ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচন

ভোটবিমুখতা দূর করতে প্রচারে ইসি, অলিগলিতে প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১৪ মার্চ ২০২০

ভোটবিমুখতা দূর করতে প্রচারে ইসি, অলিগলিতে প্রার্থীরা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে ভোট কম পড়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের একটি উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের বলা হলেও সাধারণ মানুষের এই ভোটবিমুখতা কাটাতে নানা উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নেমেছেন ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার প্রচারে। তারাও বিলি করছেন প্রচারপত্র। এদিকে নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রচার ক্রমেই বাড়ছে। তারা প্রতিদিনই ছুটছেন নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শুক্রবার গণসংযোগ চালান পাঠানটুলী ও মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে। বাইতুশ শরফ মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ও দোয়া চান। এরপর তিনি একটি মিনি ট্রাকে চড়ে গণসংযোগ শুরু করেন। সেখানে স্থাপিত মঞ্চ থেকে বিভিন্ন স্থানে তিনি বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের যে বার্তা দিয়েছেন, তার সারমর্ম হলো চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে সরাতে হবে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যে উন্নয়ন তা আজ দৃৃশ্যমান। কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনা, চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ হয়ে ঘুমঘুম পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতার প্রতিফলন। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সামান্য অংশীদার এবং জনগণের স্বপ্নের সহযাত্রী। আপনাদের স্বপ্নসাধ পূরণে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছি। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের ধারাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তারা জয় বাংলা স্লোগান দেন না। তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত। পাশের রাষ্ট্রে কী হলো না হলো সেটা বড় কথা নয়, আমরা এ জন্মভূমিতে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য সহযোগে বসবাস করতে চাই। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আসুন যেকোন অপশক্তির অপতৎপরতা আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করি। নৌকা প্রতীকের গণসংযোগে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু, উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইসহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, আইন সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হাজি দোস্ত মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, আ’লীগ নেতা মোঃ জাবেদ, জামশেদুল আলম চৌধুরী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান, আসিফ খান, সেলিম রেজা এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা। বিএনপি প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন এদিন নগরীর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সল্টগোলা ক্রসিং, ঈশান মিস্ত্রিরহাট, পুরাতন ডাকঘর, নিশ্চিন্তপাড়া, ওমরশাহ পাড়া, কলসিরদীঘি ও ইপিজেড এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম মহানগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। মেয়র নির্বাচিত হলে এ সঙ্কট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তিনি আরও বলেন, নগরীর ভোটারদের মাঝে প্রায় ৬০ শতাংশ ভাড়ায় বসবাস করে। আমি তাদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব। নগরবাসীর জন্য গণপরিবহন ও পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা উন্নত করব। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নগর পিতা নয়, নগরবাসীর সেবক হিসেবে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের সেবক হয়ে সুখ-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। মেয়র নির্বাচিত হলে আমি আপনাদের সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজমুক্ত চট্টগ্রাম উপহার দেব। গণসংযোগকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, সহসভাপতি এম এ আজিজ, উত্তর জেলা বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহ, বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি ও ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী হানিফ সওদাগর, নগর বিএনপি নেতা মোঃ সেলিম, নরুল আলম, নগর যুবদলের মোঃ ইকবাল হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ আজম উদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী সাহিদা খানম মালা প্রমুখ। প্রচারে ইসি কর্মকর্তারা সর্বশেষ তিনটি নির্বাচন হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ঢাকা দক্ষিণে ২৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের হার ৩০ শতাংশের নিচে হওয়ায় নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ ক্রমেই কমছে বলে প্রতীয়মান। এতে সমালোচনার মুখে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, কেন্দ্রে ভোটার আনা কমিশনের কাজ নয়। ইসির কাজ ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করা। ভোটার আনবেন প্রার্থীরা। কম ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি বেশ সমালোচিত। ইসি এ ভোটবিমুখতার দায় নিতে না চাইলেও চট্টগ্রামে প্রচারে দেখা গেল রিটার্নিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের। চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ হাসানুজ্জামানসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রচারপত্র বিলি করেন বন্দরনগরীর আন্দরকিল্লা, প্রেসক্লাব ও কাজির দেউড়ি এলাকায়। এ সময় তিনি ইভিএমে কিভাবে মেয়র ও কাউন্সিলরদের পৃথক বাটনে ছাপ দিয়ে ভোট দিতে হয় সে নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়া তার প্রচারে ছিল করোনাভাইরাস বিষয়ে সতর্কতা। ভোটের প্রচারে বেশি জটলা ও হাত মেলানো বা কোলাকুলির বিষয়ে তিনি সতর্ক করেন। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে ছিলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুনির হোসাইন খান, মোঃ শফিকুর রহমান, শাহাদাত হোসেন ও মোঃ কামরুল আলম। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ মার্চ। আগের দিন ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি, এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
×