ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আক্রান্ত অর্থনীতি

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১২ মার্চ ২০২০

করোনা আক্রান্ত অর্থনীতি

বিশ্ব মন্দা পরিস্থিতি নিয়ে ইতোপূর্বে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছিলেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা। তার আশঙ্কাই বুঝি শেষ পর্যন্ত সত্যে পরিণত হতে চলেছে। বিশ্ব মন্দার কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে করোনাভাইরাস, যা বর্তমানে চিহ্নিত কোভিড-১৯ অভিধায়। চীনের উহানে উদ্ভূত এই মারাত্মক ভাইরাসটি-এর মধ্যে আক্রমণ করেছে প্রায় সমগ্র বিশ্বকে, যা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি বাংলাদেশও। সর্বশেষ খবর হলো, বিশ্বের কমপক্ষে ১১৭টি দেশ আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে। আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক এবং মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে পাঁচ হাজার। সমূহ বিপদের দিকটি হলো, ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে বয়স্কদের ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। এর বিরুদ্ধে প্রচলিত কোন এ্যান্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক কাজ করে না এবং টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে মানুষকে এক রকম অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে ভাইরাসটির কাছে। অবশ্য বর্তমানে চীনে এর প্রকোপ কমতে শুরু করেছে এবং বিপদে রয়েছে ইতালি-ইরানসহ কয়েকটি দেশ। তবে অর্থনীতির সমূহ ক্ষয়ক্ষতি যা হওয়ার তা ঘটে গেছে এর মধ্যেই। কেননা, চীন একটি অত্যন্ত উচ্চ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ, যার ওপর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। করোনার ভয়ানক প্রভাবে দূষণ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ইতোমধ্যে অনেক শহর-নগর-বন্দর-শিল্পকারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য। তেলের বাজারে লেগেছে ধস। মাত্র ৩০-৩৫ ডলার প্রতি ব্যারেলে বিক্রি হচ্ছে তেল। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য অন্যান্য শিল্পপণ্যেও। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া, সুতাসহ নানা পণ্যের সরাসরি বাণিজ্য থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। এ থেকে মুক্তি মিলবে কোন পথে তা বলতে পারে না কেউ। তবে আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ অন্তত একদিক থেকে এগিয়ে আছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায়। দেশে কোন খাদ্য সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এর প্রভাব জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। কেননা, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাল। প্রণোদনা দেয়ায় প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা কয়লা বিদ্যুত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ দশটি মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা। ফলে গড় জাতীয় প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের ওপরে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত ও চীনে কমেছে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াও নেই স্বস্তিতে। এই অবস্থায় আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাতে অস্থিতিশীলতা এবং চরম আয়সম্পদ বৈষম্যের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গা দৃশ্যমানÑ যেমন সুদান, সোমালিয়া, ইয়েমেন। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থাও আদৌ ভাল নয়। ফলে জনরোষ ও গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এ থেকেই বেরিয়ে আসার পথ ও পদ্ধতি বের করতে হবে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দসহ অর্থনীতিবিদদের। এর পাশাপাশি ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে করোনার প্রতিষেধক ও টিকা আবিষ্কারে।
×