ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার সীমান্তে রেড এলার্ট জারি

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১২ মার্চ ২০২০

মিয়ানমার সীমান্তে রেড এলার্ট জারি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ করোনাভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধে পর্যটন নগরী কক্সবাজার, টেকনাফ স্থলবন্দর-করিডোর ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ স্থলবন্দর ও শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে আসা মিয়ানমার নাগরিকদের আগে থেকেই করোনাভাইরাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মেডিক্যাল টিম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনাভাইরাস জীবাণু বহনকারী কোন রোগী শনাক্ত করতে পারেনি। ২৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্র শীল বলেন, করোনাভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধ নিয়ে আগে থেকেই জরুরী মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। করোনাভাইরাস জীবাণু শনাক্তে স্থলবন্দর ও করিডোর এলাকায় গঠিত বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিমকে সার্বক্ষণিক কার্যকর রাখা হয়েছে। এই টিমে মেডিক্যাল অফিসার, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, ব্রাদার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও দেয়া হয়েছে। কারও শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি ও কাশির মতো সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতাল ও ডাক্তারদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আসছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক। তারা বিচরণ করছে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। এদিকে চীনের সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চল। ওই সীমান্ত পথে চীনের পণ্য সরাসরি নিয়মিত আসছে মিয়ানমারে। মিয়ানমার থেকে ওইসব পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয়ে আসছে। টেকনাফ সীমান্ত হয়ে মিয়ানমারে চীনা পণ্য ও নাগরিকদের মিয়ানমারে আসতে খুব একটা বাধাও নেই। নেই কোন করোনাভাইরাস জীবাণু প্রতিরোধের ব্যবস্থা। আবার মিয়ানমারের পণ্যও চীনে যাচ্ছে অহরহ। আর চীন থেকে আসা এসব পণ্য মিয়ানমার হয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে স্থলবন্দর, করিডোর ও সীমান্ত হয়ে। বিশেষ করে চীনের এসব পণ্য ট্রলারে করে আনছে মিয়ানমারের মাঝি মাল্লা ও সেখানকার নাগরিকরা। এ কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর ও শাহপরীরদ্বীপ করিডোরে মিয়ানমার থেকে আসা পণ্য ও পশু বোঝাই জাহাজ, ট্রলারের মাঝি মাল্লা, মিয়ানমারের নাগরিকদের যাতায়াতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এ বিষয়ে পত্র পাবার পর এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণে আসছে। এছাড়া এখানে চলমান মেগা প্রকল্পে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অসংখ্য বিদেশী নাগরিক কাজ করছে। এ জন্য পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার জেলা করোনাভাইরাসের জন্য অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে মানুষের মনে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এখানে আগত পর্যটকদের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে কক্সবাজার বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। মেডিক্যাল বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও ৫টি ইনফ্রারেড থার্মাল ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়। কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মানুুষের মনে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে পাড়া-মহল্লায় চলছে তুমুল আলোচনা। বলতে গেলে এখন করোনাভাইরাস টপ অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বাণিজ্য করছে। ১০ টাকার মাস্ক বিক্রি করছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। বেড়ে গেছে জীবাণু সুরক্ষা হ্যান্ড ওয়াশের দাম। এই পরিস্থিতি আরও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসন বলেন, জেলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হলে তাদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত, টেকনাফ স্থলবন্দর, কক্সবাজার বিমানবন্দরেও প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ কার্যকর রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও সেখানে কর্মরত আইএনজিও ও এনজিওসমূহের সহায়তায় করোনাভাইরাস বিষয়ে সব ধরনের প্রাক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সিভিল সার্জন অফিসে জরুরী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। করোনাভাইরাস জীবাণু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রামু ও চকরিয়াতে ৫০ শয্যা করে ১শ’ শয্যার হাসপাতাল প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সীমান্ত থাকায় টেকনাফ স্থলবন্দরে ২টি বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম সেখানে নিয়মিত কাজ করছে। করোনাভাইরাস জীবাণু শরীরে প্রবেশের ন্যূনতম ১৪ দিন পর সেটি সংক্রমিত হয়। ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় করোনাভাইরাস জীবাণু মরে যায়। বাংলাদেশের সার্বিক তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় এদেশের মানুষ করোনাভাইরাস জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
×