ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার প্রভাব

তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১৭ মার্চ ২০২০

তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে

ফিরোজ মান্না ॥ নিত্য পণ্যের মতো করোনার প্রভাব পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ওপরও। দেশের মতোই বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি পণ্যের বাজার তরতর করে বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রযুক্তি পণ্য আসা অনেকাংশে কমে গেছে। দেশে তৈরি মোবাইল-ল্যাপটপের দামেও করোনার প্রভাব পড়েছে ব্যাপক হারে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বলছে, এই পরিস্থিতি শুধু যে দেশেই তা না। সারা বিশ্বেই প্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। স্যামসং ও এ্যাপেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণে দেশে তরুণ সমাজে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে একটু বাধাগ্রস্ত হবে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা চলতে থাকবে। প্রযুক্তি পণ্যের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের তুলনায় গত কয়েক দিনে প্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি। প্রযুক্তি পণ্য বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে পড়েছে। প্রযুক্তি পণ্যের বাজার বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার পরিমাণও কমে গেছে। দেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার অশান্ত হয়ে উঠায়, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা নিয়েও। দেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজার বিশেষ করে প্রযুক্তি পণ্য প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর। চীনে করোনাভাইরাসের আঘাতে সেই বাজার বন্ধ আছে প্রায় এক মাসের বেশি সময়। চীনের বেশির ভাগ কারখানা এখনও খোলেনি। কয়েকটি প্রদেশের কারখানা খোলার কথা থাকলেও সেখান থেকে কবে নাগাদ নতুন পণ্যের সরবরাহ আসবে এটা বলা মুশকিল। দেশ থেকে কোন ব্যবসায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। বিটিআরসিও এখন কোন অনুমতিপত্র দিচ্ছে না। ফলে প্রযুক্তি পণ্যের বাজার নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গোটা ফেব্রুয়ারি মাসে কোন প্রযুক্তি পণ্যের চালান দেশে আসেনি। ১৪ মার্চ পর্যন্তও কোন প্রযুক্তি পণ্য কোন দেশ থেকেও আনার অনুমতি দেয়নি বিটিআরসি। অনেকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার অপেক্ষায় থেকেও তারা কিনতে পারছেন না। বাজারে যে পণ্যের দাম এক শ’ টাকা সেই পণ্য এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। একটা মোবাইল সেট কিনতে গেলে ক্রেতা আগের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। ল্যাপটপের বাজার আরও বেশি চড়া। এদিকে দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য প্রস্ততকারী বেশকিছু কারখানা থাকলেও কাঁচামালের জন্য সেগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল চীন ও কোরিয়ার ওপর। কাজেই নতুন পণ্যের চাহিদা মেটানো ও পুরনো পণ্যের সার্ভিসিং নিয়ে চিন্তিত ক্রেতা-বিক্রেতা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলো। তারা বলছে, এই মুহূর্তে দেশে পণ্যের যে মজুদ আছে তা দিয়ে মার্চ মাসটা কোন রকমে চালানো সম্ভব হবে। মোবাইল ইমপোর্টার এ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, সবকিছুর দামই বাড়তে শুরু করেছে। করোনা ইস্যুতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়েছে মূলত চীনে করোনা আক্রান্তের কয়েক দিন পর থেকেই। যাদের আগে থেকে মজুদ ছিল, তারা ভাল করছে। নতুন পণ্য আসা বন্ধ। ব্যাংক নতুন করে চীন থেকে মালামাল আনতে এলসি খুলতে দিচ্ছে না। আগে করা এলসিগুলোর মধ্যে খুব কম পণ্যই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হয়ে আসছে। মজুদ থাকা পণ্যগুলো শেষ হয়ে গেলে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। আবার সরবরাহ আসা শুরু করলেই যে সব স্বাভাবিক হবে তা না। সরবরাহকারীরা তখন নতুন পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে চাইবে। ফলে গ্রাহকদের ক্ষতি হবে। চীন ছাড়া অন্য কোন দেশ থেকে পণ্য আনার কোন অবস্থা নেই। কোরিয়া এ ধরনের সব কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে তাইওয়ান থেকে পণ্য আনার চেষ্টা করছে- কিন্তু পারেনি। করোনা সমস্যা গোটা অঞ্চলজুড়েই বিরাজ করছে। মালয়েশিয়া বা ফিলিপিন্সে এসব দেশ থেকেও পণ্য আসছে না। এরপরেও অল্প কিছু পণ্য যা আসবে তা দিয়ে চাহিদা মিটবে না। ফলে অনেক বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হবে গ্রাহকদের। পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা কেউ বলতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা আটকে দিয়েছে সব ব্যবসা-বাণিজ্য। করোনার প্রভাব মোবাইল বাজারে সবচেয়ে বেশি পড়েছে। চীনের কারখানাগুলো এ মাসের শেষের দিকে খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মোবাইল ব্যবসায়ীরা প্রতি মাসেই একটি করে শিপমেন্ট করেন।
×