ত্রাণ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে নানা অপপ্রচার চালানোর কারণে শনিবার দুপুরে অফিসে ডেকে এনে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়, তাকে আটকের বিষয়টি মিথ্যা। এদিকে ওই যুবকের মারধরের বিষয়ে রাতে দেবিদ্বার থানার ওসি মোঃ জহিরুল আনোয়ার জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়টি জানতে পেরেছি, কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি।’ রবিবার দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাকিব হাসান জানান, পৃথক ঘটনায় চেয়ারম্যান কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষক ও এক যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মারধরের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সাখাওয়াত হোসেন জানান, দেবিদ্বারে ইউপি ভবনে ডেকে নিয়ে যুবক নির্যাতনের ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দাখিল করেনি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন। তবে অপর ঘটনায় চেয়ারম্যান কর্তৃক মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধর করার ঘটনায় থানায় মামলা রেকর্ডের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
×