ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্তে ফুল উৎসব

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১২ মার্চ ২০২০

বসন্তে ফুল উৎসব

ফুল সব মানুষের চিত্ত বিনোদনের এক অনিন্দ্যসুন্দর দ্যোতনা। আবার বিশেষ বিশেষ উৎসব আর আয়োজনে পুষ্পের সমারোহে দিনটির তাৎপর্য ও মাহাত্ম্যই সবাইকে জানান দেয়। ফুলের অভাবনীয় ও অকৃত্রিম শুভেচ্ছা সর্বজনের স্তুতি আর নিবেদনের এক অনন্য পর্যায়। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতার মাস মার্চ এলেই ফুলের অনাবিল সৌরভে সারাদেশ স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠে। ফুল মানুষের প্রিয় একটি বস্তুই নয়, ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় নিজেকে সমর্পণ করারও চমৎকার অনুভব। জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ফুলের ডালির সমাহার মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় দিবস, ভালবাসাকে ভরিয়ে তোলা, বসন্ত উৎসবে ফুলে, ফুলে সজ্জিত হওয়া যেমন প্রকৃতির অবারিত সম্পদ, একইভাবে অঙ্গসজ্জায়ও ফুলের বিচিত্র শোভা মানুষকে রাঙিয়ে দেয়। ফুল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়ও বিশেষ নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। ফুল উৎপাদনে নিয়োজিত চাষীরা তাদের জীবিকা উপার্জনের যে নান্দনিক পথটি বেছে নেয় সেখানে নিজেদের কর্মসংস্থান ছাড়াও মানুষের আনন্দ আর বিনোদনের খোরাক যোগাতে অবিস্মরণীয় অবদান রাখে। যা মোট জাতীয় উৎপাদনেরও এক জোরালো সংযোজন। আর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসই ফুলচাষীদের রমরমা ব্যবসা। সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে কম-বেশি। কিন্তু জাতীয় ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান আর আড়ম্বরে ফুলের আবদন বেড়ে যাওয়ার এক মহোৎসব। বসন্ত আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে পুষ্পিত রথ যখন ফেব্রুয়ারি-মার্চের গোড়ায় দাঁড়ায় সে সময় অমর শহীদানদের পবিত্র আত্মাকে শ্রদ্ধা আর অর্ঘ্যে ভরে তুলতে ফুলের ডালি সাজানো হয়। আর এই মাস দুটো পুলের বাজার অর্থনীতির চাকায় এক অনবদ্য সম্ভার। সারা বছর ফুলের বেচা-বিক্রি হলেও ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের বাণিজ্যে যে অপার সম্ভাবনা যুক্ত হয়, তা ফুলচাষীদের জীবনেও এক অন্যরকম প্রাপ্তি। ৮০০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্যের সম্ভাবনাও উঠে এসেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ফুলচাষের অভাবনীয় উদ্যোগে এই খাত থেকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে ফুল শুধু নিবেদনের স্তুতি কিংবা নান্দনিক সৌরভের উপহার মাত্র নয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরও এক অন্যতম সূচক। ভূমিনির্ভর, কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে ফুলের চাষ কৃষি অর্থনীতিরও এক অনন্য সম্ভাবনার যোগসাজশ। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশে ফুলের অপার সমারোহকে উৎসবে-আয়োজনে নিবেদন করতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। এক শুভ বিবাহের অনুষ্ঠানেও ফুলের অলঙ্কার দিয়ে বধূ সাজানোর পরামর্শও আসে জাতির পিতার কাছ থেকে। বিয়ে ও গায়ে হলুদে কনেকে এখনও ফুলের গয়না দিয়েই সাজানো হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে ফুলের আলঙ্করিক আবেদন এখনও হারিয়ে যায়নি। ফুলচাষীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে প্রধানত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের জন্যই। বছরের অর্ধেক আয় এখান থেকেই আসে। ফুলের সৌরভ মাখানো ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার মাসটি শহীদানদের পবিত্র আত্মার প্রতি অর্ঘ্য ও শ্রদ্ধার্ঘ্য দেয়ারও সময়। এমন তাৎপর্যও বাঙালীর শাশ্বত চেতনা ও চিরদিনের সৌন্দর্য বোধের পরিচায়ক।
×