ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক ভূমিমন্ত্রী এমপি ডিলুর ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ৩ এপ্রিল ২০২০

 সাবেক ভূমিমন্ত্রী এমপি ডিলুর ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী আলহাজ শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তিনি স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী ও রাজনৈতিক সহকর্মী রেখে গেছেন। শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পাবনা, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বি মিয়া, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তাঁর মৃত্যুতে সাবেক ছাত্রনেতা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী রবিউল আলম বুদু, সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হুদা পাখি সরদার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে গোলাম মোস্তফা চান্না, আব্দুল খালেক, মঞ্জু চৌধুরী ও রিয়াজউদ্দিন গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ১৯৪০ সালের ১০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। বিগত প্রায় সাত মাস ধরে তিনি বার্ধক্য ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। প্রথমে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি লন্ডনে চিকিৎসা নেন। লন্ডন থেকে ফিরে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর ফের অসুস্থ হলে ঢাকা ল্যাবএইডে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে তাঁকে ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা নেয়ার পর ঢাকায় ফিরে আসেন। পরে ফের তাঁকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের চলতি সংসদের জাতীয় সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান এই জননেতা সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অত্যাচার, জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। শরীফ পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ঈশ্বরদীতে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। জননেতা শরীফ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৯ মার্চ ঈশ্বরদীর মাধপুরে পাকবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনীতির পটপরিবর্তন হলে তিনি দীর্ঘদিন বিনা বিচারে জেলখাটেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সময় পাবনায় তিনি অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। ওয়ান ইলেভেনের পরও তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকারের লোভনীয় প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পাবনা জেলায় একনিষ্ঠভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে শক্ত হাতে পরিচালনা করেছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত সংসদে তিনি সফলভাবে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পাঁচবার সংসদ সদস্য থাকাকালে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ার রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য থাকলেও তিনিই একমাত্র ভাষাসৈনিক ছিলেন।
×